Bismillahir Rahmanir Rahim :
শির্কের পরিণতি ও ভয়াবহতা ৷
-------------------------
শির্ক তাওহীদের বিপরীত। ইসলাম যে সব মূলনীতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে, তাওহীদ বা একত্ববাদই হচ্ছে তার মূলসার। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলাকে ইবাদাতের (উলুহিয়াত) ক্ষেত্রে, সৃষ্ট বিষয়ক ও সবকিছু নিয়ন্ত্রণের (রবুবিয়াত) ক্ষেত্রে, নাম ও বিশেষণের (আসমা ওয়াসসিফাত) ক্ষেত্রে কোনও অংশীদার ছাড়াই এক ও একক বিশ্বাস করাকেই তাওহীদ বলে। প্রতিপালন, আইন, বিধান ও ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও একচ্ছত্র অধিকারে কাউকে শরীক করা বা অংশীদার বানানোই হচ্ছে শির্ক। ইসলামী জীবন বিধানের প্রতিটি অনু-পরমাণু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসলামে এমন কোনো নিয়মনীতি নেই, যেখানে এই শির্কের সামান্য গন্ধও খুঁজে পাওয়া যাবে। ইসলামে শির্ক হচ্ছে একটি ভয়াবহ কবিরা গুনাহ।

আমাদের সমাজের অনেক আলিম ও বিদ্বানগণও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, না বুঝে, অলক্ষ্যে কিংবা আধুনিক ইসলামের প্রবক্তা সেজে মুসলিমদের আকীদা বিশ্বাসের মূল সার- এই তাওহীদকে উপেক্ষা করে শির্কে নিমজ্জিত হচ্ছেন।
মহান আল্লাহর ভাষায়-
﴿ وَمَا يُؤۡمِنُ أَكۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ ١٠٦ ﴾ [يوسف: ١٠٦]
অনেক মানুষ আল্লাহর উপর ঈমান আনার পরও তারা মুশরিক।
তাওহীদ ও শির্ক পরস্পরে সাংঘর্ষিক। যে তাওহীদ লালন করবে, সে একত্ববাদী মুসলিম। আর যে শির্ক চর্চা করবে সে মুশরিক। মুসলিম বলে দাবী করার তার কোনো অধিকার নেই।
শির্কের পাপটি জঘণ্য পাপ। যারা এই পাপের ধুম্রজালে জড়িয়ে যায়, তারা মহান আল্লাহর ক্ষমা থেকে চিরতরে বঞ্চিত হয়।
মহান আল্লাহ বলেন-
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨ ﴾ [النساء: ٤٨]
‘‘যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক বানায়, আল্লাহ নিঃসন্দেহে তাকে ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া যাকে তিনি চান ক্ষমা করবেন।’’
শির্ক সকল ভাল আমলকে ধ্বংস করে দেয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ ﴾ [الزمر: ٦٥]
‘‘আপনার ও আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর সাথে শির্ক করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন বলে গণ্য হবেন।’’

শির্ক জাহান্নামকে অনিবার্য করে ৷বলেন
আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢ ﴾ [المائ‍دة: ٧٢]
‘‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করেছেন; তার বাসস্থান হচ্ছে জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’’ যারা শির্ক চর্চা করে, তাদের রক্ত মুসলিমদের জন্য হালাল, হত্যাযোগ্য।
আল্লাহর ভাষায় ,
﴿ فَٱقۡتُلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَيۡثُ وَجَدتُّمُوهُمۡ وَخُذُوهُمۡ وَٱحۡصُرُوهُمۡ وَٱقۡعُدُواْ لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٖۚ ٥ ﴾ [التوبة: ٥]
‘‘অতঃপর শির্ককারীদের যেখানে পাবে তাদেরকে হত্যা কর, তাদেরকে পাকড়াও কর ও অবরুদ্ধ কর। আর তাদের ঘাটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎপেতে বসে থাকো।’’
শির্ক একটি বড় গুনাহ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
عن أبى هريرة رضى الله عنه إن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: اجتنبوا الموبقات.... الإشراك بالله...
ধ্বংসকারী বিষয়গুলো হতে বেঁচে থাক, আর তা হচ্ছে, আল্লাহর সাথে শির্ক করা।...
সুতরাং শির্ক অত্যন্ত জঘন্য। মুসলিম জীবনের কোনো অংশে এই শির্ক অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই। প্রতিটি মুসলিমের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ঈমান। আর এই ঈমান বিধ্বংসী শির্ক হতে বেঁচে থাকা হচ্ছে তার ঈমানের অনিবার্য দাবী। আমরা অনেকেই এই শির্কে লক্ষ্যে অলক্ষ্যে নিমজ্জিত হই। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় এর প্রবল স্রোতে ভেসে যাই। ভয়াল বিভীষিকাময় এই শির্ক থেকে বেঁচে থাকার জন্য শির্ক সম্পর্কে জানা খুবই প্রয়োজন।
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. Peace Way - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger