Bismillahir Rahmanir Rahim :
Recent Post

সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ-১

____________________________________
মহান আল্লাহ মানুষকে এ
পৃথিবীতে খিলাফতের এক সুন্দর দায়িত্ব
দিয়ে পাঠিয়েছেন। আদম আলাইহিস
সালাম ও তার সন্তানাদিকে সর্বপ্রথম এ
দায়িত্ব দেয়া হয়। আদম আলাইহিস
সালামের সন্তান হাবিলের কুরবানী কবুল
হওয়া সম্পর্কে মহান আল্লাহ
ঘোষণা করেন:
﴿ ﺎَﻤَّﻧِﺇ ُﻞَّﺒَﻘَﺘَﻳ ُﻪَّﻠﻟﭐ َﻦﻴِﻘَّﺘُﻤۡﻟﭐ َﻦِﻣ
٢٧ ﴾ ‏[:ﺓﺪﺋﺎﻤﻟﺍ ٢٧ ‏]
নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের নিকট
হতেই (সৎকর্ম) কেবল গ্রহণ করেন।[1]
মূলত: মানুষকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ
হতে বারণ করার এক মহান দায়িত্ব
দিয়ে সৃষ্টির শুরু হতে শুরু করে সর্বশেষ
নবী ও রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতদেরও
প্রেরণ করা হয়েছে। তাই তো পবিত্র
কুরআন সাধারণভাবে সকল উম্মতের অন্যতম
দায়িত্ব ঘোষণা দিয়ে বলেছে:
ۡﻢُﺘﻨُﻛ﴿ َﺮۡﻴَﺧ ۡﺖَﺟِﺮۡﺧُﺃ ٍﺔَّﻣُﺃ ِﺱﺎَّﻨﻠِﻟ
َﻥﻭُﺮُﻣۡﺄَﺗ ِﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ َﻥۡﻮَﻬۡﻨَﺗَﻭ ِﻦَﻋ
ِﺮَﻜﻨُﻤۡﻟﭐ ﴾ ‏[ ﻝﺍ :ﻥﺍﺮﻤﻋ ١١٠ ‏]
‘‘তোমরা সর্বোত্তম জাতি, তোমদের
সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের
জন্য। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের
আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ
হতে নিষেধ করবে। আর আল্লাহর উপর
ঈমান আনয়ন
করবে।” [সূরা আলে ইমরান: ১১০]
অতএব আলোচ্য আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়
যে, এ মহান দায়িত্বটি আঞ্জাম দেয়ার
মাঝে মানুষের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
যুগে যুগে এ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-
রাসূলের আগমন ঘটেছে। আল্লাহ
তা‘আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেই
ক্ষান্ত হন নি; বরং তাদের হেদায়াতের
জন্য প্রেরণ করেছেন কালের পরিক্রমায়
বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য নবী ও রাসূলকে।
যাঁরা স্ব-স্ব জাতিকে সৎ ও কল্যাণকর
কাজের প্রতি উৎসাহ যুগিয়েছেন এবং অসৎ
ও অকল্যাণকর কাজ হতে নিষেধ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:
ۡﺪَﻘَﻟَﻭ﴿ ﺎَﻨۡﺜَﻌَﺑ ﻲِﻓ ِّﻞُﻛ ٖﺔَّﻣُﺃ ﺎًﻟﻮُﺳَّﺭ
ِﻥَﺃ ْﺍﻭُﺪُﺒۡﻋﭐ َﻪَّﻠﻟﭐ ْﺍﻮُﺒِﻨَﺘۡﺟﭐَﻭ
﴾َۖﺕﻮُﻐَّٰﻄﻟﭐ ‏[ ٣٦:ﻞﺤﻨﻟﺍ ‏]
‘‘নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট
রাসুল প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে,
তারা আল্লাহর ইবাদত
করবে এবং তাগুতকে পরিত্যাগ
করবে” [2] ।
এখানে তাগুত
বলতে আল্লাহবিরোধী শক্তি, শয়তান,
কুপ্রবৃত্তি এক কথায় এমন সব
কার্যাবলীকে বুঝানো হয়েছে যা সুপ্রবৃত্তি
দ্বারা সম্পন্ন হয় না এবং আল্লাহর
আনুগত্যের পথে বাধা হয়।
আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও একই
উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়েছে।
তাঁকে হেদায়াতের মশাল
হিসেবে যে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন প্রদান
করা হয়েছে তার এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য
হলো, মানুষকে অন্ধকার থেকে আল্লাহর
দিকে আহ্বান করা,
গোমরাহী থেকে হেদায়াতের দিকে,
কুফরীর অন্ধকার হতে ঈমানের আলোর
দিকে আহ্বান জানানো। আল্লাহ
তা‘আলা এ প্রসঙ্গে বলেন,
﴿ ۚﺮٓﻟﺍ ٌﺐَٰﺘِﻛ َﻚۡﻴَﻟِﺇ ُﻪَٰﻨۡﻟَﺰﻧَﺃ َﺝِﺮۡﺨُﺘِﻟ
َﺱﺎَّﻨﻟﭐ ِﺖَٰﻤُﻠُّﻈﻟﭐ َﻦِﻣ ﻰَﻟِﺇ ِﺭﻮُّﻨﻟﭐ
ِﻥۡﺫِﺈِﺑ ۡﻢِﻬِّﺑَﺭ ٰﻰَﻟِﺇ ﺰﻳﺰﻌﻟﺍ ﻁﺍﺮﺻ
ﺪﻴِﻤَﺤﻟﺍ ١ ﴾ ‏[ :ﻢﻴﻫﺍﺮﺑﺍ ١ ‏]
‘‘আলিফ-লাম-রা, এ হচ্ছে কিতাব,
আমরা তোমার প্রতি তা নাযিল
করেছি, যাতে তুমি মানুষকে তাদের
রবের অনুমতিক্রমে অন্ধকার
থেকে বের করে আলোর
দিকে ধাবিত করতে পার, এমন
পথে যা প্রবলপরাক্রমশালী,
প্রশংসিতের।’’[3]
এ প্রথিবীতে মানুষের যাবতীয়
কর্মকে যদি শ্রেণীবিন্যাস করা হয়
তাহলে তা হবে ক) সৎকাজ (খ) অসৎকাজ।
আর আখেরাতে এ দু’শ্রেণীর কাজের
জবাবদিহি ও প্রতিদানস্বরূপ জান্নাত ও
জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। মহান আল্লাহ
বলেন:
﴿ ﻦَﻤَﻓ َﻝﺎَﻘۡﺜِﻣ ۡﻞَﻤۡﻌَﻳ ٍﺓَّﺭَﺫ ﺍٗﺮۡﻴَﺧ
ۥُﻩَﺮَﻳ ٧ ۡﻞَﻤۡﻌَﻳ ﻦَﻣَﻭ َﻝﺎَﻘۡﺜِﻣ ٖﺓَّﺭَﺫ ﺍّٗﺮَﺷ
ۥُﻩَﺮَﻳ ﴾٨ ‏[:ﺔﻟﺰﻟﺰﻟﺍ ،٧ ٨ ‏]
‘‘যে অনু পরিমাণ ভাল করবে সে তার
প্রতিদান পাবে আর যে অনু পরিমাণ
খারাপ কাজ করবে সেও তার
প্রতিদান পাবে।’’[4]
অতএব প্রতিদান দিবসে সৎকাজের গুরুত্ব
অত্যাধিক। ফলে প্রত্যেকের উচিত সৎকাজ
বেশী বেশী করা এবং অসৎ কাজ
হতে বিরত থাকা।
কুরআনের অন্যত্র মহান আল্লাহ মানুষের এসব
কাজ সংরক্ষণ করা সম্পর্কে বলেছেন:
﴿ َﻦﻴِﺒِﺘَٰﻛ ﺎٗﻣﺍَﺮِﻛ ١١ َﻥﻮُﻤَﻠۡﻌَﻳ ﺎَﻣ
َﻥﻮُﻠَﻌۡﻔَﺗ ١٢ َﺭﺍَﺮۡﺑَﺄۡﻟﭐ َّﻥِﺇ ﻲِﻔَﻟ
ٖﻢﻴِﻌَﻧ ١٣ َﺭﺎَّﺠُﻔۡﻟﭐ َّﻥِﺇَﻭ ﻲِﻔَﻟ ٖﻢﻴِﺤَﺟ
ﺎَﻬَﻧۡﻮَﻠۡﺼَﻳ ١٤ َﻡۡﻮَﻳ ِﻦﻳِّﺪﻟﭐ ١٥ ﺎَﻣَﻭ
ۡﻢُﻫ َﻦﻴِﺒِﺋٓﺎَﻐِﺑ ﺎَﻬۡﻨَﻋ ١٦ ٓﺎَﻣَﻭ َﻚٰﻯَﺭۡﺩَﺃ
ﺎَﻣ ُﻡۡﻮَﻳ ِﻦﻳِّﺪﻟﭐ ١٧ َّﻢُﺛ ٓﺎَﻣ َﻚٰﻯَﺭۡﺩَﺃ
ﺎَﻣ ُﻡۡﻮَﻳ ِﻦﻳِّﺪﻟﭐ ١٨ َﻡۡﻮَﻳ ﺎَﻟ ُﻚِﻠۡﻤَﺗ
ٞﺲۡﻔَﻧ ٖﺲۡﻔَﻨِّﻟ ُﺮۡﻣَﺄۡﻟﭐَﻭ ۖﺎٗٔۡﻴَﺷ ٖﺬِﺌَﻣۡﻮَﻳ
ِﻪَّﻠِّﻟ ١٩ ﴾ ‏[:ﺭﺎﻄﻔﻧﻻﺍ -١١ ١٩ ‏]
‘‘সম্মানিত লেখকবৃন্দ,
তারা জানে তোমরা যা কর, নিশ্চয়
সৎকর্মপরায়ণরা থাকবে খুব
স্বাচ্ছন্দে, আর
অন্যায়কারীরা থাকবে প্রজ্বলিত
আগুনে, তারা সেখানে প্রবেশ
করবে প্রতিদান দিবসে, আর
তারা সেখান থেকে অনুপস্থিত
থাকতে পারবে না, আর
কিসে তোমাকে জানাবে প্রতিদান
দিবস কী? তারপর
বলছি কিসে তোমাকে জানাবে
প্রতিদান দিবস কী? সেদিন
কোনো মানুষ অন্য মানুষের জন্য
কোনো ক্ষমতা রাখবে না, আর
সেদিন সকল বিষয় হবে আল্লাহর
কর্তৃত্বে।’’[5]
পৃথিবীতে মানুষ ধোঁকা প্রবণ, দুনিয়ার
চাকচিক্য ও মোহে পড়ে অনন্ত অসীম দয়ালু
আল্লাহর কথা স্মরণ
থেকে ভুলে যেতে পারে।
সেজন্যে প্রত্যেক সৎ কর্মপরায়ণের উচিৎ
পরস্পর পরস্পরকে সদুপদেশ দেয়া,
সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করা এবং অসৎ
কাজে নিষেধ করা। মহান আল্লাহ ধমক
দিয়ে বলেন-
﴿ َٰٓﻱ ُﻦَٰﺴﻧِﺈۡﻟﭐ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ﺎَﻣ َﻚِّﺑَﺮِﺑ َﻙَّﺮَﻏ
ِﻢﻳِﺮَﻜۡﻟﭐ ٦ ﴾ ‏[:ﺭﺎﻄﻔﻧﻻﺍ ٦ ]
‘‘হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার
মহান রব
সম্পর্কে ধোঁকা দিয়েছে?”[6]
শুধু ধমক দিয়েই ক্ষ্যান্ত হন নি;
বরং পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের
ভয়াবহ শান্তি হতে বাঁচিয়ে রাখারও
নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূরা আত-
তাহরীমে এসেছে-
﴿ ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ ْﺍﻮُﻨَﻣﺍَﺀ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ْﺍٓﻮُﻗ
ۡﻢُﻜﻴِﻠۡﻫَﺃَﻭ ۡﻢُﻜَﺴُﻔﻧَﺃ ﺎَﻫُﺩﻮُﻗَﻭ ﺍٗﺭﺎَﻧ
ُﺱﺎَّﻨﻟﭐ ﺎَﻬۡﻴَﻠَﻋ ُﺓَﺭﺎَﺠِﺤۡﻟﭐَﻭ ٌﺔَﻜِﺌَٰٓﻠَﻣ
ٞﻅﺎَﻠِﻏ ٞﺩﺍَﺪِﺷ ﺎَّﻟ َﻥﻮُﺼۡﻌَﻳ َﻪَّﻠﻟﭐ ٓﺎَﻣ
َﻥﻮُﻠَﻌۡﻔَﻳَﻭ ۡﻢُﻫَﺮَﻣَﺃ ﺎَﻣ َﻥﻭُﺮَﻣۡﺆُﻳ ٦
﴾ ‏[ :ﻢﻳﺮﺤﺘﻟﺍ ٦ ‏]
‘‘হে ঈমানদারগণ!
তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের
পরিবার পরিজনকে আগুন
হতে বাঁচাও, যার
জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর;
যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর
ফেরেশ্তাকূল, যারা আল্লাহ
তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন
সে ব্যাপারে অবাধ্য হয় না। আর
তারা তাই
করে যা তাদেরকে আদেশ
করা হয়।’’[7]
অতএব বলা যায় যে, বিভিন্নভাবে এ
পৃথিবীতে মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত।
আর তা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়
হলো পারস্পারিক সৎ ও কল্যাণকর
কাজে সহযোগিতা ও অসৎ এবং গুনাহের
কাজ বর্জন করা। এ মর্মে মহান আল্লাহ
বলেন:
﴿ ْﺍﻮُﻧَﻭﺎَﻌَﺗَﻭ ﻰَﻠَﻋ ٰۖﻯَﻮۡﻘَّﺘﻟﭐَﻭ ِّﺮِﺒۡﻟﭐ
ْﺍﻮُﻧَﻭﺎَﻌَﺗ ﺎَﻟَﻭ ﻰَﻠَﻋ ِﻢۡﺛِﺈۡﻟﭐ
ِۚﻥَٰﻭۡﺪُﻌۡﻟﭐَﻭ ﴾ ‏[ :ﺓﺪﺋﺎﻤﻟﺍ ٢ ]
‘‘তোমরা পূণ্য ও তাকওয়ার
কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর
এবং গুনাহ ও সীমালঙ্ঘণের
কাজে একে অপরকে সহযোগিতা
করো না।”[8]
সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম
পরস্পরের সাথে সাক্ষাত হলে এ
মহতি কাজটির কথা স্মরণ করে দিতেন।
সেজন্য তাদের কেউ কেউ অধিকাংশ সময়
মজলিশ হতে বিদায় বেলায় ও প্রথম
সাক্ষাতে সূরা আছর তেলাওয়াত করতেন
বলে কোনো কোনে বর্ণনায় এসেছে [9] ।
আল্লাহ বলেন-
﴿ ِﺮۡﺼَﻌۡﻟﭐَﻭ ١ َﻦَٰﺴﻧِﺈۡﻟﭐ َّﻥِﺇ ﻲِﻔَﻟ ٍﺮۡﺴُﺧ
٢ ﺎَّﻟِﺇ ْﺍﻮُﻨَﻣﺍَﺀ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ْﺍﻮُﻠِﻤَﻋَﻭ
ِﺖَٰﺤِﻠَّٰﺼﻟﭐ ِّﻖَﺤۡﻟﭑِﺑ ْﺍۡﻮَﺻﺍَﻮَﺗَﻭ
ْﺍۡﻮَﺻﺍَﻮَﺗَﻭ ِﺮۡﺒَّﺼﻟﭑِﺑ ٣ ﴾ ‏[ :ﺮﺼﻌﻟﺍ ،١
٣]
‘‘সময়ের কসম, নিশ্চয় আজ মানুষ
ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত।
তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান
এনেছে, সৎকাজ করেছে,
পরস্পরকে সত্যের উপদেশ
দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের
উপদেশ দিয়েছে।”[10]
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ
হতে নিষেধ রাসূলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ গুণের
পথিকৃত ছিলেন। তিনি নবুওয়তের
পূর্বে অন্যায় অবিচার রুখতে হিলফুল
ফুযুলে অংশ নিয়েছেন। ছোট
বেলা থেকে মৌলিক মানবীয় সৎ
গুণাবলী তাঁর চরিত্রে ফুটে উঠায় আল-
আমিন, আল সাদিক উপাধিতে তিনি ভুষিত
ছিলেন। তাঁর গুণাবলীর
বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন-
ﻢُﻫُﺮُﻣۡﺄَﻳ﴿ ۡﻢُﻬٰﻯَﻬۡﻨَﻳَﻭ ِﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ ِﻦَﻋ
ِﺮَﻜﻨُﻤۡﻟﭐ ُّﻞِﺤُﻳَﻭ ِﺖَٰﺒِّﻴَّﻄﻟﭐ ُﻢُﻬَﻟ ُﻡِّﺮَﺤُﻳَﻭ
ُﻢِﻬۡﻴَﻠَﻋ َﺚِﺌَٰٓﺒَﺨۡﻟﭐ ۡﻢُﻬۡﻨَﻋ ُﻊَﻀَﻳَﻭ ۡﻢُﻫَﺮۡﺻِﺇ
َﻞَٰﻠۡﻏَﺄۡﻟﭐَﻭ ۡﺖَﻧﺎَﻛ ﻲِﺘَّﻟﭐ ۚۡﻢِﻬۡﻴَﻠَﻋ
﴾ ‏[:ﻑﺍﺮﻋﻻﺍ ١٥٧ ‏]
‘‘তিনি সৎকাজের আদেশ করেন
এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করেন।
মানবজাতির জন্য সকল উত্তম ও
পবিত্র জিনিসগুলো বৈধ করেন
এবং খারাপ বিষয়গুলো হারাম
করেন।’’[11]
আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে তাঁর
রিসালাতের পূর্ণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সে সত্ত্বা, যাঁর কর্মকাণ্ড
সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ বলেন,
তাকে পাঠানো হয়েছে যাতে তিনি
সৎকাজের আদেশ দেন, সকল অসৎ কর্ম
হতে বারণ করেন, সব উত্তম বিষয় হালাল
করেন এবং অপবিত্রগুলো হারাম করেন।
এজন্যে রাসূল নিজেও বলেছেন-
« ﺏ ﺖﺜﻋ ﻡﺭﺎﻜﻣ ﻢﻤﺗﻷ ﻕﻼﺧﻷﺍ »
‘‘আমি সকল পবিত্র
চরিত্রাবলী পরিপূর্ণতা সাধনের
জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’’[12]
শুধু তাই নয় মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠা করে তিনি ‘হিসবা’ নামক
একটি বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ
কাজটি আঞ্জাম দিতেন।
পরবর্তীতে খোলাফায়ে রাশেীনের যুগেও
এ বিভাগটি প্রতিষ্ঠিত ছিল।
ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব
হলো সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ ও
অন্যায় কাজ হতে মানুষকে বারণ করা।
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ
করা মুমিনের গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত
সৎ কাজের আদেশ দান ও
অসৎকাজে বাধা দান মুমিনের অন্যতম
দায়িত্ব। মুমিন নিজে কেবল সৎকাজ
করবে না, বরং সকলকে সে কাজের
প্রতি উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস চালাতে হবে।
কেননা, তারা পরস্পরের বন্ধু। অতএব একবন্ধু
অপর বন্ধুর জন্য কল্যাণ ব্যতীত অন্য কিছু
কামনা করতে পারে না। এদিকে ইঙ্গিত
করে মহান আল্লাহ বলেন-
َﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐَﻭ﴿ ُﺖَٰﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐَﻭ ۡﻢُﻬُﻀۡﻌَﺑ
ُﺀٓﺎَﻴِﻟۡﻭَﺃ ٖۚﺾۡﻌَﺑ َﻥﻭُﺮُﻣۡﺄَﻳ ِﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ
َﻥۡﻮَﻬۡﻨَﻳَﻭ ِﻦَﻋ َﻥﻮُﻤﻴِﻘُﻳَﻭ ِﺮَﻜﻨُﻤۡﻟﭐ
َﺓٰﻮَﻠَّﺼﻟﭐ َﺓٰﻮَﻛَّﺰﻟﭐ َﻥﻮُﺗۡﺆُﻳَﻭ
َﻥﻮُﻌﻴِﻄُﻳَﻭ ۚٓۥُﻪَﻟﻮُﺳَﺭَﻭ َﻪَّﻠﻟﭐ َﻚِﺌَٰٓﻟْﻭُﺃ
ُﻢُﻬُﻤَﺣۡﺮَﻴَﺳ ُۗﻪَّﻠﻟﭐ ٧١ ﴾ ‏[ :ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ٧١ ‏]
‘‘মুমিন নারী ও পুরুষ তারা পরস্পরের
বন্ধু। তারা একে অপরকে যাবতীয়
ভাল কাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় ও
পাপ কাজ হতে বিরত রাখে, সালাত
কায়েম করে, যাকাত পরিশোধ
করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের
আনুগত্য করে। তারা এমন লোক
যাদের প্রতি অচিরেই আল্লাহর রহমত
বর্ষিত হবে।’’[13]
কুরআনের অসংখ্য আয়াতে মুমিনের অন্যতম
চরিত্র-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত
করা হয়েছে। সকল স্থানে অন্যান্য
গুণাবলীর পাশাপাশি অন্যতম গুণ
হিসেবে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের
নিষেধের অবতারণা করা হয়েছে।
কুরআনে এসেছে:
﴿ َﻥﻭُﺪِﻤَٰﺤۡﻟﭐ َﻥﻭُﺪِﺒَٰﻌۡﻟﭐ َﻥﻮُﺒِﺌَّٰٓﺘﻟﭐ
َﻥﻭُﺪِﺠَّٰﺴﻟﭐ َﻥﻮُﻌِﻛَّٰﺮﻟﭐ َﻥﻮُﺤِﺌَّٰٓﺴﻟﭐ
َﻥﻭُﺮِﻣٓﺄۡﻟﭐ ِﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ َﻥﻮُﻫﺎَّﻨﻟﭐَﻭ
ِﺮَﻜﻨُﻤۡﻟﭐ ِﻦَﻋ َﻥﻮُﻈِﻔَٰﺤۡﻟﭐَﻭ ِﺩﻭُﺪُﺤِﻟ
ِۗﻪَّﻠﻟﭐ ِﺮِّﺸَﺑَﻭ َﻦﻴِﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐ
﴾١١٢ ‏[:ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ١١٢ ‏]
‘‘তারা আল্লাহর
দিকে প্রত্যাবর্তনকারী, আল্লাহর
গোলামীর জীবন-যাপনকারী। তাঁর
প্রশংসা উচ্চারণকারী, তাঁর জন্য
যমীনে পরিভ্রমণকারী, তাঁর
সম্মুখে রুকু ও সিজদায় অবনত। সৎ
কাজের আদেশ দানকারী, অন্যায়ের
বাধা দানকারী এবং আল্লাহর
নির্ধারিত সীমা রক্ষাকারী।
হে নবী, তুমি এসব মুমিনদের সুসংবাদ
দাও।”[14]
>[1] সূরা আল-মায়িদাহ:২৭।
[2] সূরা আন-নাহল:৩৬।
[3] সূরা ইবরাহীম:১।
[4] সূরা যিলযাল:৭-৮।
[5] সূরা ইনফিতার:১১-১৯।
[6] সূরা ইনফিতার:৬।
[7] সূরা আত তাহরীম:৬।
[8] সূরা আল মায়িদাহ:২।
[9] তবে বর্ণনাটি দুর্বল।
[10] সূরা আল আছর”১-৩।
[11] সূরা আল আরাফ: ১৫৭।
[12] ইমাম মালিক, মুয়াত্তা ৫/২৫১।
[13] সূরা আত তাওবা: ৭১।
[14] সূরা আত তাওবা:১১২।

আশুরার রোজা রাখার ফজিলত।

আশুরার রোজা রাখার ফজিলত।
-
প্রশ্ন: আমি শুনেছি আশুরার রোজা নাকি বিগত বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়- এটা কি সঠিক? সব গুনাহ কি মোচন করে; কবিরা গুনাহও? এ দিনের এত বড় মর্যাদার কারণ কি?
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এক: আশুরার রোজা বিগত বছরের গুনাহ মোচন করে। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: “আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদান প্রত্যাশা করছি আরাফার রোজা বিগত বছর ও আগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে। আরও প্রত্যাশা করছি আশুরার রোজা বিগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে।”[সহিহ মুসলিম (১১৬২)]
এটি আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ একদিনের রোজার মাধ্যমে বিগত বছরের সব গুনাহ মার্জনা হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মহান অনুগ্রহকারী।
আশুরার রোজার মহান মর্যাদার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি এ রোজার ব্যাপারে খুব আগ্রহী থাকতেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “ফজিলতপূর্ণ দিন হিসেবে আশুরার রোজা ও এ মাসের রোজা অর্থাৎ রমজানের রোজার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যত বেশি আগ্রহী দেখেছি অন্য রোজার ব্যাপারে তদ্রূপ দেখিনি।”[সহিহ বুখারি (১৮৬৭)]
হাদিসে يتحرى শব্দের অর্থ- সওয়াব প্রাপ্তি ও আগ্রহের কারণে তিনি এ রোজার প্রতীক্ষায় থাকতেন।
দুই: আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আশুরার রোজা রাখা ও এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামকে উদ্বুদ্ধ করার কারণ হচ্ছে বুখারির বর্ণিত হাদিস (১৮৬৫) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন দেখলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তখন তিনি বললেন: কেন তোমরা রোজা রাখ? তারা বলল: এটি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ বনি ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করেছেন; তাই মুসা আলাইহিস সালাম এ দিনে রোজা রাখতেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমাদের চেয়ে আমি মুসার অধিক নিকটবর্তী। ফলে তিনি এ দিন রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।”
হাদিসের উদ্ধৃতি: “এটি উত্তম দিন” মুসলিমের রেওয়ায়েতে এসেছে- “এটি মহান দিন। এদিনে আল্লাহ মুসাকে ও তাঁর কওমকে মুক্ত করেছেন এবং ফেরাউন ও তার কওমকে ডুবিয়ে মেরেছেন।”
হাদিসের উদ্ধৃতি: “তাই মুসা আলাইহিস সালাম এদিনে রোজা রাখতেন” সহিহ মুসলিমে আরেকটু বেশি আছে যে “…আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ; তাই আমরা এ দিনে রোজা রাখি”।
বুখারির অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- “এ দিনের মহান মর্যাদার কারণে আমরা রোজা রাখি”।
হাদিসের উদ্ধৃতি: “অন্যদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন” বুখারির অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- “তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা তাদের চেয়ে মুসার অধিক নিকটবর্তী। সুতরাং তোমরা রোজা রাখ”।
তিন: আশুরার রোজা দ্বারা শুধু সগিরা গুনাহ মার্জনা হবে। কবিরা গুনাহ বিশেষ তওবা ছাড়া মোচন হয় না। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: আশুরার রোজা সকল সগিরা গুনাহ মোচন করে। হাদিসের বাণীর মর্ম রূপ হচ্ছে- কবিরা গুনাহ ছাড়া সকল গুনাহ মোচন করে দেয়। এরপর তিনি আরও বলেন: আরাফার রোজা দুই বছরের গুনাহ মোচন করে। আর আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মোচন করে। মুক্তাদির আমীন বলা যদি ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যায় তাহলে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়… উল্লেখিত আমলগুলোর মাধ্যমে পাপ মোচন হয়।
যদি বান্দার সগিরা গুনাহ থাকে তাহলে সগিরা গুনাহ মোচন করে। যদি সগিরা বা কবিরা কোন গুনাহ না থাকে তাহলে তার আমলনামায় নেকি লেখা হয় এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। … যদি কবিরা গুনাহ থাকে, সগিরা গুনাহ না থাকে তাহলে কবিরা গুনাহকে কিছুটা হালকা করার আশা করতে পারি।[আল-মাজমু শারহুল মুহাযযাব, খণ্ড-৬]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: পবিত্রতা অর্জন, নামায আদায়, রমজানের রোজা রাখা, আরাফার দিন রোজা রাখা, আশুরার দিন রোজা রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে শুধু সগিরা গুনাহ মোচন হয়।
[আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, খণ্ড-৫]
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

গনক ?

গনক ?
১। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এক স্ত্রী থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
من أتى عرافا فسأله عن شيئ فصدقه لم تقبل له صلاة أربعين يوما
‘‘যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে আসল, তারপর তাকে [ভাগ্য সম্পর্কে] কিছু জিজ্ঞাসা করলো, অতঃপর গণকের কথাকে সত্য বলে বিশ্বাস করল, তাহলে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না। (মুসলিম)
২। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
من أتى كاهنا فصدقه بما يقول كفر بما أنزل على محمد. (رواه ابو داود)
‘‘যে ব্যাক্তি গণকের কাছে আসলো, অতঃপর গণক যা বললো তা সত্য বলে বিশ্বাস করলো, সে মূলতঃ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তা অস্বীকার করলো। (সহীহ বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক হাদীসটি সহীহ। আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ী ইবনে মাজা ও হাকিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)।

আবু ইয়ালা ইবনে মাসউদ থেকে অনুরূপ মাউকুফ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৩। ইমরান বিন হুসাইন থেকে মারফু’ হাদীসে বর্ণিত আছে,
ليس منا من تطير أو تطير له، أوتكهن أو تكهن له أو سحر أو سحرله ومن أتى كاهنا فصدقه بما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد صلى الله عليه وسلم. (رواه البزار بإسناد جيد)
‘‘যে ব্যক্তি পাখি উড়িয়ে ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করলো, অথবা যার ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করার জন্য পাখি উড়ানো হল, অথবা যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করলো, অথবা যার ভাগ্য গণনা করা হলো, অথবা যে ব্যক্তি যাদু করলো অথবা যার জন্য যাদু করা হলো অথবা যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে আসলো অতঃপর সে [গণক] যা বললো তা বিশ্বাস করলো সে ব্যক্তি মূলতঃ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তা [কুরআন] অস্বীকার করল। (বায্যার)
[ইমাম তাবারানীও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে ومن أتى থেকে হাদিসের শেষ পর্যন্ত ইমাম তাবারানী কর্তৃক বর্ণিত ইবনে আববাসের হাদীসে উল্লেখ নেই।
ইমাম বাগাবী (রহ:) বলেন عراف [গণক] ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যে ব্যক্তি চুরি যাওয়া জিনিস এবং কোন জিনিস হারিয়ে যাওয়ার স্থান ইত্যাদি বিষয় অবগত আছে বলে দাবী করে। এক বর্ণনায় আছে যে, এ ধরনের লোককেই গণক বলা হয়। মূলতঃ গণক বলা হয় এমন ব্যক্তিকে যে ভবিষ্যতের গায়েবী বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দেয় [অর্থাৎ যে ভবিষ্যদ্বানী করে]। আবার কারো মতে যে ব্যক্তি ভবিষ্যতের গোপন খবর বলে দেয়ার দাবী করে তাকেই গণক বলা হয়।
কারো মতে যে ব্যক্তি দিলের (গোপন) খবর দেয়ার দাবী করে, সেই গণক।
আবুল আববাস ইবনে তাইমিয়া (রহ:) বলেছেন كاهن [গণক], منجم [জ্যোতির্বিদ], এবং رمال [বালির উপর রেখা টেনে ভাগ্য গণনাকারী] এবং এ জাতীয় পদ্ধতিতে যারাই গায়েব সম্পর্কে কিছু জানার দাবী করে তাদেরকেই আররাফ [عراف] বলে। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেছেন, এক কওমের কিছু লোক আরবী أباجاد লিখে নক্ষত্রের দিকে দৃষ্টি দেয় এবং তা দ্বারা ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করে। পরকালে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে কোন ভাল ফল আছে বলে আমি মনে করি না।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১। গণনাকারীকে সত্য বলে বিশ্বাস করা এবং কুরআনের প্রতি ঈমান রাখা, এ দুটি বিষয় একই ব্যক্তির অন্তরে এক সাথে অবস্থান করতে পারে না।
২। ভাগ্য গণনা করা কুফরী হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা।
৩। যার জন্য গণনা করা হয়, তার উল্লেখ।
৪। পাখি উড়িয়ে ভাগ্য পরীক্ষাকারীর উল্লেখ।
৫। যার জন্য যাদু করা হয়, তার উল্লেখ।
৬। ভাগ্য গণনা করার ব্যাপারে যে ব্যক্তি ‘‘আবাজাদ’’ শিক্ষা করেছে তার উল্লেখ্য।
৭। ‘কাহেন, [كاهن] এবং ‘আররাফ’ [عراف] এ মধ্যে পার্থক্য।
গ্রন্থঃ কিতাবুত তাওহীদ | রচনা/অনুবাদ/সংকলনঃ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব

সর্বশেষ আমলের উপর মানুষের কর্ম ফল নির্ভরশীল ৷

সর্বশেষ আমলের উপর মানুষের কর্ম ফল নির্ভরশীল ৷
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
একজন মানুষ দুনিয়াতে আসার পর আল্লাহ তালা তাকে যত দিন হায়াত দিয়ে থাকেন ততদিন সে বেঁচে থাকে ৷ দুনিয়াতে মানুষ ভালো-মন্দ অনেক কাজ করে থাকে ৷ কিন্তু পরকালে তার হিসাব হবে ঐ আমলের উপর ভিত্তি করে, যার উপর তার মৃত্যু হবে ৷
এজন্য প্রত্যেক মুসলিমের উচিত হবে জীবনের শেষ আমল যেন ভালো হয় সেদিকে খেয়াল রাখা ৷ তাছাড়া মানুষের কোন দিনটি শেষ দিন হবে তা কারো জানা নেই ৷ হতে পারে আজকের দিনটি তার শেষ দিন অথবা কালকের দিনটি তার শেষ দিন 
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
হে মুমিনগন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ৷ প্রত্যেক মানুষেরই ভেবে দেখা উচিত যে, সে আগামীকালের জন্য কি পাঠিয়েছে ৷ আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো,নিশ্চয় তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত ৷ [ সূরা হাশর,আয়াত-১৮]
এ আয়াতের ইঙ্গিতের আলোকে এটাই বুঝা যায় যে, মানুষের প্রত্যেকটি দিনকে জীবনের শেষ দিন বিবেচনা করে তার আমলকে সুন্দর করা উচিত ৷ এভাবে চলতে থাকলে যখনই তার মৃত্যু হবে তখন ভালো অবস্থার উপর তার মৃত্যু হবে ৷ আর কারো মৃত্যু যখন ভালো অবস্থার উপর হবে তখন তার পরবর্তী ধাপগুলো ভালো অবস্থার উপর হবে ৷

যেমন হাদীসে এসেছে,
জাবির রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন,আমি নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, প্রত্যেক বান্ধা ঐ অবস্থার উপর পুনরুত্থিত হবে, যে অবস্থার উপর সে মারা যাবে ৷ [ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪১৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৪৫৮৩,মিশকাত, হাদীস নং ৫৩৪৫]
এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, মানুষের আমলের ফলাফল নির্ভর করে তার শেষ আমলের উপর ৷ বাস্তবে এমনটি হবে যে, অনেক সময় দেখা যাবে কোন মানুষ পাপের কাজ করবে, কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে তার তওবা নসীব হবে এরপর সে নেক আমল করে জান্নাতবাসী হবে ৷ আবার এর বিপরিতে অনেকের অবস্থা এমন হবে যে, দেখা যাবে সে সাওয়াবের কাজ করছে কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে সে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে সে গুনাহর কাজ করতে শুরু করবে ৷ যার ফলে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে ৷
যেমন হাদীসে এসেছে,
সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি এমন আমল করে যা দেখে মানুষ মনে করে যে, সে জান্নাতবাসী হবে, অথচ সে জাহান্নামী ৷ আবার কোন কোন মানুষের আমল দেখে মানুষ মনে করে যে, সে জাহান্নামী হবে, অথচ সে জান্নাতী ৷ কেননা সর্বশেষ আমলের উপরই ফলাফল নির্ভরশীল ৷
[ সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৯৩, শারহুস সুন্নাহ, হাদীস নং ৭৯]
সুতরাং প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উচিত জীবনের প্রতিটি দিন কে গুরুত্ব দেয়া এবং প্রতিটি দিন কে জীবনের শেষ দিন মনে করে আল্লাহর নাফরমানী থেকে দুরে থাকা এবং নিজেকে কল্যাণজনক কাজে নিয়োজিত রাখা ৷ এর জন্য আল্লাহর নিকট সবসময় দু‘আ করতে হবে, যাতে আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর পূর্বে বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফীক দান করেন ৷
হাদীসে এসেছে,
আমর ইবনে হাকীম আল খুযাঈ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন আল্লাহ তাআলা কোন বান্দর কল্যাণ চান তখন মৃত্যুর পূর্বে তাকে আসাল করে নেন ৷ জিঞ্জেস করা হলো আসাল কি ? তিনি বললেন, মৃত্যুর পূর্বে তার সামনে নেক আমলের দ্বার খুলে দেওয়া হয় ৷ যার ফলে আল্লাহ তাআলা তার উপরে সন্তুষ্ট হয়ে যান ৷ [ সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৩৪২, মুসনাদে আহম্মদ, হাদীস নং ১৮৭১৯, সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ১১১৪]

পূণ্যবতী রমণীর গুণাবলী ||

পূণ্যবতী রমণীর গুণাবলী ||
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“পূণ্যবতী রমণীগণ আনুগত্য করে এবং আল্লাহর সংরক্ষিত প্রচ্ছন্ন বিষয়ের সংরক্ষন করে।” (সূরানিসা- ৩৪)
হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) অত্র আয়াতের তাফসীরে
বলেন, ﺻﺎﻟﺤﺎﺕ বলতে সৎ ও পূণ্যশীল নারীদেরকে
বুঝানো হয়েছে। ইবনু আব্বাস প্রমুখ বলেন,
ﻗﺎﻧﺘﺎﺕ অর্থ হচ্ছে, স্বামীর আনুগত্যকারীনী।
ﺣﺎﻓﻈﺎﺕ ﻟﻠﻐﻴﺐ অর্থ সম্পর্কে সুদ্দী প্রমুখ
বলেন, স্বামীর অনুপস্থিতে স্ত্রী নিজের ইজ্জতের সংরক্ষণ করবে এবং স্বামীর সম্পদ হেফাযত
করবে।

আবদুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“মুসলিম রমণী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রামাযানের ছিয়াম পালন করে, নিজের
লজ্জাস্থানের হেফাযত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তবে তাকে বলা হবে, জান্নাতের যে কোন
দরজা দিয়ে ইচ্ছে তুমি ভিতরে প্রবেশ কর।”
আনাস বিন মলেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
“কোন ধরণের রমণী জান্নাতী আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ হে
আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তোমাদের জান্নাতী রমণীগণ হচ্ছে, স্বামীর প্রতি প্রেম
নিবেদনকারীনী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারীনী।
তার আনুগত্যের প্রকাশ হচ্ছে, সে ivMw¤^Zv
হলে বা তার সাথে খারাপ আচরণ করা হলে বা স্বামী
তার প্রতি ivMw¤^Z হলে, স্বামীর কাছে গিয়ে
বলে, এই আমার হাত আপনার হাতে সপে দিলাম,
আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি চোখের পলক ফেলব না। অর্থাৎ আমি কোন আরাম নিব না
কোন আনন্দ বিনোদন করব না যতক্ষণ আপনি আমার প্রতি খুশি না হন।”
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে
প্রশ্ন করা হল হে আল্লাহর রাসূল! কোন শ্রেণীর নারী সর্বোত্তম? তিনি বলেন, “তার পরিচয় হচ্ছে
তুমি তার দিকে চাইলে সে তোমাকে আনন্দিত করবে,
কোন নির্দেশ দিলে তা বাস্তবায়ন করবে। তার নিজের ব্যাপারে এবং স্বামীর সম্পদের ব্যাপারে
স্বামী পসন্দ করেন না এমন কাজ করে তারবিরোধীতা করবে না।”
অন্য বর্ণনায় এসেছে, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওমর (রাঃ)কে
লক্ষ্য করে বললেন,
“আমি কি তোমাকে মানুষের আকর্ষণীয় শ্রেষ্ঠ গুপ্তধন সম্পর্কে বলে দিব না? তা হচ্ছে, নেক
রমণী। স্বামী তার দিকে তাকালে সে তাকে আনন্দিত
করে দেয়, কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং বাড়িতে না থাকলে তার ইজ্জত-আবরু রক্ষা
করে।”
ওহে মুসলিম বোন নিজের প্রতি লক্ষ্য করুন, উক্ত গুণাবলী কি আপনার চরিত্রে সমাবেশ ঘটাতে
পেরেছেন। আপনি কোথায়? আপনার কি উচিত নয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির পথ অনুসন্ধান করা?
দু’নিয়া-আখেরাতে সুখের জীবন গঠন করার জন্য স্বামী-সন্তানের খেদমত করা ও আনন্দময় সংসার
গড়তে সচেষ্ট হওয়া।

মিলাদ কেন বিদায়াত????

মিলাদ কেন বিদায়াত????
মিলাদুন্নবি বিদাআত বিদাআত । পর্ব একমীলাদঃপাক ভারত ও বাংলার মুসলিম সমাজে প্রচলিত ও সবচেয়ে আকর্ষনীয়এবং ব্যাপকভাবে পালনীয় অনুষ্ঠানটি হচ্ছে মীলাদ মাহফিল ও মীলাদুন্নবী দিবস। কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের সূচনায় মীলাদ যেন অপরিহার্য এবং মহা ধুমধামে ঈদে মীলাদুন্নবী উৎসব পালন করা যেন বিরাট সাওয়াবের কাজ। অথচ এই মীলাদ এর কথা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ও রাসুলূল্লা (সাঃ) এর হাদীস কোনটিতেই নেই।অথবা মীলাদ কোন সাহাবী, তাবিঈ, তাবি তাবিঈ, কোন ইমাম করেছেন বা করতে বলেছেন তার কোন দলীল প্রমান ও নাই।এটা কোন নির্ভরযোগ্য আলিমের দ্বারাও চালু হয়নি। এমনকি যারা এর ধারক বাহক হয়েসমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত নবী প্রেমের নামে এই মীলদ বা ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করে আসছেন তারাও স্বীকার করে থাকেন যে,এটার কোন দলীল নাই। মীলাদ চালু হয়েছে রাজা বাদশাহ বা স্বল্প শিক্ষিত সুফীদের দ্বারা।তাই সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত নবী প্রেমের নামে এই মীলাদ বা ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করা ইসলামরে কোন অংশ নয়।বরং এটা ধর্মের নামে নবআবিষ্কৃত বিদআ’ত।তাই এখানে মীলাদুন্নবী ও মীলাদের সূচনা, তার ইতিহাস, মীলাদ ও কিয়ামেরনামে যে সব শিরকী ও বিদআ’তী কাজ হচ্ছেএবং এ সম্পর্কে হানাফী আলিমদের সহ বিখ্যাত জ্ঞাণী-গুণীদের মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

যেন সমাজে প্রচলিত এসব বিদআ’ত থেকে জাতি মুক্ত হতে পারে।মীলাদ ও ঈদে মীলাদুন্নবীর অর্থঃআরবী ‘মীলাদ’ শব্দের অর্থ জন্মের সময়-দেখুনঃ- আল-কামূস ১ম খন্ড, ২১৫ পৃঃ, নওলকিশোর ছাপা,মিসবা-হুল লুগা-ত ৯৫৪ পৃঃ, ৫ম খন্ড সংস্করণ, দিল্লী ছাপা ।এবং ঈদে মীলাদুন্নবীর অর্থ হচ্ছে নাবীর জন্মদিনের আনন্দোৎসব।বর্তমানে ১২ই রবিউল আউয়ালকে ঈদে মীলাদুন্নবী অর্থাৎ নাবী (সাঃ) এর জন্মের আনন্দ উৎসব দিবস বলে জোর প্রচার করা হচ্ছে।যদিও রাসূল (সাঃ) এর জন্ম দিবস নিয়ে বিভিন্ন রকম মত আছে তার মধ্যে ১২ই রবিউল আউয়ালের মত হচ্ছে অন্যান্য মতের তুলনায় দুর্বল।এ সম্পর্কে সামনে আলোচনা করা হয়েছে।মীলাদ ও মীলাদুন্নবীর ইতিহাসঃনাবী (সাঃ) এর সময়, খুলাফায়ে রাশেদীনদের সময় বা উমাইয়া খলিফাদের যুগে এগুলো ছিল না।এর বীজ বপন করে আব্বাসীয় খলিফাদের যুগে জনৈক মহিলা।মাদীনাহ শরীফে প্রিয় নাবী (সাঃ) এর রওযা মোবারক যিয়ারত করার ও সেখানে দু’আ করারযে ব্যবস্থা রয়েছে ঠিক সেভাবে আল্লাহর নাবী (সাঃ) মক্কায় যে ঘরে ভূমিষ্ট হয়েছিলেন সেই ঘরটির যিয়ারত ওসেখানে দু’আ করার প্রথা সর্বপ্রথম চালু করেন বাদশাহ হারুনুর রশিদের মাখায়যুরান বিবি (মৃত্যু ১৭৩ হিজরী ৭৮৯ ঈসায়ী)পরবর্তীকালে ১২ই রবিউল আউয়ালকে আল্লাহর নাবী (সাঃ) এর জন্ম ও মৃত্যু দিবস ধরে নিয়ে তীর্থ যাত্রীগন ঐ ঘরে এসে দু’আ করা ছাড়াও বারকাতের আশায় ভূমিষ্ট হওয়ার স্থানটি স্পর্শ ও চুম্বন করতো। (ইবনু জুবায়ের ১১৪, ৬৩ পৃঃ ও আল-বাতালুনী ৩৪ পৃঃ)এখানে ব্যক্তিগত যিয়ারত ছাড়াও একটি উৎসব অনুষ্ঠিত হতো।তা ইবনু জুবাইরের (মৃত্যু ৬১৪ হিঃ) গ্রন্থের ১১৪ ও ১১৫ পৃষ্ঠায় প্রথম জানা যায়।অতঃপর হিজরীয় চতুর্থ শতকে উবাইদ নামে এক ইয়াহুদী ইসলাম গ্রহণ করে।তার নাম রাখা হয় উবাইদুল্লাহ।তিনি নিজেকে ফা-তিমাহ (রাঃ) এর সম্ভ্রান্ত বংশধর বলে দাবী করেন এবংমাহদী উপাধি ধারণ করেন।এঁরই প্রপৌত্র (পৌত্রের ছেলে) মুয়িব লিদীনিল্লাহ ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের জন্মবার্ষিকীর অনুকরণেছয় রকম জন্মবার্ষিকী ইসলামে আমদানী করেন এবং মিশরের ফাতিমী শিয়া শাসকরা মুসলিমদের মধ্যে জন্মবার্ষিকী পালনের রীতি চালু করেন।এই ফাতিমী শিয়া খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা আবূ মুহাম্মাদ ইবাইদুল্লাহ ইবনু মায়মূন প্রথমে ইয়হূদী ছিলেন- (আল বিদা-য়াহ আননিহাইয়া একাদশ ১৭২ পৃঃ)কারো মতে তিনি ছিলেন অগ্নিপূজারী- (মাকরিজীর আল খুতাত আল আ-সার ১ম খন্ড৪৮ পৃঃ)ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, মিশরের ফিরআউন জন্মোৎসব পালন করতেন- (ফাতা-ওয়া নাযীরিয়্যাহ ১ম খন্ড, ১৯৯ পৃঃ)ফিরআউন ছিল ইয়াহুদী। তারপর ঐ ইয়হুদী রীতি খৃষ্টানদের মধ্যেও সংক্রমিত হয়। ফলে তারা তাদের নাবী ঈসা (আঃ)- এর পন্মবার্ষিকী ‘ক্রিসমাসডে’ পালন করতে থাকে।মুসলিমদের মাঝে এই জন্মবার্ষিকী রীতি চালু হওযার একশ তিন বছর পরঅর্থাৎ ৪৬৫ হিজরীতে আফজাল ইবনু আমীরুল জাইশ মিশরের ক্ষমতা দখল করে রাসূল (সাঃ), আলী (রাঃ), ফাতিমাহ (রাঃ),হাসান (রাঃ), হোসেন (রাঃ)- এর নাম সহ প্রচলিত ছয়টি জন্মবার্ষিকী পালনের রীতি বাতিল করে দেন।(মিশরের মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ রচিত আহসানউল কালা-ম ফী মাইয়্যাতা আল্লাকু বিস সুন্নাতি অল বিদআ’তী মিনাল আহকাম, ৪৪-৪৫ পৃঃ বরাতে তাম্মিহু উলিল আবসা-রা ইলা কামা লিদ্দিন আমা ফিল বিদআ’য়ী মিনাল আখতা-র ২৩০পৃঃ)এর পর ত্রিশ বছর বন্ধ থাকার পর ফাতিমী শিয়া খলিফা আমির বি-আহকা-মিল্লা-হ পুনরায় এই প্রথা চালু করেন।তখন থেকেই জন্মবার্ষিকী পালনের রীতি চালূ হয়ে এখনও চলছে। (ঐ ২৩০-২৩১ পৃঃ)ঐতিহাসিক অন্যান্য বর্ণনা থেকে জানা জায়, জন্মবার্ষিকী পালনের এই রীতি ঐ মীলাদ প্রথা খালিফা মুস্তালিবিল্লাহর প্রধান মন্ত্রী বদল আল জামালী বাতিল করে দেয়। এবং তার মৃত্যুর পর পুনরায় চালূ হলে পরবর্তীতে কুরআন-হাদীসের অনুসারী সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ূবী এই সব জন্মবার্ষিকী ও মীলাদ প্রথা বাতিল করে দেন।কিন্তু সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ূবীর ভগ্নিপতি আরবিলের শাসনকর্তা মুজাফফরউদ্দিন ছাড়া কেউ এর বিরোধিতা করেন নাই।ঐতিহাসিকরা বলেন যে, বাদশাহ মোজাফফারউদ্দিনের মীলাদ মাহফিল গুলোতে নামধারী সুফীরা উপস্থিত হন এবং এই মাহফিল ফজর থেকে যোহর পর্যন্ত চলত। বাদশাহ এই মীলাদের জন্য তিনলক্ষ স্বর্ণমুদ্রারও অধিক বেশী খরচ করতেন।(মাকরিজীর আল খুতাত ১ম খন্ড ৪৯০ পৃঃ, মিরআতুয জামা-ন ফী তা-রিখীল আ’ইয়্যান ৮ম খন্ড ৩১০ পৃঃ, পূর্বোক্ত তানবিহু উলিল আবসা-র ৩২ পৃঃ)সুন্নীদের মাঝেও মীলাদুন্নবী ঢুকে প্রড়। তাই শাইখ ওমার ইবনু মুহাম্মাদ মোল্লা নামে এক প্রসিদ্ধ সৎব্যক্তি মুসিলে মীলাদুন্নবী করে ফেলেন এরই অনুসরণ করেন ইরবিলের শাসনকর্তা মুজাফফরউদ্দিন- (কিতাবুল বা-য়িস আলা ইনকা-রিল-বিদায়ী আল হাওয়া-দিস ৯৬ পৃঃ) মোল্লা ওমার ইবনু মুহাম্মাদ মুসিলের বাসিন্দা ছিলেন।আর ইরবিল মুসিলেরই নিকটবর্তী এলাকা ছিল। তাই আনুমানিক ৬০৪ হিজরীতে সুন্নীদের মধ্যে মীলাদুন্নবীর সূত্রপাত হয়।অতঃপর ইরবিলের শাসনকর্তা মুজাফফর উদ্দিন তা ধূমধামের সাথে মানতে থাকে।এমন সময় স্পেনের এক ইসলামী বিদ্বানআবুল খাত্তা-ব ওমার ইবনুল হাসান ইবনু দিহইয়াহ মরক্কো ও আফ্রিকা, শিসর ও সিরিয়া, ইরাক ও খোরাসান প্রভৃতি দেশ ঘুরতে ঘুরতে ৬০৪ হিজরীতে ইরবিলে প্রবেশ করেন এবং বাদশাহ মুজাফফার উদ্দিনকে মীলাদুন্নবী পালনের ভক্ত হিসাবে দেখতে পান। তাই তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মীলাদ সম্পর্কে একটি বই লেখেন- ‘কিতাবুত তানভীল ফি মাওলিদিসসিরাজিল মুনীর’ নামে। অতঃপর তিনি এটাকে ৬২৬ হিজরীতে ছ’টি মাসলিসে বাদশাহ মুজাফফর উদ্দিীনের নিকট পড়ে শোনান। বাদশাহ তাতে সন্তুষ্ট হতে তাঁকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দান করেন- (আফাইয়া-তুল আ’য়া-ন ৩য় খন্ড, ১২২ পৃঃ) ফলে মুসীম জাহানের বিভিন্ন দেশে জন্মবার্ষিকী পালনের রীতি ছড়িয়ে পড়ে। তাই মরক্কোবাসীরা এই মীলাদের নাম দিয়েছেন ‘মাওসম’ আলজেরিয়াবাসিীরা এর নাম দিয়েছে ‘যারদাহ’ মিশর ও মধ্যপ্রাচ্য বাসীরা এর নাম দেয় ‘মাওলিদ’। (আলইনসা-ফ ফীমা কীলা ফিল মাওলিদ মিনাল গুলুয়ে আলইজহা-ফ ২৭ পৃঃ)আর ভারতীয় উপমহাদেশে মীলাদুন্নবী আমদানীকারীরা ছিল শিয়া।যেমন ইসলামের মধ্যে প্রথম মীলাদ আমদানীকারক ছিল শিয়া খলীফা মুয়ীয লিদীনিল্লাহ।ভারতের মোঘল সম্রাটদের কিছু মন্ত্রী ও পরামর্শদাতা ছিল শিয়া।যেমন মোঘল সম্রাট হুমায়ূন ও সম্রাট আকবরের মা শিয়া ছিল। আকবরেরঅভিভাবক বৈরাম খাঁ কট্টর শিয়া ছিরেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাষ্ট্রদূত শিয়া ছিলেন। বাদশাহ বাহদুর শাহ শিয়া ছিলেন। তাঁরাই এই উপমহাদেশে সুন্নীদের মধ্যে মীলাদুন্নবীর চলন করে দেন। ফলে ফিয়া- মীলাদুন্নবীর আনুষঙ্গিক ব্যাপারগুলো সুন্নীদের মধ্যে প্রচলিত হয়ে পড়ে। যেমন- আলোকসজ্জা ও মিছিল প্রভৃতি। (শায়খ আইনুল বারী আলিয়াবীর কর্তৃক রচিত ‘মীলাদুন্নবী ও বিভিন্ন বার্ষিকী’ পুস্তকের ৩৩ পৃঃ)অন্য র্বনা থেকে জানা যায় যে, মীলদ পাঠের নিয়ম ৫৯০ হিজরী সনে বরকুক সুলতান ফরাহ ইবনু নসরের যুগে প্রচলিত হয়। তিনি খুব আরামপ্রিয় সুলতান ছিলেন। শরীআ’তের কড়াকড়ি নির্দেশ তিনি মেনে চলতেন না। সামান্য কাজে কিভাবে বেশী সাওয়াব পাওয়া যায় তিনি এরূপ কাজের অনুসন্ধান করতেন। অবশেষে শাফিঈ মাযহাবের এক বিদআ’তী পীর প্রচলিত মীলাদ পাঠের পদ্ধতি আবিস্কার করে সুলতানকে উপহার দেন। সুলতান বড় সাওয়াবের কাজ মনে করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ধর্ম পালনের নামে মীলাদ পাঠের ব্যবস্থা চালূ করেন। সেখান থেকেই প্রচলিত মীলাদের উদ্ভব ঘটে।এই মীলাদের পূর্ণ বিবরণ পরবর্তীকালে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনু খাল্লিকান (৬৮১ হিজরী) তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তারপর জালালুদ্দীন আস-সয়ূতী (মৃত্যু ৯১১ হিজরী) তাঁর হুসনুল মুহাযরা ফী ‘আমালিল মাওয়ালীদ গ্রন্থে ইবনু খাল্লিকানের লেখার উপর নির্ভর করে মীলাদের বিবরণ পেশ করেছেন। সুলতান মুজাফফরউদ্দীন যে মীলাদ চালু করেছিলেন তাতে যথেষ্ট খৃস্টীয় প্রভাব বিদ্যমান ছিল। কারণ সে সময় ক্রুসেড যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ সৈন্য সিরিয়া, জেরুজালেম প্রভৃতি এলাকায় আগমণ করেছিল। তারা যীশুখৃষ্টের জন্মদিন পালন করতো।এসব দেখে শুনে সুলতান মুজাফফরউদ্দীনের মনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম দিবস তথা মীলাদের অনুষ্ঠান করার প্রেরণা পেগে উঠে।সুফীদের সাথে যোযোগ রেখে তিনি ৪টি খানকাহ নির্মাণ করেন।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ইনতে কালের প্রায় ৪০০ বছর পর খৃস্টানদের মধ্যস্থতায় প্লাটিনাসের নূরের মতবাদ ইসলামের হিকামাতুল ইরাব বা ফালাসাফাতুল ইসলাহ নামে ইসলামী লেবাসে প্রথমে সুফিদের মধ্যে ও পরে মীলাদের মাধ্যমে ইসলামে প্রবেশ লাভ করে।এছাড়াও মীলদের ইতিহাস সম্পর্কে প্রখ্যাত হানাফী আলিম ও বহু গ্রন্থের প্রণেতা মরহুম মাওলানা আঃ রহীম তার সুন্নত ও বিদআ’ত বইয়ের ২২৬পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ মীলাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হলোঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর ২০০ বছর পর এমন এক বাদশাহ প্রচলন করেন যাকে ইতিহাসে ফাসিক ব্যক্তি কলে উল্লেখ করা হয়েছে। জামে আজহারের শিক্ষক ডঃ আহমদ শারবাকী লিখেছেনঃ ৪০০ হিজরীতে ফাতিমী শাসকরা মিশরে এরপ্রচলন করেন। একথাও বলা হয় যে শাইখ ইবনু মুহাম্মদ নামক এক ব্যক্তি ইরাকের মুসিল শহরে এর প্রচলন করেছেন।পরে আল মুজাফফর আবূ সাঈদ বাদশা ইরাকের ইরবিল শহরে মীলাদ চালু করেন।ইবনু দাহইয়া এ বিষয়ে একখানা কিতাবলিখে তাকে দেন। বাদশাহ তাকে এক হাজার দীনার পুরস্কার দেন-( ইয়াসআলুনাকা আনিদ-দীনি ওয়াল হায়া-হ ১ম খন্ড ৪৭১ পৃঃ)এই মীলাদুন্নবী ও মীলাদ-এর ইতিহাস থেকে জানা যাচ্ছে যে এগুলো কুরআন ও হাদীস সমর্থিত নয় বরং ইয়াহুদী, খৃষ্টা ও অগ্নিপূজকদের রীতি অনুকরণ ও অনুসরণ। আর অন্য জাতীর সাদৃশ্য গ্রহণ সম্পর্কে বিশ্বনাবী (সাঃ) বলেন,যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তার দলভূক্ত হয়ে থাকে।(আবূ দাউদ ২ং খন্ড ২৩০ পৃঃ, মুসনাদে আহমাদ ২য় খন্ড ৫০ ও ৯২ পৃঃ, মিশকাত ৩৭৫ পৃঃ)অন্যান্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, সে আমাদের দলের নয় যে ব্যক্তি আমাদের ছাড়া অণ্যের সাদৃশ্য গ্রহণ করে।তোমরা ইয়াহুদীদের সাদৃশ্য গ্রহণ কর না এবং খৃষ্টানদেরও না।(তিরমিযী ২য় খন্ড ৫৪ পৃঃ, মিশকাত ৩৯৯ পৃঃ) অতএব মহানবী (সাঃ) এর প্রতি যদি সত্যই কারো ভালোবাসা থেকে থাকে তাহলে তাঁর উক্ত হাদীস দুটি জানার পর ইহুদী-খৃষ্টান ও অগ্নিপূজারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে কোন মু’মিন মুসলিম মীলাদুন্নবী, জন্মবাষিকী ও আলোকসজ্জা প্রভৃতি অনৈসলামিক কাজ করতে পারে না। এবং এই ধরনের বিদআ’তি কাজ কারার জন্য যারা উৎসাহ ও প্ররচনা দিয়ে থাকে তারা কেউই সহীহ হাদীস পেশ করতে পারেন না। কেহ বা বলে থাকেন কোরআনে অনেক ঈদকরার কথা বলা আছে যা ঈদে মীলাদুন্নবীর ইঙ্গিত।এগুলো হচ্ছে সরল মুসলিমদের ধোকা দিয়ে তাদের ঘোর অন্ধকারে রাখা এবং জনমত সৃষ্টি করা এক কথায় দল ভারী করা এবং ভারী দল দেখিয়ে বলা যে “আমরা এতোগুলো মানুষ কি ভুল করছি?” সর্বদা মনে রাখতে হবে যে সত্য যদি একজনও বলে সেটা সব সময়ের জন্যই সত্য।ঐতিহাসিকভাবে রাসুলূল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম তারিখ কোনটি?ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলোর ভিত্তিতে অধিকাংশের মতে মহানবী (সাঃ) এর জন্ম মাস রবিউল আউয়াল মাস।আল্লামা ইবনুল জওযী বলেন, অধিকাংশ বিদ্বানের ঐক্যমতে রাসূল (সাঃ) এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসে-(সীরাতুল মুস্তফা ১ খন্ড, ৫১ পৃঃ ২নং টীকা)তবে জন্ম তারিখের ব্যাপারে মতভেদ আছে যেমন এ ব্যাপারে আটটি উক্তি আছে।যথা-(১) ২, ৮,১০, ১২ ও ১৩ ই রবিউল আউয়াল।(সিফাতুস সফঅহ ১ম খন্ড, ১৪ পৃঃ, আলঅফাবি-আহওয়া-লিল মুস্তফার উর্দু তর্জমা সীরাতে সাইয়িদুল আম্বিয়া ১১৭ পৃঃ)(২) মুসান্নাফ ইবনু শাইবায় জাবির ও ইবনু আব্বাস থেকে বর্ণিত ১৮ই রবিউল আউয়াল।(আল বিদা-য়াহ আননিহা-য়াহ ২য় খন্ড২৪২ পৃঃ)(৩) ১ লা রবিউল আউয়াল। (আলইস্তীআ-ব ১৩ পৃঃ)(৪) ইবনু হিশাম বলেন, আল্লামা তাবারী ও ইবনু খালদূনও বলেন ১২ই রবিউল আউয়াল।(তাহযীবু সীরাতে ইবনু হিশাম ৩৬ পৃঃ) (তারিখুল উমাম অলমুলক ১ম খন্ড, ৫৭১ পৃঃ,)(৫) আল্লামা ইবনু আব্দিল বার ২রা রবিউল আউয়াল বলা সত্বেও বলেন যে, ঐতিহাসিকগণ ৮ই রবিউল আউয়ালের সোমবারকেই সঠিক বলেছেন। (আলইস্তীআ-ব ১৪ পৃঃ)(৬) ইবনু সা’দ বলেন, আবূ জা’ফর মুহাম্মাদ ইবনু আলীর মতে ১০ই রবিউল আউয়াল এবং আবূ মা’শার নাজীহ মাদানীর মতে ২রা রবিউল আউয়াল সোমবার। (তাবাকাতে ইবনু সা’দ ১ম খন্ড৮০, ৮১ পৃঃ)(৭) কনষ্টান্টিনোপলের বিখ্যাত জোতির্বিদ মাহমূদ পাশা তাঁর যুগ থেকে মুহাম্মাদ (সাঃ) পর্যন্ত ক্যালেন্ডার ঘেটে প্রমাণ করেছেন “সোমবার” দিনটি ১২ই রবিউল আউয়ালে কোন মতেই পড়ে না। বরং তা ৯ই রবিউল আউয়ালেই সঠিক হয়।এজন্য সঠিক বর্ণনা ও জ্যোতির্বিদদের গণনা হতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম দিনের নির্ভর যোগ্য তারিখ ৯ই রবিউল আউয়াল।(কাসাসুল কুরআন ৪র্থ খন্ড, ২৫৩-২৫৪ পৃঃ)(৮) হাদীস ও ইতিহাসের বহু মহাবিদ্বান- যেমন আল্লামা হুমাইদী, ইমাম ইবনু হাযম, ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ, ইবনুল কাইয়িম, ইবনু কাসীর, ইবনু হাজার আসকালানী ও বাদরুদ্দীন আইনি প্রমুখের মতে ৯ই রবিউল আউয়াল সোমবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম দিন। (কাসাসুল কুরআন ৪র্থ খন্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা) সমস্ত বর্ণনাপ্রমান করে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম ক্ষন, জন্ম তারিখ, জন্মসন এসবেইমতভেদ আছে। কেবল একটা ব্যপারে সবাই একমত যে, তাঁর জন্মদিনটি ছিল সোমবার। (মুসলিম ১ম খন্ড, ৩৬৮পৃঃ)এবং প্রায় সবাই একমত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যু হয়েছিল রবিউল আউয়াল মাসে। এ সম্পর্কে যদি তর্কের খাতিরেমেনে নেয়া হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম ও মৃত্যু হয়েছিল ১২ই রবিউল আউয়ালে তাহলে ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের অনুকরণে ১২ই রবিউল আউয়ালে ঈদে মীলাদুন্নবী তথা নাবী (সাঃ) এর জন্মবার্ষিকী খুশী মানানো হয় অথচ ঐ দিনেই নাবীজীর ইন্তেকালেরশোক পালন করা হয় না কেন? এ কথায় সবাই একমত যে, একই আনন্দ ও দুঃখ একত্রিত হলে দুঃখের মধ্যে আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। তাই ১২ই রবিউল আউয়াল মীলাদুন্নবীর উৎসব পালন না করে নাবীর মৃত্যু শোক পালনক করাই যুক্তিযুক্ত হতো।আল্লাহ্‌ তাঃ আমাদেরকে প্রতিটি বিদাআত কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাউফিকদান করুন । আমিনl

তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা দুখুলুল মসজিদ সালাতটি এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সালাত অথচ অধিকাংশ মুসলিম-ই এই সালাত থেকে একেবারে গাফেল।

তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা দুখুলুল মসজিদ সালাতটি এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সালাত অথচ অধিকাংশ মুসলিম-ই এই সালাত থেকে একেবারে গাফেল।
_______________________
তাহিয়্যাহ অর্থ হচ্ছে = উপঢৌকন বা তোহফা।
দুখুলু বা দাখিল অর্থ হচ্ছে = প্রবেশ করা।
_______________________
অর্থাৎ মসজিদে প্রবেশ করলেই মসজিদের আদব স্বরূপ ২ রাকআত সালাত আদায় করতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদ আল্লাহ্‌র ঘর। তাই আল্লাহ্‌র ঘরে প্রবেশ করেই সরাসরি বসা যাবে না। এটি বেআদবি। আল্লাহ্‌র ঘরে প্রবেশ করেই উপঢৌকন স্বরূপ আল্লাহ্‌র নিকট ২ রাকআত সালাত পেশ করতে হবে।
দলীল গুলো মিলিয়ে নিতে পারেন :
--------------------------------------
আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণীত, আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন বসার আগে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নেয়। (তিরমিযি, ১ম খন্ড, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সালাতের সময়সূচি অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১২৩, হাদিস নং ৩১৬)
_______________________
আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণীত, আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন বসার আগে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নেয়। দু’রাকআত সালাত আদায় করার পর বসবে নতুবা প্রয়োজন সেরে বের হয়ে যাবে। (আবু দাউদ, ১ম খন্ড, সালাত অধ্যায়, হাদিস নং ৪৬৭)
_______________________
এই হাদিসটি প্রমান করে- কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে বসার পূর্বেই আল্লাহ্‌র ঘরের সম্মানার্থে দু’রাকআত সালাত আদায় করবে।
_______________________
আব্দুল্লাহ ইবনু আবু সালামাহ (রঃ) সুত্রে বর্ণীত, আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণীত, আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন বসার আগে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নেয়। (সহিহ মুসলিম, ২য় খন্ড, মুসাফিরের সালাত ও ক্বসর অধ্যায়, হাদিস নং ১৫৩৯)
_______________________
আবু বকর ইবনু আবু শাইবাহ (রঃ) সুত্রে বর্ণীত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহাবী আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদিন আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম রাসুলুল্লাহ (সাঃ) লোকজনের মাঝে বসে আছেন। সুতরাং আমিও গিয়ে সেখানে বসে পড়লাম, এটা দেখে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন- সর্বপ্রথম দু’রাকআত সালাত আদায় করতে তোমার কি অসুবিধা ছিল? আমি বললাম- হে আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ)! আমি দেখলাম আপনি বসে আছেন (আলোচনা করছেন)। লোকজনও বসে আছে।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নির্দেশ দিলেন- তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দু’রাকআত সালাত আদায় না করে বসবে না।
(সহিহ মুসলিম, ২য় খন্ড, মুসাফিরের সালাত ও ক্বসর অধ্যায়, হাদিস নং ১৫৪০)
_______________________
এই হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, মসজিদে গিয়ে আগে ২ রাকআত সালাত আদায় করতে হবে পরে বসতে হবে। কিন্তু অনেককে দেখা যায় মসজিদে প্রবেশ করে আগে একটু বসে তারপর ২ রাকআত সালাত আদায় করে। এটি ঠিক নয়। এই হাদিসে নবী (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন মসজিদে প্রবেশ করেই সর্বপ্রথম দু’রাকআত সালাত আদায় করতে।
_______________________
আবু কাতাদাহ সালামী (রাঃ) হতে বর্ণীত, আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন বসার পূর্বে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নেয়। (সহিহ বুখারী, ১ম খন্ড, কিতাবুস স্বালাত, হাদিস নং ৪৪৪)
_______________________
এই হাদিসটি চিন্তা করে দেখুন, তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাতটি কত গুরুত্বপূর্ণ !!
_______________________
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, কোন এক জুম্মার দিনে নাবী (সাঃ) লোকদের সামনে খুৎবাহ দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি এসে (খুৎবাহ শোনার জন্য বসলেন)। তিনি জিজ্ঞাস করলেন হে অমুক! তুমি কি স্বালাত আদায় করেছো? সে বলল- না! আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) বললেন- উঠ! দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও। (সহিহ বুখারী, ২য় খন্ড, কিতাবুল জু’মুয়াহ, হাদিস নং ৯৩০)
_______________________
আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) খুৎবাহ থামিয়ে ঐ ব্যক্তিকে নির্দেশ প্রদান করলেন যে আগে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নিতে। কিন্তু আমাদের দেশের লোকেরা খোঁড়া যুক্তি দেখায় যে, খুৎবাহ শোনা ওয়াজিব তাই খুৎবাহ চলাকালীন সময় সালাত আদায় করা যাবে না। অনেক মসজিদে দেখা যায় খুৎবাহ চলাকালীন সময়ে লালবাতি জ্বালিয়ে রাখে।
_______________________
মসজিদে লালবাতি জ্বালানোর অধিকার কারো নেই।
মানুষকে সালাত থেকে বাঁধা দেয়ার জন্য লালবাতি জ্বালায় যারা তাদের কবরে লালবাতি জ্বলবে ইনশাআল্লাহ!!!
_______________________
মসজিদের তাহিয়্যাহ/উপঢৌকন স্বরূপ তাহিয়্যাতুল মসজিদ ২ রাকআত সালাত সর্বাবস্থায় পড়তে হবে। অর্থাৎ এই সালাতের মূল কথা মসজিদে ঢুকেই সরাসরি বসা যাবে না, এটি মসজিদের আদবের খেলাফ। যদি মসজিদে ঢুকে দেখেন জামাআত দাড়িয়ে গেছে তবে জামাআত শরীক হলেই মসজিদের তাহিয়্যাহ হয়ে গেল। কোন প্রকার সালাত আদায় না করে বসা হল না। যে কোন সালাত আদায় করলেই তাহিয়্যাহ হয়ে যায়, কিন্তু মসজিদে প্রবেশ করেই বসা যাবে না।
_______________________
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে, কিন্তু সে নয় যে অস্বীকার করবে।
জিজ্ঞাসা করা হল- হে আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) ! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করবে?
_______________________
তিনি বললেন- যে আমার অনুসরণ করবে সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করবে সে জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে। (সহিহ বুখারীঃ ৭২৮০, মুসলিমঃ ১৮৩৫)
_______________________
লোকেরা কালো রং দিয়ে চুল- দাড়ি রঙ্গাবেঃ
চুল বা দাড়ীতে কালো রং লাগানো একটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ। কিন্তু সাদা চুল-দাড়ি মেহদী বা অন্য রং দিয়ে পরিবর্তন করা নবী (ছাঃ) এর সুন্নাত। তিনি সাদা চুলকে কালো রং বাদ দিয়ে অন্য রং দিয়ে পরিবর্তন করতে আদেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেনঃ
إِنَّ الْيَهُو دَ وَالنَّصَارَى لَا يَصْبُغُو نَ نَفَخَلِفُو هُمْ
“ ইয়াহুদী ও নাসারারা চুল ও দাড়িতে খেযাব লাগায় না। সুতরাং তোমরা খেযাব লাগিয়ে তাদের বিপরীত কর”। ( বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া।)
কিন্তু কিয়ামতের পূর্বে লোকেরা এ আদেশ অমান্য করে কালো রং দিয়ে খেজাব (কলপ) লাগাবে। নবী (ছাঃ) বলেনঃ
يَكُونُ قَوْمٌ يَخْضِبُو نَفِي آخِرِ الزَّمَانِ بِالسَّوَادِ كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ لَا يَرِيحُونَ رَاءِحَةَالْجَنَّةِ
“ আখেরী যামানায় একদল লোকের আগমণ হবে যারা সাদা চুল-দাড়ি কালো রং দিয়ে পরিবর্তন করবে। তারা জন্নাতের গন্ধও পাবেনা”। (আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তারাজ্জুল, আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন)
হাদীছের ভাষ্য বাস্তবে পরিণত হয়েছে। পুরুষদের মাঝে দাড়ি ও মাথার চুল কালো রং দিয়ে পরিবর্তন করার প্রবণতা ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেনঃ
يَكُونُقَومٌ يَخضِبُونَ فِي آخِرِ الزَّمَانِ بِالسَّوَادِ؛ كَحَوَاصِلِ الحَاماَمِلاَ يَرِيحُونَ رَاءِحَةَالخَنَّةِ
“অর্থাৎ শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা (চুল বা দাড়িতে) কালো রং লাগাবে। যা দেখেতে কবুতরের পেটের ন্যায়। তারা জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না”। ( আবু দাউদ ৪২১২; নাসায়ী ৫০৭৭)
কারোর মাথার চুল বা দাড়র সাদা হয়ে গেলে তাতে কালো ছাড়া যে কোন কালার লাগানো সুন্নাত।
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেনঃ
أُتِيَ بِأَبِي قُحَا فَةَ يَومَفَتح مَكَّة،وَرَأسُهُ وَلِحيَتُهُ كَالثَّغَا مَةِ بَيَا ضًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلى اللهُ عَلَيهِ وَسَللَّم غَيِّرُوا هَذَا بِشَيءٍ، وَاجتَنِبُوا السَّوَادَ.
“ মক্কা বিজয়ের দিন (আবূ বকর (রাঃ) এর পিতা ) আবূ ক্বহাফাহকে (রাসূল (ছাঃ) এর সামনে ) উপস্থিত করা হলো । তখন তার মাথায় চুল ও দাঁড়ি সাদা ফল ও ফুল বিশিষ্ট গাছের ন্যায় দেখাচ্ছিলো । তা দেখে রাসূল (ছাঃ) সাহাবাদেরকে বললেনঃ তোমরা কোন কিছু দিয়ে এর কালার পরিবর্তন করে দাও। তবে কালো কালার কিন্তু লাগাবে না”। (আবু দাউদ ৪২০৪; নাসায়ী ৫০৭৮)
তবে রাসূল (ছাঃ) সাধারণত মেহেদি, জাফরান ও অর্স (লাল গোলাপের রস) দিয়ে কালার করতেন।
আবূ রিমসাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেনঃ আমি ও আমার পিতা রাসূল (ছাঃ) এর কাছে আসলে তিনি আমার পিতাকে বলেনঃ এ ছেলেটি কে? তখন আমার পিতা বললেনঃ সে আমারই ছেলে। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেনঃ তুমি তার সাথে অপরাধমূলক আচরণ করো না । হযরত আবূ নিমসাহ বলেনঃ তখন তাঁর দাড়ি মেহেদি লাগানো ছিলো।
আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
كَانَ النَّبِيُّ رَسُولُ اللَّهِ صَلى اللهُ عَلَيهِ وَسَللَّم يَلبَسُ النِّعَالَ السِّبتِيَّة،وَيُصَفِّرُ لِحيَتَهُ بِالوَرسِ وَالزَّعفَرَانِ
“নবী (ছাঃ) চামড়ার জুতো পরিধান করতেন এবং অর্স তথা লাল গোলাপের রস ও জাফরান দিয়ে দাঁড়িটুকু হলুদ করে নিতেন”। (আবূ দাউদ ৪২১০)
রাসূল (ছাঃ ) আরো বলেনঃ
إِنَّ أَحسَنَ مَا غُيِّرَ بِهِ هَذَا الشَّيبُ:الحِنَّاءُوَالكَتَمُ
“ নিশ্চয় সর্বশ্রেষ্ঠ বস্তু যা দিয়ে বার্ধক্যের সাধা বর্ণকে পরিবর্তন করা যায় তা হচ্ছে মেহেদি ও কাতাম; যার ফল মরিচের ন্যায়”। (আবূ দাউদ ৪২০৫; নাসায়ী ৫০৮০)
"মিথ্যাবাদী মা"
এতটা দিন পেরিয়ে আজো মায়ের
জন্য
কাঁদি
... কারণ আমার মা যে ছিল ভীষণ
মিথ্যাবাদী।
বাবা যেদিন মারা গেল আমরা
হলাম
একা
সেদিন থেকেই বাঁক নিয়েছে
মায়ের
কপাল রেখা।

মা বলতো বাবা নাকি তারার
ভিড়ে
আছে
লেখাপড়া করি যদি নেমে আসবে
কাছে।
তারায় তারায় বাবা খুঁজি তারার
ছড়াছড়ি
আমার মায়ের মিথ্যে বলার প্রথম
হাতে খড়ি।
পাড়া পড়শী বলল এসে এই বয়সেই
রাঢ়ি !
একা একা এতটা পথ কেমনে দিবে
পাড়ি।
ভাল একটা ছেলে দেখে বিয়ে কর
আবার
মা বলল, ওসব শুনে ঘেন্না লাগে
আমার।
একা কোথায় খোকন আছে, বিয়ের
কী দরকার?
ওটা ছিল আমার মায়ের চরম
মিথ্যাচার।
রাত্রি জেগে সেলাই মেশিন,
চোখের
কোণে কালি
নতুন জামায় ঘর ভরে যায় মায়ের
জামায়
তালি।
ঢুলু ঢুলু ঘুমের চোখে সুই ফুটে মা’র
হাতে
আমি বলি, শোও তো এবার কী কাজ
অত
রাতে?
মা বলত ঘুম আসে না শুয়ে কী লাভ বল?
ওটা ছিল আমার মায়ের মিথ্যা
কথার
ছল।
স্কুল থেকে নিতে আসা গাড়ী
ঘোড়ার চাপে
আমার জন্য দাড়ানো মা কড়া
রোদের
তাপে।
ঘামে মায়ের দম ফেটে যায়, দুচোখ
ভরা ঝিম
ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে আমায় দিত
আইসক্রিম।
মায়ের দিকে বাড়িয়ে ধরে
বলতাম
একটু
নাও
মলিন হেসে মা বলত, খাও তো বাবা
খাও।
আমার আবার গলা ব্যাথা,
ঠান্ডা খাওয়া মানা
ওটা ছিল আমার মায়ের নিঠুর
মিথ্যাপনা।
বড় হয়ে চাকুরী নিয়ে বড় শহর আসি
টুকটুকে বউ ঘরে আমার বউকে
ভালবাসি।
পশ এলাকায় বাসা নিয়ে
ডেকোরেটর
ধরে
সাজিয়ে নিলাম মনের মত
অত্যাধুনিক
করে।
মা তখনো মফস্বলে কুশিয়ারার
ঢালে
লোডশেডিং এর
অন্ধকারে সন্ধ্যা বাতি জ্বালে।
নিয়ন বাতির ঢাকা শহর আলোয় ঝলমল
মাকে বলি গঞ্জ ছেড়ে এবার ঢাকা
চল।
মা বলল এই তো ভাল খোলা মেলা
হাওয়া
কেন আবার তোদের ওই ভিড়ের
মধ্যে যাওয়া?
বদ্ধ ঘরে থাকলে আমার হাঁপানি
ভাব
হয়
ওটা ছিল আমার মায়ের মিথ্যা
অভিনয়।
তারপর আমি আরো বড়, স্টেটস এ
অভিবাসী
বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষজ্ঞ সুনাম
রাশি রাশি।
দায়িত্বশীল পদে আমার কাজের
অন্ত
নাই
মায়ের খবর নিব এমন সময় কমই পাই।
মা বিছানায় একলা পড়া
খবর এল শেষে
এমন অসুখ হয়েছে যার
চিকিৎসা নেই দেশে।
উড়ে গেলাম মায়ের কাছে অনেক
দূরের পথ
পায়ে পড়ে বলি মাকে এবার
ফিরাও
মত
একা একা গঞ্জে পড়ে কী সুখ
তোমার
বল?
আমার সংগে এবার তুমি এমেরিকা
চল।
এসব অসুখ এমেরিকায় কোন ব্যাপার
নয়
সাত দিনের চিকিৎসাতেই সমুল
নিরাময়।
কষ্ট হাসি মুখে এনে বলল আমার মা
প্লেনে আমার চড়া বারণ তুই কি
জানিস
না ?
আমার কিছু হয় নি তেমন ভাবছিস
অযথা
ওটাই ছিল আমার মায়ের শেষ
মিথ্যা কথা।
ক’দিন পরেই মারা গেল নিঠুর
মিথ্যাবদী
মিথ্যাবাদী মায়ের জন্য
আজো আমি কাঁদি।
BY__________
আপনি হয়তো জানেন না আপনার
জন্মের পর
থেকে এ পর্যন্ত তার সব
কষ্টগুলোকে চাপা দিয়ে রেখেছে
শুধু
আপনার মুখে একটু হাসি ফুটানোর
জন্য ।
আপনাদের কাছে শুধু একটাই অনুররোধ
মা কে কখনো কষ্ট দিবেন না, কারন
"আপনার দেয়া কষ্টগুলি মায়ের
মনকে নীরবে কাঁদায়"
যা আপনাকে বুঝতে দিবে না,
আপনিও
কোনদিনই বুঝতে পারবেন না ।

শির্কের পরিণতি ও ভয়াবহতা ৷
-------------------------
শির্ক তাওহীদের বিপরীত। ইসলাম যে সব মূলনীতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে, তাওহীদ বা একত্ববাদই হচ্ছে তার মূলসার। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলাকে ইবাদাতের (উলুহিয়াত) ক্ষেত্রে, সৃষ্ট বিষয়ক ও সবকিছু নিয়ন্ত্রণের (রবুবিয়াত) ক্ষেত্রে, নাম ও বিশেষণের (আসমা ওয়াসসিফাত) ক্ষেত্রে কোনও অংশীদার ছাড়াই এক ও একক বিশ্বাস করাকেই তাওহীদ বলে। প্রতিপালন, আইন, বিধান ও ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও একচ্ছত্র অধিকারে কাউকে শরীক করা বা অংশীদার বানানোই হচ্ছে শির্ক। ইসলামী জীবন বিধানের প্রতিটি অনু-পরমাণু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসলামে এমন কোনো নিয়মনীতি নেই, যেখানে এই শির্কের সামান্য গন্ধও খুঁজে পাওয়া যাবে। ইসলামে শির্ক হচ্ছে একটি ভয়াবহ কবিরা গুনাহ।

আমাদের সমাজের অনেক আলিম ও বিদ্বানগণও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, না বুঝে, অলক্ষ্যে কিংবা আধুনিক ইসলামের প্রবক্তা সেজে মুসলিমদের আকীদা বিশ্বাসের মূল সার- এই তাওহীদকে উপেক্ষা করে শির্কে নিমজ্জিত হচ্ছেন।
মহান আল্লাহর ভাষায়-
﴿ وَمَا يُؤۡمِنُ أَكۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ ١٠٦ ﴾ [يوسف: ١٠٦]
অনেক মানুষ আল্লাহর উপর ঈমান আনার পরও তারা মুশরিক।
তাওহীদ ও শির্ক পরস্পরে সাংঘর্ষিক। যে তাওহীদ লালন করবে, সে একত্ববাদী মুসলিম। আর যে শির্ক চর্চা করবে সে মুশরিক। মুসলিম বলে দাবী করার তার কোনো অধিকার নেই।
শির্কের পাপটি জঘণ্য পাপ। যারা এই পাপের ধুম্রজালে জড়িয়ে যায়, তারা মহান আল্লাহর ক্ষমা থেকে চিরতরে বঞ্চিত হয়।
মহান আল্লাহ বলেন-
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨ ﴾ [النساء: ٤٨]
‘‘যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক বানায়, আল্লাহ নিঃসন্দেহে তাকে ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া যাকে তিনি চান ক্ষমা করবেন।’’
শির্ক সকল ভাল আমলকে ধ্বংস করে দেয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ ﴾ [الزمر: ٦٥]
‘‘আপনার ও আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর সাথে শির্ক করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন বলে গণ্য হবেন।’’

শির্ক জাহান্নামকে অনিবার্য করে ৷বলেন
আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢ ﴾ [المائ‍دة: ٧٢]
‘‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করেছেন; তার বাসস্থান হচ্ছে জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’’ যারা শির্ক চর্চা করে, তাদের রক্ত মুসলিমদের জন্য হালাল, হত্যাযোগ্য।
আল্লাহর ভাষায় ,
﴿ فَٱقۡتُلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَيۡثُ وَجَدتُّمُوهُمۡ وَخُذُوهُمۡ وَٱحۡصُرُوهُمۡ وَٱقۡعُدُواْ لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٖۚ ٥ ﴾ [التوبة: ٥]
‘‘অতঃপর শির্ককারীদের যেখানে পাবে তাদেরকে হত্যা কর, তাদেরকে পাকড়াও কর ও অবরুদ্ধ কর। আর তাদের ঘাটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎপেতে বসে থাকো।’’
শির্ক একটি বড় গুনাহ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
عن أبى هريرة رضى الله عنه إن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: اجتنبوا الموبقات.... الإشراك بالله...
ধ্বংসকারী বিষয়গুলো হতে বেঁচে থাক, আর তা হচ্ছে, আল্লাহর সাথে শির্ক করা।...
সুতরাং শির্ক অত্যন্ত জঘন্য। মুসলিম জীবনের কোনো অংশে এই শির্ক অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই। প্রতিটি মুসলিমের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ঈমান। আর এই ঈমান বিধ্বংসী শির্ক হতে বেঁচে থাকা হচ্ছে তার ঈমানের অনিবার্য দাবী। আমরা অনেকেই এই শির্কে লক্ষ্যে অলক্ষ্যে নিমজ্জিত হই। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় এর প্রবল স্রোতে ভেসে যাই। ভয়াল বিভীষিকাময় এই শির্ক থেকে বেঁচে থাকার জন্য শির্ক সম্পর্কে জানা খুবই প্রয়োজন।
ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্কতা ও ঈমানের দাবী
মূল: ইউছুফ আলী রায়হান

ইন্টারনেট তথ্যজগতে একটি বিশাল আন্দোলন নিঃসন্দেহে। তবে এই তথ্যজগতটি ঈমান আখালাক এমনকী বিবেক-বুদ্ধি পরীক্ষার একটি বিশাল ময়দানও বটে। যা শুভ ও কল্যাণকর তাও এখানে পুরোরূপে উন্মুক্ত, যা অশুভ-অকল্যাণকর তাও এখানে নানা ব্যঞ্জনে উপস্থাপিত। যে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সে তার জিহবা নির্বাধভাবে ছেড়ে দিতে পারে, সে তার দৃষ্টি যেখানে ইচ্ছা সেখানেই ঘুরাতে পারে, সে তার হাত দিয়ে যা চায় তাই লিখতে পারে। তাকে নিবারণকারী কেউ নেই, তাকে ধমক দেওয়ারও কেউ নেই, না আছে কেউ থামিয়ে দেওয়ার। সে যদি উর্দ্ধে উঠতে সক্ষশ হয়, পরিণামের প্রতি দৃষ্টি দেয়, তার প্রতিপালক তাকে দেখছেন এই বিশ্বাস হৃদয়ে জাগ্রত রাখে, তবে সে সফলতার সাথে প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সামনে এগুতে সক্ষম হবে। আর যদি সে নিজের লাগাম ছেড়ে দেয়, তার খায়েশ যেদিকে তাড়িত করে সেদিকে ধাবমান হয়, ঈমান ও তাকওয়ার প্রহরী তার হৃদয় থেকে বিতারিত হয়, তাহলে আবর্জনার স্তুপে ঢুকে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা থেকে যায়, আর এর অশম্ভাবী পরিণতি হল অপদস্ততা, সুভদ্রতার মৃত্যু, নিকৃষ্টতা ও পঙ্কিলতায় নাক ঘর্ষণ।
ইন্টারনেট ও তার ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য কিছু পথ-পদ্ধতী রয়েছে, নিম্নে সেগুলো ইল্লেখ করা হল।
ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার:
বুদ্ধিমানের কাজ হল ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার করা। নিজেকে অতিরঞ্জিত আকারে বিশ্বাস না করা; কেননা এ ধরনের অতিবিশ্বাস নিজেকে ফেতনায় নিপতিত করতে পারে, যার করালগ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়া হয়ত অসম্ভব হয়ে উঠবে।
যদি কেউ ইন্টারনেটে কোন কিছু পেশ করতে চায়, অথবা কোন মন্তব্য ইত্যাদি করতে চায়, তাহলে উচিত হবে প্রথমে বিবেচনা করে দেখা এর দ্বারা কোন উপকার হবে কি না, তাকে সতর্ক হতে হবে এর দ্বারা যেন মুমিনদের কোন কষ্ট না দেওয়া হয়, মুমিনদের কোন ক্ষতি না হয়। অতঃপর মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়ানোর সকল আকার-প্রকৃতি থেকে তাকে বিরত থাকতে হবে। অহেতুক কথা-বার্তা থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। মানুষের অনুভূতি নিয়ে তামাশায় লিপ্ত হওয়া, একে অপরকে অপবাদ দেওয়ার ডালি খুলে বসা, একদলকে অন্যদলের উপর চড়াও করে দেওয়া ইত্যাদি থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

কোন মন্তব্য অথবা কারো কথা খন্ডন করতে হলে ইলমনির্ভর, আদব, সদয়ভাব ও শালীন ভাষায় করা জরুরী। কোন কিছুতে অংশ নিতে চাইলে তা যেন হয় নিজস্ব ও সরাসরি নামে। সরাসরি নিজের নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভয় হলে উচিত হবে এমন কোন বিষয় না লেখা যা অবৈধ, অশিষ্ট। যে দিন মানুষের অন্তরাত্মা ইন্মুক্ত করে সবকিছু সম্মুখে নিয়ে আসা হবে সেদিন আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার বিষয়টি হৃদয়ে সজাক রাখতে হবে।
শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে দূরে থাকা:
বুদ্ধিমানের উচিত শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে দূরে অবস্থান করা; শয়তান মানুষকে গোমরাহ করার জন্য ফাঁদ পেতে থাকে সারাক্ষণ। সকল পথ ও পদ্ধতি সে ব্যবহার করে যায় তার কর্মসিদ্ধির উদ্দেশ্যে। শয়তান মানুষেরে চিরশত্রু, যে শত্রু মানুষকে গোমরাহ করার মাকসদ নিয়ে যাপন করে প্রতিটি মুহূর্ত। আল্লাহ তা’আলা আল কুরআনের একাধিক জায়গায় বলেছেন, “তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের স্পষ্ট শত্রু”।
বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনই তার শত্রুর প্রতি আস্থা রাখে না। ফেনতার থাবায় নিজেকে কখনো সপে দেবে না। ফেতনায় পড়বে না বলে অধিক আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়বে না, জ্ঞানে, দীন ও ইলমে সে যে পর্যায়েই থাক না কেন।
বুদ্ধিমান ব্যক্তি বরং ফেতনা থেকে অবস্থান করে বহু দূরে। ফেতনার কাছিাকাছি যাওয়া থেকে সে যথেষ্ট সতর্কথা অবলম্বন করে। এসবের পরে যদি সে কখনো নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেতনায় নিপতিত হয়, তবে তা থেতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর সাহায্য আসে। আল্লাহর করুণা তার সঙ্গ দেয়। আর যদি সে নিজের উপর অতিমাত্রায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠে, নিজের নখর দিয়ে নিজের গোর নির্মাণ করে চলে, তবে তার ইপর থেকে আল্লাহর করুণা সরিয়ে নেওয়া হয়। তাকে একা ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইউসুফ আলাইহিস্সালাম নিজ থেকে ফেতনায় নিপতিত হন নি, ফেতনাই বরং তার মুখোমুখি হয়েছে, আর তখন তিনি আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়েছেন। ফেতনার বিপদ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় চেয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে আল্লাহ যদি নারীদের ষড়যন্ত্র থেকে তাকে রক্ষা না করতেন তবে তিনি জাহেলদের দলভুক্ত হয়ে যেতেন। আল্লাহর উপর তাঁর প্রচন্ড ভরসার কারণেই আল্লাহর করুণা তার সঙ্গ দিয়েছে, ফলে তিনি ভয়াবহ বিপদ থেকে রেহাই পেতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সময় নিধারণ ও উদ্দেশ্য নির্ণয়:
ইন্টারনেটের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার একটি উপায়, সময় নির্ধারণ ও সুনির্দিষ্টভাবে কীভাবে কি কাজ করতে হবে তা নির্ণয় করে নেওয়া, উদ্দেশ্য স্থির করে নেওয়া।
এর বিপরীতে অনির্দিষ্টভাবে যদি একটির পর একটি পেইজ ওপেন করে চলে, এক সাইটের পর অপর সাইট ভিজিট করে চলে, তবে অযথা সময় নষ্ট ব্যতীত অন্য কিছু আশা করা যায় না। যদি কোন উপকার আহরণে সক্ষম হয় তবে তা হবে খুবই ক্ষীণ।
পরিণাম দর্শন:

ইন্টারনেটের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য বুদ্ধিমান ব্যক্তির উচিত হবে তার কৃতকর্মের পরিণামের প্রতি দৃষ্টি রাখা। নিজেকে দমন করা, নিজের প্রবৃত্তি-খায়েশের ঘারে লাগাম লাগানো। ইবনুল জাউযি রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘হে তাকওয়ার দ্বারা সম্মানের আসনে সমাসীন ব্যক্তি, তুমি তাকওয়ার সম্মানকে গুনাহের অপদস্থতার বিনিময়ে বিক্রি করো না। যে জিনিসের প্রতি তোমার খায়েশ জন্মেছে তা বর্জন করে তোমার প্রবৃত্তির তৃষ্ণা মেটাও, যদিও তা কষ্টদায়ক হয়, জ্বালা দেয়।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘প্রবৃত্তিকে দমনের শক্তিতে এমন স্বাদ রয়েছে যা সকল স্বাদকে অতিক্রম করে যায়; তুমি কি দেখো না, যারা প্রবৃত্তিতে আরোপিত তারা কিভাবে অপদস্থ হয়; কেননা তারা পরাজিত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি প্রবৃত্তিকে দমন করে তার ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টো; কেননা সে শক্তিমান হওয়ার সাক্ষর রাখে, কারণ প্রবৃত্তিকে দমন করায় সে পারঙ্গমতার পরিচয় দেয়।
যৌন আবেদনময় সকল বিষয় থেকে দূরে থাকা আবশ্যক:
যৌন আবেদন সুরসুরি সৃষ্টিকারী সকল বিষয় থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে দূরে থাকতে হবে। খারাপ ও পর্নো সাইটগুলো অবশ্যই বর্জন করতে হবে। যেসব ব্লগ সাইটে ফাহেশ-অশালীন কথাবার্তা বলা হয়, যেসব প্রবন্ধে প্রবৃত্তি উসকিয়ে দেওয়ার উপাদান রয়েছে, তা বর্জন করা ঈমান ও আখালাকের দাবী। আবেদনময় চিত্র-ছবি, কামনা-বাসনা উসকিয়ে দেয় এমন ফুটেজ থেকে দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ; মানুষের মন সৃষ্টিগতভাবে প্রবৃত্তির প্রতি আসক্ত, প্রবৃত্তি যেদিকে টানে সেদিকেই সে চলতে শুরু করে। মানুষের মন বারূদ অথবা প্রেট্রোলতুল্য, যা জ্বালার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। এসব বস্তু প্রজ্জ্বলনকারী বস্তু থেকে যতক্ষণ দূরে থাকে, শান্ত থাকে, জ্বালার আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকে। আর এর অন্যথা হলেই তা জ্বলে উঠে, বরং জ্বলে উঠা স্বাভাবিক।
মানুষের মনও অভিন্ন প্রকৃতির। মানুষের মন শান্ত-নিরব থাকে। তবে যখন তা উসকিয়ে দেওয়ার মত কোন কিছুর নিকটবর্তী হয়, দুষ্টপ্রবৃত্তিকে জাগিয়ে দেওয়ার মত কোন শ্রব্য, দৃশ্য, পাঠ্য অথবা সম্পর্শে আসে তখন তার ঘুমন্ত প্রবৃত্তি দানবের মত জেগে ওঠে, তার ব্যাধিগুলো আন্দোলিত হয়ে ওঠে, তার খায়েশ-আসক্তি বাধভাঙ্গা জোয়ারের মত হয়ে হাজির হয়। তাই এসব প্রবৃত্তি উদ্দীপক বিষয় থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরি।
দৃষ্টি অবনত রাখা:
অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনাকাঙ্খিত চিত্র কখনো সমানে এস হাজির হয়। এমনতাবস্থায় ব্যক্তি যদি তার দৃষ্টিকে অবনত করে নেয়, তবে সে একদিকে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করল অন্যদিকে নিজের হৃদয়কেও তৃপ্তি দিতে সক্ষম হল। চোখ হৃদয়ের আয়না। চোখের লাগাম ছেড়ে দেওয়া অনুশোচনার কারণ, পক্ষান্তরে দৃষ্টি অবনতকরণ, হৃদয়কে শান্ত-তৃপ্ত করে। যখন কেউ তরি দৃষ্টিকে লাগাম লাগিয়ে রাখে তখন তার হৃদয়ও কামনা-বাসনার মুখে লাগাম লাগিয়ে রাখে। চোখ উন্মুক্ত স্বাধীন করে দিলে, হৃদয়ও উন্মুক্ত স্বাধীন হয়ে যায়।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:
قُلْ لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنْ أَبْصَـرِهِمْ وَيَحْفَظُواْ فُرُوجَهُمْ ذلِكَ أَزْكَى لَهُمْ
অর্থ: মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। (সূরা নূর: ৩০)
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা, দৃষ্টি অবনত করা ও লজ্জাস্থান হেফাজত করাকে আত্মার পরিশুদ্ধির সমধিক শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ব্যক্ত করেছেন। আর আত্মার পরিশুদ্ধির অর্থ সকলপ্রকার দুষ্ট, অশালীন, জুলুম, শিরক, মিথ্যা ইত্যাদি থেকে মুক্ত হওয়া।’
নিশ্চিত হওয়া:
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য এটা জরুরি যে, সে যা বলছে বা পড়ছে অথবা বর্ণনা করছে তার শুদ্ধতা ভালভাবে যাচাই করে নেয়া, কেননা একটা মানুষেরে বুদ্ধিমত্তা ও ঈমানের পরিচয়। আর এটা জরুরি এ জন্যও যে, ইন্টারনেটে ভালমন্দ সবই লেখা হয়, সক্ষম-অক্ষম সবাই তাতে লেখে। অনেকেই আবার অপরিচিত নাম বা ছদ্মনামে লেখে।
সে কারণেই বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাজ হবে সতর্কতা অবলম্বন করা। তাই যখন সে কোন সংবাদ বা অন্য কোন বিষয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবে। নিশ্চিত হওয়ার পর এ সংবাদ বা তথ্যটি প্রচারের উপযোগিতা নিয়ে ভাববে। যদি তা কল্যাণকর হয় তবে প্রচার করবে। অন্যথায় তা প্রচার থেকে বিরত থাকবে। এই ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির কারণে কত খারাবিই না সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এমন রয়েছে যারা ইন্টারনেটে যা পায় মহাসত্যের মতো বিশ্বাস করে নেয়। এটা নির্বুদ্ধিতার আলামত; কেননা বুদ্ধিমানের আচরণ হল নিশ্চিত হওয়া, সত্য-মিথ্যা যাচাই করে নেয়া। এমনকী কোন সুপরিচিত ব্যক্তির কথা হলেও তা যাচাই করে দেখা উচিত। অপরিচিত মানুষের কথাবর্তার বেলায় কি অবস্থান নিতে হবে তা বলাই বাহুল্য। মানুষ যা শোনে তাই প্রচার করতে শুর করা থেকে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘ব্যক্তির মিথ্যা বলার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তা বর্ণনা করতে লাগে।’ (মুসলিম)
ফেতনা-ফাসাদের সময় এ আদবটি অধিক গুরুত্বসহ পালন করা জরুরি। যে ব্যক্তি নিজের উপকার চায় তার উচিত নিরাপদে থাকার খাতিরে, র্ভৎসনা থেকে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, এই আদবটি কঠিনভাবে ধরে রাখা।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِذَا جَآءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الاٌّمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُواْ بِهِ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَى أُوْلِى الاٌّمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنْبِطُونَهُ مِنْهُمْ وَلَوْلاَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لاَتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَـنَ إِلاَّ قَلِيلاً
অর্থ: আর যখন তাদের কাছে শান্তি কিংবা ভীতিজনক কোন বিষয় আসে, তখন তারা তা প্রচার করে। আর যদি তারা সেটি রাসূলে কাছে এবং তাদের কর্তৃত্বের অধিকারীদের কাছে পৌছে দিত, তাহলে অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা তা উদ্ভাবন করে তারা তা জানত। আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত না হত, তবে অবশ্যই অল্প কয়েকজন ছাড়া তোমরা শয়তানের অনুসরণ করতে। (সূরা নিসা: ৮৩)
শায়খ আল্লামা আব্দুর রহমান আসসুদি এ আয়াতের তাফসিরে বলেন, ‘ এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার বান্দাদেরকে, তাদের অযাচিত কাজ করার পর একটি দীক্ষা। অর্থাৎ যখন তারা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মুখোমুখি হবে, সর্বসাধারণের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোন বিষয় হবে, মুমিনদের আনন্দের বা দু॥খের কোন সংবাদ থাকবে, তবে এ বিষয়ে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে এবং সংবাদটি প্রচারে দ্রুততার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। বরং বিষয়টিকে রাসূল ও উলুল আমররের কাছে রুজু করতে হবে, উলুল আমর হলেন, জ্ঞানী ও সুচিন্তিত মতামত দিতে পারঙ্গম, নসিতকারী ও সুভদ্র ব্যক্তি যারা বিষয়ের নিগূঢ়তায় প্রবেশ করতে এবং মুমিনের স্বার্থ কোথায় তা বুঝতে সক্ষম। তারা যদি মনে করেন যে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য প্রচার করলে ফায়দা হবে, মুমিনদের উদ্দমতা বেড়ে যাবে, তাদের আনন্দের কারণ হবে, শত্রুপক্ষের অনুশোচনা বর্ধনের কারণ হবে, তাহলে তা প্রচার করবে, এর অন্যথা হলে তা প্রচার থেকে বিরত থাকবে। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘‘তাদের মধ্যে যারা তা উদ্ভাবন করে তারা তা জানত’’। অর্থাৎ তারা তাদের সুচিন্তা ও জ্ঞানের তা থেকে সঠিক বিষয়টি উদ্ধার করতে পারবে।
এখানে আমরা আরেকটি আদর্শিক বিধান পাচ্ছি, আর তা হল, কোথাও যদি বাহাস শুরু হয় তবে উচিত হবে এ বিষয়ে যারা দক্ষ তাদের শরণাপন্ন হওয়া। নিজেকে এগিয়ে না দেয়া, কেননা এটাই নির্ভুলতার জন্য সমধিক উপযোগী পদ্ধতী।
কোন কিছু শোনার সাথে সাথে তা প্রচার করতে লেগে যাওয়া উচিত নয়, এ বিধানটিও আমরা উক্ত আয়াতে পাই। বরং কথা বলার পূর্বে চিন্তাভাবনা করে দেখা, কল্যাণ কোথায় তা ভেবে দেখে প্রচার করবে কি করবে না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারেও বিধান পাচ্ছি উক্ত আয়াতে।
নিশ্চিত হওয়া ও ভেবে চিন্তে দেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে শায়খ অন্য একটি আয়াত উল্লেখ করেন, আয়াতটি হল,
فَتَعَـلَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ وَلاَ تَعْجَلْ بِالْقُرْءانِ مِن قَبْلِ إَن يُقْضَى إِلَيْكَ وَحْيُهُ وَقُل رَّبِّ زِدْنِى عِلْماً
অর্থ: তোমার প্রতি ওহী সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তুমি কুরআন পাঠে তাড়াহুড়া করো না এবং তুমি বল, ‘হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।’ (সূরা ত্বহা: ১১৪)
তিনি বলেন, এখানে জ্ঞান অন্বেষণকারীর একটি শিক্ষণীয় আদব রয়েছে, আর তা হাল ইলমের ব্যাপারে চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা। কোন বিষয়ে রায় দিতে তাড়াহুড়া না করা। গর্ববোধে নিপতিত না হওয়া। উপকারী ইলম অর্জন যাতে সহজ হয় সে ব্যাপারে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। তিনি আরেকটি আয়াত উল্লেখ করেন,
لَّوْلا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَـتُ بِأَنفُسِهِمْ خَيْراً وَقَالُواْ هَـذَآ إِفْكٌ مُّبِينٌ
অর্থ: যখন তোমরা এটা শুনলে তখন কেন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা তাদের নিজেদের সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করলে না এবং বলল না যে, ‘এটাতো সুস্পষ্ট অপবাদ’। (সূরা নূর: ১২)
এ আয়াত উল্লেখপূর্বক তিনি বলেন, এখানে আল্লাহ তাআলা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন যে, যখন মুমিনরা অন্যান্য মুমিন ভাইদের চরিত্রহননকারী কোন খারাপ সংবাদ শুনবে তখন তাদের ঈমান ও প্রকাশ্য অবস্থা সম্পর্কে যা জানা আছে তার প্রতি নজর দিবে। সমালোচকদের কথায় কান দিবে না। বরং বিরাজমান মূল বিষয়কে ভিত্তি হিসেবে ধরবে, সমালোচকদের কথা বিশ্বাস না করে তা বরং প্রত্যাখ্যান করবে।
ভেবে চিন্তে মন্তব্য করা:
এ ক্ষেত্রে জ্ঞানী ব্যক্তির উচিত হবে সকল বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা। জানা থাকলেই সবকিছু বলে দিতে হবে, কথা এমন নয়। বরং ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু বলা। ছোট বড় সকল বিষয়ে মন্তব্য করা সমুচিন বলে মনে করি না। ঘটে যাওয়া সকল বিষয়েই মন্তব্য করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ মন্তব্যকারী হয়ত বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে আত্মস্থ করে নি। এমনও হতে পারে যে অবস্থা নিরুপনে সে ভুল করছে। তাই ধীরস্থিরতা খুবই জরুরি। আরবিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘তাড়াহুড়াকারীর পাথেয় হল ভুল’।
এর বিপরীতে যে ব্যক্তি ভেবে চিন্তে মন্তব্য করবে, বিবেকের স্বচ্ছতা তাকে সহায়তা দিবে। বক্ষ্যমান অভিমতটি তার মস্তিস্কে পরিপক্কতা পাবে, ভুল কম হবে। বরং এটা হিকমত ও প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে যে মানুষ তার জানা সববিষয়ই সম্পর্কেই মন্তব্য করে চলবে। চিন্তা-ভাবনার আশ্রয় নেয়া সত্ত্বেও অথবা অভিমতটি সঠিক হওয়া সত্ত্বেও, সকল বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত বলে মনে করি না। মানুষের উচিত কিছু অভিমত সঞ্চয় করে রাখা। তবে যদি হেকমত ও মাসলেহাত দাবি করে অথবা পরিস্থিতির প্রয়োজন হয় তবে অভিমত ব্যক্ত করা চলে। যে বিষয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে তা যদি বড়দের সাথে সম্পৃক্ত হয় তবে তো কেবল পরামর্শের আকারে ব্যক্ত করা উচিত। আরবিতে একটি কবিতা আছে যার অর্থ, ‘কথা বললে মেপে বল; কারণ কথা, বুদ্ধি অথবা দোষ উন্মুক্ত করে দেয়’।
ইবনে হিব্বান বলেছেন, ধীরস্থিরতা অবলম্বনকারীকে কেউ পেছনে ফেলতে পারে না। আর তাড়াহুড়াকারী অন্যদের নাগাল পায় না। একইরুপে যে চুপ থাকে তাকে খুব কমই লজ্জিত হতে হয়, আর যে বলে, সে কমই নিরাপদ থাকে।
তাড়াহুড়াকারী জানার পূর্বেই বলে ফেলে, বোঝার পূর্বেই জবাব দেয়, অভিজ্ঞতা লাভের পূর্বেই প্রশংসাকীর্তনে মত্ত হয়, প্রশংসা করার পর আবার তিরস্কারও করে, চিন্তা করার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, আর বদ্ধপরিকর হওয়ার পূর্বেই চলতে শুরু করে।

তাড়াহুড়াকারীর সংগী হল লজ্জা। নিরাপদ থাকার বিষয়টি তাথেকে দূরে অবস্থান নেয়। আর আরবরা তাড়াহুড়াকে সকল লজ্জার মা বা উৎস বলে আখ্যায়িত করেছেন।
উমর ইবনে হাবীব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘বলা হত: এমন কোন তাড়াহুড়াকারী পাওয়া যাবে না যে প্রশংসিত, এমন কোন রোগী পাওয়া যাবে না যে খুশি। এমন কোন স্বাধীন ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যে লোভী। এমন কোন বদান্য ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যে হিংসুটে। এমন কোন খাদক পাওয়া যাবে না যে ধনী। এমন কোন বিরক্তিপ্রকাশক ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যার বন্ধুবান্ধব আছে।
একারনেই যারা প্রজ্ঞাবান তারা ধীরস্থিরতা অবলম্বন করার ব্যাপারে বারবার উপদেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করতে যাওয়া হবে তখন। মুতানাব্বি বলেছেন, ‘অভিমত, তার অবস্থান তো বাহাদুরের বাহাদুরি প্রকাশের পূর্বে, আর বাহাদুরি, সে তো দ্বিতীয় স্থলে। যদি এ দুটি কোন শক্তিমান ব্যক্তির বেলায় একসাথে হয় তবে তো সে সকল ক্ষেত্রেই চলে যাবে শীর্ষে।’ মুতানাব্বি আরো বলেন, ‘ব্যক্তিতে বিরাজিত প্রতিটি বাহাদুরিই যথেষ্ট, তবে প্রজ্ঞাপূর্ণ ব্যক্তির বাহাদুরিই সর্বোচ্চ।
উপস্থাপনে ভারসাম্য রক্ষা:
বুদ্ধিমানের উচিত উপস্থাপনে ভারসাম্য রক্ষা করা, অতিরঞ্জন থেকে বেঁচে থাকা। ছোটকে বড় করে না বলা। কেননা অতিরঞ্জন ও তিলকে তাল করে বলার মাঝে বাস্তবতা হারিয়ে যায়। একটি আরবি প্রবাদে আছে, ‘উত্তমব্যক্তি, মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী ব্যক্তি’।
আল্লাহ আপনাকে দেখছেন এই বিশ্বাস হৃদয়ে জাগ্রত রাখা:
ইন্টারনেটের ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বাঁচার উপায় হল আল্লাহ আপনাকে অবম্যই দেখছেন এ বিশ্বাস হৃদয়ে জাগ্রত রাখা। কবি বলেন, ‘আমার এ চোখ ঐ যুবকের চাইতে অধিক সুন্দর কাউকে দেখি নি যে নিভৃতে আল্লাহর মাকামকে ভয় করে।’ তাই বুদ্ধিমানের উচিত এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহ নেওয়া। সব সময় এ কথা মনে রাখা যে, সকল গায়েব অদৃশ্য আল্লাহর কাছে দৃশ্যমান। অবস্থা যদি এই হয় তাহলে ব্যক্তির পক্ষে আল্লাহকে সমধিক হালকা দ্রষ্টা হিসেবে সাব্যস্ত করা কি করে সম্ভব?! এটা অনুধাবন করা উচিত যে, যে ব্যক্তি কোন কিছু গোপন করবে আল্লাহ তাকে ঐ বিষয়ের পোশাক পরিয়ে দিবেন, যে ব্যক্তি কোন কিছু গোপন করল, চাই তা ভাল হোক বা মন্দ, আল্লাহ তা প্রকাশ করবেন। আমল যে ধরনের হবে, প্রতিদানও সে অনুপাতেই হবে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘যে মন্দ কাজ করবে তাকে তার প্রতিফল দেয়া হবে।’ (সূরা নিসাঃ ১২৩)
এ ব্যাপারে এবার আমি আপনাকে কিছু আলোকিত বাক্য শুনাব, ‘আবু হাযেম সালমা ইবনে দিনার রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক দুরস্ত করে নেয়, তখন আল্লাহও তার মাঝে ও মানুষের মাঝে সম্পর্ককে ভালো করে দেন, এর বিপরীতে যখন কোন ব্যক্তি তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়, আল্লাহও তখন তার মাঝে ও মানুষের মাঝে সম্পর্ককে নষ্ট করে দেন। আর নিশ্চয়ই একজনের চেহারার তুষ্টি অনুসন্ধান সকলের তুষ্টি অনুসন্ধানের তুলনায় সহজ। এর বিপরীতে যদি আপনার ও আল্লাহর মাঝখানকার সম্পর্ক বিগড়ে দেন তবে সবার সাথেই সম্পর্ক বিগড়ে দিলেন। সবাইকে রাগিয়ে তুললেন।
মু’তামার ইবনে সুলাইমান বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি যদি সংগোপনে কোন পাপ করে তবে সে তার লাঞ্ছনা মাথায় নিয়েই সকাল করে।’
ইবনুল জাওযি রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর ব্যাপারে আপনি দলিল তালাশ করেছেন, অতঃপর পৃথিবীতে যত ধূলিকণা রয়েছে তার থেকেও অধিক পেয়েছেন, আল্লাহর আজব বিষয়ের মাধ্যে আপনি দেখেছেন যে, আল্লাহ যাতে সন্তুষ্ট নন মানুষ যদি এমন বিষয় গোপন করে, তাহলে বিলম্বে হলেও আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেন। লোকেরা তা নিয়ে কথা বলে। যদিও মানুষ তা দেখে নি।
হয়ত এই পাপকারীকে এমন বিপদে ফেলা হয় যার দ্বারা তার সকল পাপ মানুষের সামনে উন্মোচিত হয়ে যায়। এ যাবৎ সে যত পাপ গোপন করেছে, এ বিষয়টি তার জবাব হয়ে যায়। এটা এ জন্যে ঘটে যাতে মানুষ জানতে পারে যে পাপ ও পদস্খলনের প্রতিদান দেয়ার অবশ্যই একজন রয়েছেন। আর তিনি এমন এক সত্তা, কোন পর্দা বা প্রতিবন্ধকতা, তার ক্ষমতাকে রহিত করতে পারে না, যার নিকট কোন আমলই হারিয়ে যায় না।
অনুরূপভাবে মানুষ পুণ্যের কাজকেও হয়ত গোপন করে, কিন্ত তা প্রকাশ পেয়ে যায়, মানুষ তা নিয়ে কথা বলে, তারা বরং আরো অতিরিক্ত বলে, এমনকী সে ব্যক্তি তাদের কাছে এমন প্রতীয়মান হয় যে সে যেন আদৌ কোন পাপ করে নি। মানুষ তার ভাল কাজগুলোই উল্লেখ করে। এ রকম এজন্য ঘটে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে অবশ্যই একজন প্রতিপালক রয়েছেন যিনি আমলকারীর কোন আমলকেই বিনষ্ট করেন না।
মানুষের হৃদয় ব্যক্তির অবস্থা জানে, তারা তাকে ভালবাসে অথবা বর্জন করে, তাকে তিরস্কার করে অথবা তার প্রশংসা করে, তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক যে পর্যায়ের হয় সে অনুযায়ী এগুলো ঘটে। আল্লাহই যথেষ্ট ব্যক্তির সকল উৎকন্ঠা দূর করার ক্ষেত্রে, সকল অশুভ বিষয় তাথেকে উঠিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে।
আর যদি কোন ব্যক্তি তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ককে বিগড়ে দেয়, সত্য অনুসরণের বিবেচনা থেকে সরে আসে, তাবে তার প্রাপ্য বিষয় উল্টে যাবে। যারা প্রশংসা করত তারাই তাকে তিরস্কার করতে শুরু করবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘নিশ্চয় নিভৃতে আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক চর্চার প্রভাব রয়েছে যা প্রকাশ্য দৃষ্টিতে চলে আসে। এমন অনেক মুমিন রয়েছেন যারা নিভৃতে আল্লাহকে সম্মান করেন, অতঃপর সে তার প্রবৃত্তির খায়েশকে ছেড়ে দেয়। কেননা সে আল্লাহর শাস্তিকে ভয় পায়, অথবা তার ছাওয়াবের আশা করে। অথবা আল্লাহকে সম্মান করে তা ছেড়ে দেয়। এ কাজ করে সে যেন সুবাসযুক্ত কাঠ ধুপদানির উপর রেখে দেয়, অতঃপর তা সুগন্ধি ছড়াতে থাকে। মানুষ তা শুঁকে, অবশ্য তাদের জানা থাকে না এ সুগন্ধির উৎস কোথায়।
মানুষ তার প্রবৃত্তির খায়েশ থেকে দূরে যাওয়ার জন্য যতটুকু মুজাহাদ করবে, ততটুকু তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে মহব্বত বাড়বে। বর্জনীয় অথচ লোভ্য প্রিয় বস্তুকে ছেড়ে থাকার জন্য মানুষ যতটুকু শ্রম দেবে তার সুবাসও তত বাড়বে, আর এ সুবাস দাহ্য কাঠের প্রকৃতি হিসেবে বাড়ে অথবা কমে। অতঃপর আপনি মানুষকে দেখবেন যে ঐ লোকটিকে তারা সম্মান-শ্রদ্ধা করছে, তাদের মুখ থেকে তার প্রশংসা বের হচ্ছে, যদিও তারা জানে না কেন এমন হচ্ছে। তারা তাদের অনুভূতিকে ব্যক্ত করতে অপরাগ।
যা উপকারী তা পেশ করায় অংশ নেয়া:
ইন্টারনেটের খারাপ দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকা যেমন জরুরি, তদ্রুপভাবে মুসলমানের উচিত, বরং বলা যায় আবশ্যক, ইন্টারনেটের ভালো দিকগুলো হতে উপকৃত হওয়া। বিশেষ করে ব্যক্তি যদি ইন্টারনেট বিষয়ে জ্ঞান রাখে অথবা এই ময়দানে বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যক্তির জন্য, উপকারী কন্ট্রিবিউশন, মন্তব্য, বিশ্বস্ত ইসলামি সাইটগুলো মানুষকে দেখিয়ে দেয়া, ইত্যাদির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা জরুরি।
আল্লাহ আমাদের হিদায়াতের পথে রাখুন।
Show less

লজ্জাস্থানের হিফাযত।
(পোষ্টটি যেনা, অবৈধ কাজ , হস্ত  মৈথুন, সমকামিতা সম্পর্কিত  )
______________________________________
লজ্জাস্থানের হিফাযত বলতে বুঝায়, মানুষ এর অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ থেকে বেঁচে থাকা এবং স্বীয় শরীরের জৈবিক চাহিদা পূরণ
তথা যৌন স্পৃহা মেটানোর জন্য সেসব পন্থা অবলম্বন করা যা শরীআত কর্তৃক অনুমোদিত ও স্বীকৃত।
অনুপ্রেরণা স্বরূপ লজ্জাস্থান হিফাযত সম্পর্কীত ফযীলত লক্ষ্য করুন।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে
والذين هم لفروجهم حفظون. الا علي ازواجهم او ما ملكت ايمانهم فانهم غير ملومين. فمن ابتفي وراء ذلك فاولئك هم العدون.
কানযুল ঈমান (কৃত আলা হযরত মুফতী আহমদ রযা খাঁন রহ.) হতে অনুবাদ:
“এবং যারা যৌনাঙ্গগুলোকে সংযত রাখে, নিজেদের পত্নীগণ অথবা তাদের ওই শরীআত সম্মত দাসীদের নিকট ব্যতীত যারা তাদের হাতের মালিকানাধীন।
এতে তাদেরকে তিরস্কার করা হবে না,
সুতরাং যারা এ দু’প্রকার ব্যতীত অন্য কিছু কামনা করে তারাই সীমা লঙ্ঘনকারী।” (পারা-১৮, সূরা আল মুমিন, আয়াত নং-৫-৭)
সারওয়ারে আলম صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও উম্মতদের মাঝে অনুপ্রেরণা সৃষ্টির লক্ষ্যে লজ্জাস্থানের হিফাযত সম্পর্কীত অনেক ফযীলত বর্ণনা করেছেন।
১। হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
হে কোরাইশ যুবকেরা! তোমরা তোমাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত কর এবং ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ো না।
যে তার লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে, তার জন্য জান্নাত অনিবার্য।
২। হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মহিলারা যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে, তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে,
তাদের স্বামীদের আনুগত্য করবে, তখন তারা জান্নাতের যে দরজা দিয়েই ইচ্ছে করবে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
(মুসনাদে আবু হুরায়রা, হাদিস নং-4151)


          এবার জেনে নেই, যৌন তৃপ্তি মেটানোর বৈধ মাধ্যম সমূহ!

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, শরয়ীভাবে দু’ধরনের মহিলাদের দ্বারা যৌন তৃপ্তি মেটানো জায়েজ। 
১। নিজ স্ত্রী 
২। শরয়ী দাসী।
(দেখুন উপরের কুরআন এর আয়াত)
কিন্তু বর্তমান যুগে শরয়ী দাসী পাওয়া না যাওয়ার কারণে শুধুমাত্র নিজ স্ত্রী দ্বারাই যৌন তৃপ্তি মেটানো সম্ভপর।এ দিকটার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষ্ণ করে
রহমতে আলম صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন স্থানে উৎসাহ ব্যঞ্জক বাণী ইরশাদ করেন।
১। হযরতে সায়্যিদাতুনা আয়শা সিদ্বিকাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
নিকাহ বা বিবাহ করা আমার সুন্নাত।
সুতরাং যে আমার সুন্নতের উপর আমল করবে না, সে আমার দলভূক্ত নহে। তাই তোমরা নিকাহ করো যাতে আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্যতা নিয়ে
কিয়ামত দিবসে অন্যান্য উম্মতদের উপর গর্ব করতে পারি।
যে নিকাহ করতে সক্ষম সে যেন নিকাহ করে , আর যে সক্ষম নয় সে যেন রোযা রাখে। কেননা রোযা যৌন ক্ষুধাকে নিবৃত্ত করে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, খন্ড ৪, হাদীস নং-১৮৪৬)
২। হযরতে সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার বিবাহের সামর্থ আছে,
সে যেন অবশ্যই বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি অবনত রাখার এবং লজ্জাস্থান সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অধিকতর সহায়ক।
আর যে সামর্থের অধিকারী নয় সে যেন রোযা রাখে। কেননা রোযা তার জন্য ঢাল স্বরূপ।
(সহীহ বুখারি, খন্ড ৩, হাদীস নং-৫০৬০)
 
           নিকাহ তথা বিবাহের শরয়ী বিধান

স্মরণ রাখবেন, নিকাহ সর্বাবস্থায় সুন্নাত নহে। বরং কখনো কখনো ফরয কখনো ওয়াজিব আবার কখনো মাকরূহ, আর কখনো তা হারাম। বিস্তারিত নিচে-
১। ফরয- 
যৌন ক্ষুধার তীব্রতায় পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশংকা থাকলে ফরয, না করলে গুনাহগার হবে।
২। ওয়াজিব-
 স্ত্রীর ভরন পোষনের সামর্থ্ বিদ্যমান থাকলে এবং রিপুর তাড়নায় যিন, কুদৃষ্টি, হস্তমৈথুন ইত্যাদি পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশংকা থাকলে তখন নিকাহ করা ওয়াজিব। না করলে গুনাহগার হবে।
৩। সুন্নাতে মুআক্কাদাহ-
 স্ত্রীর মহর ও ভরন পোষনের সামর্থ্ বিদ্যমান থাকলে দাম্পত্য অধিকার সমূহ যথাযথভাবে আদায়ে সক্ষম হলে
এবং যৌনাকাঙ্খা তীব্রতর না হলে তখন বিবাহ করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ।
তবে এমতাবস্থায় বিবাহ না করার উপর অটল থাকা গুনাহ। আর যদি হারাম থেকে বাঁচার এবং যৌন তৃপ্তি লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে বিবহ করে, তাহলে সাওয়াবও পাওয়া যাবে।
আর যদি শুধুমাত্র উপভোগ কিংবা যৌন তৃপ্তি মেটানোর উদ্দেশ্যে নিয়ে বিবাহ করে থাকে , তাহলে সাওয়াব পাওয়া যাবে না তবে বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যাবে।
৪। মাকরূহ- 
যদি আশংকা হয় যে বিবাহ করলে স্ত্রীর ভরন পোষন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দাম্পত্য অধিকার সমূহ যথাযথ পালন করতে পারবে না, তাহলে বিবাহ করা মাকরূহ।
৫। হারাম-
 যদি দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে, বিবাহ করলে স্ত্রীর ভরন-পোষন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অধিকার সমূহ যথাযথ পালন করতে পারবে না। তখন বিবহ করা হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ্।
এমতাবস্থায় যৌন উত্তেজনা দমন করার জন্য রোযা রাখার অভ্যাসই গড়ে তুলতে হবে।
(বাহারে শরীআত, খন্ড ৭, পৃ.৫৫৯)

                       নিজ স্ত্রীর সাথে কখন যৌন মিলন জায়েজ নয়?

ইহাও স্মরণ রাখবেন যে, নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করার সময়ও শরীআত কর্তৃক নির্ধারিত বিধি বিধান সমূহ মেনে চলা পুরুষের জন্য অপরিহার্য।
যদি সহবাস করার সময় শরয়ী বিধি বিধান গুলো মেনে চলা না হয়, তাহলে সে গুনাহগার হব। শরয়ী বিধি বিধান মেনে না চলার কয়েকটি পন্থা রয়েছে।

১। ঋতুস্রাব কালীন সময়ে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা- পবিত্র কুরআনে মজীদে ঋতুস্রাব কালীন সময়ে সহবাস করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন-
ويسئلونك عن المحيض. قل هو اذي. فاعتزلوا النساء في المحيض.
কানযুল ঈমান (কৃত আলা হযরত মুফতী আহমদ রযা খাঁন রহ.) হতে অনুবাদ:
“এবং হে হাবীব! আপনাকে লোকেরা জিজ্ঞাসা করছে রজ:স্রাবের বিধান। আপনি বলুন, সেটা কষ্ট অবস্থা, সুতরাং তোমরা স্ত্রীদের নিকট থেকে
পৃথক থাকো রজঃস্রাবের দিনগুলোতে।” (বাকারাহ, আয়াত-২২২)
     সদরুশ শরীআ হাকিমুল উম্মত মুফতি মুহাম্মদ আমজাদ আলী আজমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার ফতোয়ায় লিখেছেন, হায়েয ও নিফাসের সময় স্ত্রীর নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত কোন অংশে কাপড় বিহীন অবস্থায়
পুরুষের কোন অঙ্গ দ্বারা স্পর্শ করা জায়েয নেই। চাই কামোত্তেজনার সাথে স্পর্শ করুক বা কামোত্তেজনা বিহীন স্পর্শ করুক। তবে যদি স্ত্রীর শরীরে কাপড়
বা অন্য কোন আবরণ থাকে
এবং স্পর্শ করলে শরীরের উষ্ণতা অনুভুত না হয়, তাহলে স্পর্শ করতে কোন অসুবিধা নেই।
(বাহারে শরীআত, খন্ড ২, পৃ.১১৮)

২। স্ত্রীর গুহ্যদ্বার দিয়ে সঙ্গম করা।
রহমতে আলম صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর গুহ্যদ্বার (পায়ু পথ, পায়খানার রাস্তা, পিছনের রাস্তা) দিয়ে সঙ্গম করে সে মালউন বা অভিশপ্ত।
(আবু দাউদ, খন্ড ২, হাদীস নং- ২১৬২)
অপর এক স্থানে তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টি নিবদ্ধ করবেন না, যে পুরুষের সাথে কিংবা স্ত্রীর গুহ্যদ্বার দিয়ে সহবাস করে।
(তিরমিযী, ২য় খন্ড, হাদীস নং-১১৬৮)

৩। উলঙ্গ অবস্থায় কিবলার দিকে মুখ দেয়া কিংবা কিবলার দিকে পিঠ দেয়া।
ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাতে উল্লেখ আছে, উলঙ্গ অবস্থায় কিবলামুখী হওয়া কিংবা কিবলাকে পিছ দেয়া মাকরূহে তাহরীমী। (১০ম খন্ড, পৃ.৩৮৮)

যৌন তৃপ্তি মেটানোর নিষিদ্ধ মাধ্যম সমূহ

নিজ স্ত্রী ও শরয়ী দাসী ব্যতিত যৌন তৃপ্তি মেটানোর আরো অনেক পন্থা রয়েছে। যেমন যিনা, সমকামিতা, জীবজন্তুর সাথে সঙ্গম করা, হস্তমৈথুন করা ইত্যাদি।
এগুলো সবই হারাম ও অবৈধ। সে নাজায়িয ও হারাম পন্থা সমূহের বিস্তারিত বর্ণনা লক্ষ্য করুন।
১। যিনা
ইহা হারাম ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। সে অপবিত্র কাজ হতে নিষেধ করে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন,
لا تقربوا الزني انه كان فاحشة. وساء سبيلا.
কানযুল ঈমান (কৃত আলা হযরত মুফতী আহমদ রযা খাঁন রহ.) হতে অনুবাদ:
“এবং অবৈধ যৌন সম্ভোগের নিকটে যেওনা। নিশ্চয় সেটা অশ্লীলতা এবং অত্যন্ত নিকৃষ্ট পথ”। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত-৩২)


যিনার শরয়ী শাস্তি

নফস ও শয়তানের প্ররোচনার ফাঁদে আটকা পড়ে সাময়িক যৌন তৃপ্তি মেটানোর জন্য যিনা তথা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া নর-নারী যদি অবিবাহিত হয়,
তাহলে তাদের শরয়ী শাস্তি হল তাদের প্রত্যেককে প্রকাশ্যভাবে সজোরে একশটি বেত্রাঘাত করা। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন,
 ازانية والزاني فاجلدوا كل واحد منهما مائة جلدة.ولا تأخذكم بهما رافة في دين الله ان كنتم تؤمنون بالله واليوم الاخر. ولئشهد عذابهما طا ئفة من المؤمنين
কানযুল ঈমান (কৃত আলা হযরত মুফতী আহমদ রযা খাঁন রহ.) হতে অনুবাদ:
“যে নারী ব্যভিচারিনী হয় এবং যে পুরুষ হয় ব্যভিচারী তবে তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত করো এবং তোমাদের যেন তাদের প্রতি দয়া না আসে আল্লাহর দ্বীনে যদি তোমরা ঈমান এনে থাকো আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর
এবং উচিত যে, তাদের শাস্তির সময় মুসলামানদের একটা দল উপস্থিত থাকবে।” (সূরা আন নূর, আয়াত ২)
বি.দ্র. এ শাস্তি ইসলামী রাষ্ট্রে কার্যকর করা যাবে। অন্য রাষ্ট্রে নয়। ইসলামী আদালতই বাস্তবায়ন করবে সাধারণ মানুষ নয়।
আর যদি কোন বিবাহিত পুরুষ বা নারী এ কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে সর্ব সম্মতিক্রমে তাদেরকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে।
প্রসিদ্ধ ফাতাওয়ার কিতাব আল বাহরুর রায়েক গ্রন্থে উল্লেখ আছে,
যদি যিনাকারী বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে কোন উন্মুক্ত স্থানে পাথর মারতে হবে যতক্ষন না সে মৃত্যুবরন করে। (খন্ড ৫, পৃ. ১৩)
যিনার পরকালীন শাস্তি
উপরে বর্ণিত শাস্তি পার্থিব জীবনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর যিনাকারী ব্যক্তি যদি তওবাবিহীন মারা যায়,
তাহলে পরকালে তাকে মর্মন্তুদ বেদনাদায়ক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
১। হযরতে সায়্যিদুনা সামুরাহ বিন জুনদুব রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একদা  রহমতে আলম صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়ানোর পর আমাদের অভিমূখী হয়ে বললেন,
আজ রাত আমি স্বপ্ন যোগে দেখলাম, আমার নিকট দু’জন ব্যক্তি আসল এবং আমাকে এক পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে গেল।
আমরা তন্দুরের ন্যায় একটি গর্তের নিকট গিয়ে পৌঁছলাম, যার উপরের অংশ ছিল সংকীর্ণ
এবং নিচের অংশ ছিল প্রশস্ত। উহাতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল এবং সে আগুনে কিছু পুরুষ ও মহিলা উলঙ্গাবস্থায় অবস্থান করছিল।
যখন আগুনের শিখা বৃদ্ধ পায় তখন তারা উপরের দিকে চলে যায়,
আর যখন আগুনের শিখা হ্রাস পায়, তখন শিখার সাথে সাথে তারাও নিচের দিকে নেমে আসে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? সে দু’জন ব্যক্তি বলল, এরা হল যিনাকারী নর-নারী।  (বুখারী, ১ম খন্ড, হাদীস নং-১৩৮৬)
২। আল্লামা শামশুদ্দিন যাহবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, যাবুর শরীফে উল্লেখ আছে, নিশ্চয়ই যিনাকারীদেরকে লজ্জাস্থানে বেঁধে
আগুনে ঝুলিয়ে রাখা হবে এবং তাদেরকে লোহার হাতুড়ী দিয়ে প্রহার করা হবে,
যখন তারা প্রহারে যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে ফরিয়াদ করবে, তখন আযাবের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতারা বলবে, তোমাদের এ ফরিয়াদ  তখন কোথায় ছিল,
যখন তোমরা আনন্দ আহলাদে মত্ত ছিলে। ভোগ সম্ভোগে বিহ্বল ছিলে,
এবং তোমাদের পুরুষাঙ্গ যৌনাঙ্গে ঢুকিয়েছিলে। তখন তোমরা তো আল্লাহকে ভয়ও করনি এবং তাঁকে লজ্জাও করনি। (কিতাবুল কবায়ের পৃ.৫৫)
৩। হযরতে সায়্যিদুনা মাকহুল দামেস্কী তাবেয়ী বর্ণনা করেন, দোযখীদের তীব্র দুর্গন্ধ অনুভূত হবে তখন তারা বলবে,
আমরাতো এর চেয়ে তীব্র দুর্গন্ধ আর কখনো অনুভব করিনি।
তখন তাদেরকে বলা হবে, ইহা যিনাকারীদের লজ্জাস্থানের দুর্গন্ধ। (ঐ, পৃ.৫৭)
৪। বর্ণিত আছে যে, বর্ণিত আছে যে জাহান্নামে এমন একটি উপত্যকা রয়েছে যা সাপ বিচ্ছুতে পরিপূর্ণ। সেখানকার প্রতিটি বিচ্ছু খচ্ছরের সমান মোটা এবং প্রতিটি বিচ্ছুর সত্তরটি হুল রয়েছে, আর প্রতিটি হুলে একটি একটি বিষের থলে রয়েছে।
এ বিচ্ছুগুলো যিনাকারীকে দংশন করতে থাকবে এবং তার শরীরে বিষ ছড়িয়ে দিবে। যিনাকারী এক বৎসর পর্যন্ত সে দংশনের ব্যথার কষ্ট অনুভব করতে থাকবে।
অতঃপর তার গোশত পঁচে হলুদ রঙের হয়ে যাবে।
এবং তার লজ্জাস্থান হতে পুঁজ ও হলুদ রঙের পানি প্রবাহিত হতে থাকবে। (ঐ, পৃ.৫৯)
৫। কিতাবুল কবায়ের এ উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি এমন কোন মহিলাকে কামোত্তেজনার সাথে স্পর্শ করবে যে মহিলা তার জন্য হালাল নয়,
সে কিয়ামত দিবসে এ অবস্থায় উত্থিত হবে যে তার হাত সে মহিলার ঘাড়ের সাথে সংযুক্ত থাকবে।
আর যদি সে ঐ মহিলাকে চুম্বন দিয়ে থাকে, তাহলে তার ওষ্ঠদ্বয়কে আগুনের কাঁচি দ্বারা কর্তন করা হবে।
আর যদি সে ঐ মহিলার সাথে যিনা করে থাকে, তাহলে তার উরুদ্বয় কিয়ামত দিবসে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে
এবং বলবে, আমরা হারাম কাজের জন্য সাওয়ার হয়েছিলাম। ইহা শুনে আল্লাহ তাআলা তার প্রতি গযবের দৃষ্টিতে দেখবেন।
তখন তার চেহারার গোশত ঝরে  পড়বে। সে ব্যক্তি তার যিনার কথা অস্বীকার করে বলবে,
আমিতো যিনা করিনি, কিন্তু তার জবান তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, আমি সে মহিলার সাথে কতা বলেছিলাম,
যে আমার জন্য হালাল ছিল না, তার হাত বলবে, আমরা হারামের দিকে প্রসারিত হয়েছিলাম, তার চক্ষুদ্বয় বলবে,
আমরা হারামের প্রতি দৃষ্টিপাত করেছিলাম, তার পদযুগল বলবে, আমরা হারামের দিকে গিয়েছিলাম, তার লজ্জাস্থান বলবে,
আমি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিলাম। আমলনামা ফিরিশতাদের একজন বলবে, আমি শ্রবণ করেছিলাম
এবং অপরজন বলবে আমি লিখেছিলাম। আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমি তার কাজ দেখেছিলাম এবং আমি তা গোপন রেখেছিলাম।
অতঃপর তিনি বলবেন, হে আমার ফিরিশতারা! তাকে পাকড়াও করো এবং তাকে আমার শাস্তি প্রদান করো।
নিঃসন্দেহে তার উপর আমার শাস্তি খু্বই কঠোর যে আমাকে লজ্জা ও হায়া করে না। (ঐ, পৃ.৫৯)

সমকামিতা

সমকামিতা অসংখ্য ইহকালীন ও পরকালীন বিপদের ধারক বাহক ও নিন্দনীয় কাজের কদর্যতা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমানিত।
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন।
ولو طا اذ قال لقومه اتاتون الفاحشة ماسبقكم بها من احد من العلمين- امكم لتاتون الرجال شهوة مندون النساء- بل انتم قوم مسرفون-
কানযুল ঈমান (কৃত আলা হযরত মুফতী আহমদ রযা খাঁন রহ.) হতে অনুবাদ:
“এবং লুতকে প্রেরণ করেছ। যখন সে আপন সম্প্রদায়কে বললো, তোমরা কি ওই নির্লজ্জ কাজ করছো, যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বের মধ্যে কেউ করেনি?
তোমরাতো পুরুষদের নিকট কাম-তৃপ্তির উদ্দেশ্যে গমন করছো নারীদেরকে ছেড়ে বরং তোমরা সীমালঙ্গন করে গেছো।
(সূরা আল আরাফ, আয়াত ৮০-৮১)
লুত আলাইহিস সালাম ও এর উম্মতদের উপর সে কারণেই আযাব নাযিল হয়েছিল, যার বর্ণনা পবিত্র কুরআন মাজীদে এ ভাবে প্রদান করা হয়েছে।
فلما جاء امرنا جعلنا عاليها سافلها و امطرنا عليها حجارة من سجيل- منضود-
কানযুল ঈমান (কৃত আলা হযরত মুফতী আহমদ রযা খাঁন রহ.) হতে অনুবাদ:
“অতঃপর যখন আমার আদেশ আসলো তখন আমি উক্ত জনপদের উপরিভাগকে নিচের দিকে উল্টিয়ে দিলাম
এবং তাদের উপর ক্রমাগত কঙ্কর পাথর বর্ষন করলাম।”(সূরা-হুদ, আয়াত-৮২)
সমকামিতার নিন্দায় রসূলুল্লাহ صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিভিন্ন হাদীসও  বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
১। হযরতে সায়্যিদুনা আমর বিন আবু আমর রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
যে লূত জাতির কাজ করবে সে মালউন তথা অভিশপ্ত। (তিরমিযী, হাদীস নং- ১৪৬১)
২। হযরতে সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
চার প্রকারের লোক যারা সকাল বেলায় আল্লাহর আক্রোশে
এবং সন্ধ্যাবেলা আল্লাহর অসন্তুষ্টিতে অতিবাহিত করে। রসূলুল্লাহ صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল,
হে আল্লাহর রসূল صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরা কারা?
তিনি ইরশাদ করলেন, তারা হল সে সমস্ত পুরুষ যারা মহিলাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বল করে এবং সে সমস্ত মহিলা যারা পুরুষদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে এবং যারা জীবজন্তু ও পুরুষদের সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়।
(কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৪৩৯৭৫)
৩। হযরতে সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, শীঘ্রই এ উম্মতদের মধ্যে এমন একদল লোক সৃষ্টি হবে,
যাদেরকে লুতিয়া বা সমকামী বলা হবে। এরা তিন ধরনের হয়ে থাকবে।
১। যারা আমরদ তথা সুদর্শন বালকদের দৈহিক গঠন দেখবে এবং তাদের সাথে কথা-বার্তা বলবে।
২। যারা তাদের সাথে করমর্দন ও কোলাকোলি করবে।
৩। যারা তাদের সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হবে। এরা সকলের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা তওবা করবে।
আল্লাহ তা’আলা তাদের তওবা কবুল করবেন এবং তারা লানত হতে পরিত্রান লাভ করবে।
(ঐ, হাদীস নং-১৩১২৯)
সমকামিতার শরয়ী শাস্তি
১। হযরতে সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
তোমরা যাকে লুত জাতির আমল করতে দেখবে, তাহলে যে করবে এবং যার মাধ্যমে করবে উভয়কে হত্যা করো।
(মুস্তাদরাক, হাদীস ন্ং-৮১১৩)
২। হযরতে সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সমকামীদের শাস্তির ক্ষেত্রে বলেছেন, তাদেরকে এলাকার কোন সুউচ্চ দেয়ালের
উপর থেকে নিচে ফেলে দিয়ে তারপর পাথর নিক্ষেপ করে তাদেরকে হত্যা করতে হবে।
যেমনিভাবে লুত আলাইহিস সালাম এর সম্প্রদায়ের প্রতি করা হয়েছিল।
৩। হযরতে সায়্যিদুনা খালিদ বিন ওয়ালিদ হযরতে সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু এর নিকট চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছিলেন যে,
আমি এখানে এমন এক ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছি, যে নিজকে স্বেচ্ছায় অন্যান্যদের কে ভোগ করতে দেয়।
হযরতে সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু এ ব্যপারে সাহাবায়ে কিরামদের নিকট পরামর্শ চাইলেন। হযরতে সায়্যিদুনা আলী রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু বললেন, নিঃসন্দেহে এটা এমন এক ধরনের গুনাহ যা শুধুমাত্র একটি জাতি তথা লুত জাতি করেছিল,
নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সে জাতিকে কি শাস্তি দিয়েছিলেন। সুতরাং আমার পরামর্শ হল, তাকে জ্বালিয়ে ফেলা হোক। অতঃপর হযরত আবু বকর রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ কে লিখেছিলেন, যেন তাকে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ হযরতে সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু এর নির্দেশ মোতাবেক তাকে আগুনে জ্বালিয়ে ফেললেন।
(কিতাবুল কবায়ের, পৃ.৬৬)


সমকামীদের পরলৌকিক শাস্তি

১। হযরতে সায়্যিদুনা আলী রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অপর ব্যক্তিকে নিজ দেহ ভোগ করতে দেয়, এমনকি অপর ব্যক্তিও সে কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে আল্লাহ তাআলা তাকে নারীর নয়গুন যৌন ক্ষুধা দিয়ে লিপ্ত করে দেবেন
এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা কবরে শয়তানকে তার পাশে রাখবেন। (ঐ)
২। হযরতে সায়্যিদুনা ওকি রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি লুত জাতির আমল করে মৃত্যুবরণ করবে, দাফনের পর তাকে লুত জাতির কবরস্থানে স্থানান্তরিত করা হবে এবং তার হাশরও তাদের সাথে করা হবে।
(কানযুল উম্মাল, ৫/১৩৫)
৩। বর্ণিত আছে যে, হযরতে সায়্যিদুনা ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর কোন এক ভ্রমণকালে কোন এক আগুনের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছিলেন, যে আগুন কোন ব্যক্তির উপর জ্বলছিল। তিনি সে আগুন নেভানোর জন্য তাতে পানি ঢাললেন।
তিনি দেখতে পেলেন হঠাৎ সে আগুন একজন বালকের রূপ ধারন করে ফেলল। এবং সে লোকটি আগুন হয়ে গেল। এ দৃশ্য দেখে তিনি খুবই অবাক হয়ে পড়লেন  এবং তিনি আল্লাহ তাআলার দরবারে ফরিয়াদ করলেন,
হে আমার প্রভু! আপনি তারা উভয়কে তাদের পার্থিব অবস্থায় ফিরিয়ে দিন যাতে আমি তাদের কে তাদের ব্যাপার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পারি। অতঃপর আল্লাহ তাদের উভয়কে জীবিত করে দিলেন। তিনি দেখতে পেলেন, তারা একজন পুরুষ ও একজন বালক।
তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের উভয়ের ব্যাপারটা কি? পুরুষটি জবাব দিল, হে রূহুল্লাহ! আমি ুদনিয়াতে এ বালকটির ভালবাসায় বন্দী হয়ে পড়েছিলাম। রিপুর তাড়না আমাকে এই বালকটির সাথে অবৈধকাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করেছিল,
ফলে আমি তার সাথে অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলাম। অতঃপর আমরা যখন মৃত্যু বরণ করলাম, তখন এই বালকটি আগুন হয়ে আমাকে দহন করছে এবং আমিও আগুন হয়ে তাকে দহন করছি। আমাদের এ শাস্তি ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকব্
(কিতাবুল কাবায়ের, পৃ.৬৬)
হস্তমৈথুন করা
এ কাজও শরীআত কর্তৃক কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও শরীআতের নিকট খুবই অপছন্দনীয়। সারওয়ারে আলম, নূরে মুজাসসাম (নূরের দেহ বিশিষ্ট),
শাহে বনী আদম صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
যে ব্যক্তি হস্তমৈথুন করবে সে অভিশপ্ত।
(ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ, ১০ খন্ড, পৃ.৮০)
মুফতী শাহ আহমদ রযা খাঁন রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সুবিশাল (ওজন ৪০ কেজি) ফতোয়ার গ্রন্থে হস্ত মৈথুন সম্পর্কে লিখেছেন, এ কাজ অপবিত্র, হারাম ও নাজায়িয।
(ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ, ১০ খন্ড, পৃ.৮০)
রসূল صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে হস্ত মৈথুন কারীর কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।
১। আল্লামা শামশুদ্দিন যাহবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, রহমতে আলম صلي الله عليه وسلم সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সাত প্রকারের লোকের প্রতি আল্লাহ লানত প্রদান করেছেন,
কিয়ামত দিবসে তিনি তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিও নিবদ্ধ করবেন না এবং তিনি তাদেরকে বলবেন, তোমরা জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করো, যদি তারা তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে।
সে সাত প্রকারের লোক হল- ১। অবৈধ কাজে লিপ্ত ব্যক্তি ২। জীবজন্তুর সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত ব্যক্তি
৩। মা ও মেয়েকে এক সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধকারী ব্যক্তি ৪। হস্তমৈথুন কারী ব্যক্তি
(কিতাবুল কবায়ের, পৃ.৬৩)
(বাকি তিনটি যে বইটি থেকে টাইপ করছি সেটাতে মিস টাইপিং-এডমিন)
২। আল্লামা মাহমুদ আলুসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর তাফসির রুহুল মায়ানীতে লিখেছেন, হযরতে সায়্যিদুনা আতা রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি শুনেছি কিয়ামত দিবসে একদল লোককে হাশরের ময়দানে এমন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে যে,
তাদের হস্ত সমূহ গর্ভবতী থাকবে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় তারা হবে সে সমস্ত লোক যারা নিজ হস্তে গোসল ওয়াজিব করতো অর্থাৎ হস্ত মৈথুন করত।
তিনি আরো লিখেছেন, হযরতে সায়্যিদুনা সাঈদ বিন জুবায়ের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা এমন এক সম্প্রদায়কে আজাবে লিপ্ত করিয়েছেন, যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে অবৈধ পন্থায় ব্যবহার করেছিল।
(রুহুল মায়ানী, সূরা আল মুমিনুন, আয়াত-০৩)
গুনাহের এ ধ্বংসাত্মক সয়লাব, নগ্নতা, অশ্লীলতা  ও উলঙ্গপনার এ প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড়ের বিকাশ ঘটে সহশিক্ষা, জীবনযাত্রার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও সংমিশ্রন, টি.ভি, ভি.সি.আর ইত্যাদিতে
ফ্লিম, নাটক, সিনেমা ইত্যাদির যৌন উত্তেজনামূলক দৃশ্যাবলী পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন সাময়িকীর যৌন নিবেদন মূলক প্রবন্ধ ইত্যাদি থেকে। যা বর্তমান যুগের যুবকদের দেউলিয়াতে পরিণত করেছে। আরবীতে প্রবাদ আছে الشباب شعبة من الجنون
অর্থাৎ যৌবনকাল পাগলামীর একটি স্তর।
বর্তমান যুগের যুবকদের জন্য শয়তান তার বেষ্টনী এতই উন্মুক্ত করে দিয়েছে যে, প্রকাশ্যভাবে সে যত বড় নামাযী কিংবা সুন্নাতের অনুসারীই হোক না কেন, সে তার যৌন তৃপ্তি মেটানোর জন্য কিংবা শাহওয়াতের প্রশান্তির জন্য পাগলপ্রায় হয়ে ঘুরছে।
তার পরিবার সামাজিক গলৎ রসম ও রেওয়াজের বশীভুত হয়ে তার বিবাহের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উপর পরীক্ষার উপর পরীক্ষা চলছে। কিন্তু এ মহা পরীক্ষাতে ঘাবড়ালে চলবেনা। এবং ঘাবড়ানো কোন পুরুষের স্বভাবও নয়।
ধৈর্য্যধারণ করে সাওয়াব অর্জন করা চাই। যৌন উত্তেজনা যতই তীব্র আকার ধারণ করুক না কেন, ধৈর্য্যও ততবেশী ধারণ করে সাওয়াবও বেশী বেশী অর্জন করতে হবে।
আর যদি যৌন উত্তেজনাতে পরাস্ত হয়ে তা মেটানোর জন্য অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা হয়, তাহলে উভয় জাহানে ক্ষতি ছাড়া আর কিছু নেই এবং তার জন্য জাহান্নামই অবধারিত। হযরতে সায়্যিদুনা আবু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
“ক্ষনিকের জন্য শাহওয়াতের অনুসরন দীর্ঘ অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়”।
এ লিখাটি লিখার সময় কলিকলিজা কম্পন করে, আর লজ্জায় হাত থেকে কলম পড়ে যায়। কিন্তু আমার এ আবেদন নিবেদন সমূহকে অশালীনতা ও উলঙ্গপনা বলা যাবে না। বরং ইহা মূলত: শালীনতারই শিক্ষা।  “আল্লাহ অবশ্যই দেখছেন” এ বিশ্বাস থাকার পরও যে সমস্ত লোক তাদের ফাসেদ ধারনা মতে গোপনে নির্লজ্জতার কাজ করে, আমার এ লিখা তাদের জন্য লজ্জার পয়গাম স্বরূপ। হায়! ঘুনে ধরা মস্তিষ্কের অধিকারী কতিপয় যুবক যুবতী, বিবাহের রাস্তা বন্ধ দেখে নিজেদের হাত দ্বারা স্বীয় যৌবনকে
 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. Peace Way - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger