Bismillahir Rahmanir Rahim :
Recent Post

পুরুষ ও মহিলার ছালাতের পার্থক্য করা :

পুরুষ ও মহিলার ছালাতের পার্থক্য করা :

বিভিন্ন ছালাত শিক্ষা বইয়ে পুরুষ ও মহিলাদের ছালাতের মাঝে অনেক পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। অথচ ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খান লিখেছেন, ‘তাকবীরে তাহরীমা বলে পুরুষরা নাভীর নীচে এবং মহিলারা সীনার ওপর হাত বেঁধে দাঁড়াবে’।[1] কিন্তু এর প্রমাণে কোন দলীল উল্লেখ করেননি। অনুরূপভাবে মারকাযুদ দাওয়াহ, ঢাকা-এর শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মালেক কয়েকটি পার্থক্য তুলে ধরেছেন।[2] অতঃপর তিনি অনেকগুলো জাল ও যঈফ বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মহিলারা বুকের উপর আর পুরুষরা নাভীর নীচে হাত বাঁধবে মর্মে কোন জাল বর্ণনাও উল্লেখ করতে পারেননি।[3] যদিও তিনি এক স্থানে আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভীর কথা দ্বারা পার্থক্য করতে চেয়েছেন। কিন্তু তার পক্ষে কোন ভুয়া দলীলও উল্লেখ করেননি। প্রশ্ন হড়, তিনি কোন্ দলীলের আলোকে উক্ত পার্থক্য করেছেন?

নারী-পুরুষের ছালাতের পার্থক্যের ব্যাপারে যে সমস্ত বর্ণনা পেশ করা হয় তার কয়েকটি নিম্নে পেশ করা হল-

عَنْ يَزِيْدَ بْنِ أَبِىْ حَبِيْبٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  مَرَّ عَلَى امْرَأَتَيْنِ تُصَلِّيَانِ فَقَالَ إِذَا سَجَدْتُمَا فَضُمَّا بَعْضَ اللَّحْمِ إِلَى الأَرْضِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ لَيْسَتْ فِى ذَلِكَ كَالرَّجُلِ.

ইয়াযীদ ইবনু আবী হাবীব বলেন, দু’জন মহিলা ছালাত রত অবস্থায় রাসূল (ছাঃ) তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, সিজদার সময় তোমরা শরীরের কিছু অংশ মাটির সাথে ঠেকিয়ে দাও। কারণ মহিলাদের সিজদা পুরুষদের মত নয়।[4]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[5] উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে ইমাম বায়হাক্বী নিজেই বলেছেন, ‘এই বিষয়ে দুইটি মারফূ‘ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোনটিই নির্ভরযোগ্য নয়’।[6]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  إِذَا جَلَسَتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى وَإِذَا سَجَدَتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِىْ فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُوْنُ لَهَا وَإِنَّ اللهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُوْلُ يَا مَلاَئِكَتِىْ أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا.

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মহিলা যখন ছালাতে বসবে তখন সে তার এক উরুর সাথে অন্য উরু লাগিয়ে রাখবে এবং যখন সিজদা দিবে তখন তার পেট দুই উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। যেন তা তার জন্য পর্দা স্বরূপ হয়। আর তখন আল্লাহ তা‘আলা  তা লক্ষ্য করেন এবং ফেরেশতাদেরকে ডেকে বলেন, তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।[7]

তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা যঈফ। ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে তিনি নিজেই যঈফ বলেছেন ও প্রত্যাখ্যান করেছেন।[8] কিন্তু মাওলানা আব্দুল মালেক তা গোপন করেছেন। তিনি বায়হাক্বী থেকে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন, কিন্তু বায়হাক্বীর মন্তব্যটা পাঠকদের জানাননি। এটা কেমন ইনছাফ?

عَنْ وَائِلِ بن حُجْرٍ قَالَ جِئْتُ النَّبِيَّ  فَقَالَ هَذَا وَائِلُ بن حُجْرٍ جَاءَكُمْ لَمْ يَجِئْكُمْ رَغْبَةً وَلا رَهْبَةً جَاءَ حُبًّا لِلَّهِ وَلِرَسُولِهِ...فَقَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ  يَا وَائِلُ بن حُجْرٍ إِذَا صَلَّيْتَ فَاجْعَلْ يَدَيْكَ حِذَاءَ أُذُنَيْكَ وَالْمَرْأَةُ تَجْعَلُ يَدَيْهَا حِذَاءَ ثَدْيَيْهَا.

ওয়ায়েল বিন হুজুর (রাঃ) বলেন, আমি একদা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসলাম। তিনি ছাহাবীদেরকে বললেন, এটা হল ওয়ায়েল বিন হুজুর। সে তোমাদের কাছে উৎসাহে বা ভীতির কারণে আসেনি; বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর ভালবাসার কারণে এসেছে।.. ওয়ায়েল (রাঃ) বলেন, তিনি আমাকে বললেন, তুমি যখন ছালাত আদায় করবে তখন তোমার হাত দুই কান বরাবর উঠাবে। আর মহিলা মুছল্লী তার হাত বুক বরাবর উঠাবে।[9]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি নিতান্তই যঈফ। এর সনদে মায়মূনাহ বিনতে হুজর এবং উম্মু ইয়াহইয়া বিনতে আব্দুল জাববার নামে দুইজন অপরিচিত রাবী আছে।[10]

উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে কতিপয় ছাহাবী ও তাবেঈর নামে আরো কিছু বর্ণনা উল্লেখ করা হয়। তবে সবই মুনকার ও ভিত্তিহীন। সেগুলোর দিকে ভ্রুক্ষেপ করার কোন প্রয়োজন নেই।[11]

মূলতঃ ছালাতের ক্ষেত্রে শরী‘আত পুরুষ ও মহিলার মাঝে কোন পার্থক্য করেনি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে ছালাত আদায় করতে দেখছ, সেভাবেই ছালাত আদায় কর’।[12] তিনি নারী ও পুরুষের জন্য দু’বার দু’ভাবে ছালাত আদায় করেননি। বিশিষ্ট তাবেঈ ইবরাহীম নাখঈ (রহঃ) বলেন, ‘পুরুষেরা ছালাতে যা করে নারীরাও তাই করবে’।[13] তবে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। যেমন- (১) মহিলা ইমাম মহিলাদের প্রথম কাতারের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে।[14] (২) ইমাম কোন ভুল করলে মহিলা মুক্তাদীরা হাতে হাত মেরে আওয়ায করবে।[15] (৩) প্রাপ্ত বয়স্কা মহিলারা বড় চাদর দিয়ে পুরা দেহ না ঢাকলে তাদের ছালাত হবে না।[16] পুরুষের জন্য টাখনুর উপরে কাপড় থাকতে হবে।[17] কিন্তু মহিলাগণ টাখনু ঢাকতে পারেন।[18] এগুলো ছালাতের পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নয়।  এ জন্য আলবানী বলেন, وَلاَ أَعْلَمُ حَدِيْثاً صَحِيْحاً فِى التَّفْرِيْقِ بَيْنَ صَلاَةِ الرَّجُلِ وَصَلاَةِ الْمَرْأَةِ وَإِنَّمَا هُوَ الرَّأْىُ وَالْاِجْتِهَادُ  ‘পুরুষ ও মহিলার ছালাতের পার্থক্য সম্পর্কে আমি কোন ছহীহ হাদীছ জানতে পারিনি। এটা ব্যক্তি রায় ও ইজতিহাদ মাত্র।[19]

[1]. তালীমুস-সালাত, পৃঃ ৩১। [2]. নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৬, পরিশিষ্ট-২। [3]. দেখুনঃ ঐ, পৃঃ ৩৭৫-৩৯৭। [4]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩৩২৫। [5]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৬৫২। [6]. وروي ذلك في حديثين موصولين غير قويين বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১০৫০। [7]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩৩২৪; নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৭-৩৭৮। [8]. সুনানুল কুবরা হা/৩৩২৪ - قَالَ أَبُو أَحْمَدَ : أَبُو مُطِيعٍ بَيِّنُ الضَّعْفِ فِى أَحَادِيثِهِ وَعَامَّةُ مَا يَرْوِيهِ لاَ يُتَابَعُ عَلَيْهِ قَالَ الشَّيْخُ رَحِمَهُ اللهُ وَقَدْ ضَعَّفَهُ يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ وَغَيْرُهُ وَكَذَلِكَ عَطَاءُ بْنُ عَجْلاَنَ ضَعِيفٌ.। [9]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/১৭৪৯৭; নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৯। [10]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৫০০। [11]. নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৯-৩৮৮। [12]. বুখারী হা/৬৩১, ১/৮৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬০৩, ২/৫২ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, ‘মুসাফিরদেও জন্য আযান যখন তারা জামা‘আত করবে’-১৮; মিশকাত হা/৬৮৩, পৃঃ ৬৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩২, ২/২০৮ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘সংশ্লিষ্ট আযান’ অনুচ্ছেদ। [13]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ১/৭৫ পৃঃ, সনদ ছহীহ। [14]. বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান হা/১৬২১; সুনানুল কুবরা হা/৫৫৬৩; আওনুল মা‘বূদ ২/২১২ পৃঃ; আবুদাঊদ, দারাকুৎনী, ইরওয়া হা/৪৯৩ - عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّهَا أَمَّتْهُنَّ فَقَامَتْ وَسَطًا। [15]. বুখারী হা/১২০৩, ‘ছালাতের মধ্য অন্যান্য কর্ম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫; মুসলিম হা/৭৮২; মিশকাত হা/৯৮৮, পৃঃ ৯১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯২৪, ৩/১৪ পৃঃ ‘ছালাতের মধ্য যে সমস্ত কর্ম বৈধ নয়’ অনুচ্ছেদ-৫। [16]. আবুদাঊদ হা/৬৪১, ১/৯৪ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩৭৭; মিশকাত হা/৭৬২-৬৩, পৃঃ, ৭৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭০৬, ২/২৪০ পৃঃ, ‘সতর’ অনুচ্ছেদ। [17]. আবুদাঊদ হা/৬৩৭, ১/৯৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৪৩৩১, পৃঃ ৩৭৪, ‘পোশাক’ অধ্যায়। [18]. তিরমিযী হা/১৭৩১; আবুদাঊদ হা/৪১১৭; মিশকাত হা/৪৩৩৪-৩৫, পৃঃ ৩৭৪, ‘পোশাক’ অধ্যায়। [19]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৫০০-এর আলোচনা দ্রঃ।

সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ-১

____________________________________
মহান আল্লাহ মানুষকে এ
পৃথিবীতে খিলাফতের এক সুন্দর দায়িত্ব
দিয়ে পাঠিয়েছেন। আদম আলাইহিস
সালাম ও তার সন্তানাদিকে সর্বপ্রথম এ
দায়িত্ব দেয়া হয়। আদম আলাইহিস
সালামের সন্তান হাবিলের কুরবানী কবুল
হওয়া সম্পর্কে মহান আল্লাহ
ঘোষণা করেন:
﴿ ﺎَﻤَّﻧِﺇ ُﻞَّﺒَﻘَﺘَﻳ ُﻪَّﻠﻟﭐ َﻦﻴِﻘَّﺘُﻤۡﻟﭐ َﻦِﻣ
٢٧ ﴾ ‏[:ﺓﺪﺋﺎﻤﻟﺍ ٢٧ ‏]
নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের নিকট
হতেই (সৎকর্ম) কেবল গ্রহণ করেন।[1]
মূলত: মানুষকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ
হতে বারণ করার এক মহান দায়িত্ব
দিয়ে সৃষ্টির শুরু হতে শুরু করে সর্বশেষ
নবী ও রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতদেরও
প্রেরণ করা হয়েছে। তাই তো পবিত্র
কুরআন সাধারণভাবে সকল উম্মতের অন্যতম
দায়িত্ব ঘোষণা দিয়ে বলেছে:
ۡﻢُﺘﻨُﻛ﴿ َﺮۡﻴَﺧ ۡﺖَﺟِﺮۡﺧُﺃ ٍﺔَّﻣُﺃ ِﺱﺎَّﻨﻠِﻟ
َﻥﻭُﺮُﻣۡﺄَﺗ ِﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ َﻥۡﻮَﻬۡﻨَﺗَﻭ ِﻦَﻋ
ِﺮَﻜﻨُﻤۡﻟﭐ ﴾ ‏[ ﻝﺍ :ﻥﺍﺮﻤﻋ ١١٠ ‏]
‘‘তোমরা সর্বোত্তম জাতি, তোমদের
সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের
জন্য। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের
আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ
হতে নিষেধ করবে। আর আল্লাহর উপর
ঈমান আনয়ন
করবে।” [সূরা আলে ইমরান: ১১০]
অতএব আলোচ্য আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়
যে, এ মহান দায়িত্বটি আঞ্জাম দেয়ার
মাঝে মানুষের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
যুগে যুগে এ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-
রাসূলের আগমন ঘটেছে। আল্লাহ
তা‘আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেই
ক্ষান্ত হন নি; বরং তাদের হেদায়াতের
জন্য প্রেরণ করেছেন কালের পরিক্রমায়
বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য নবী ও রাসূলকে।
যাঁরা স্ব-স্ব জাতিকে সৎ ও কল্যাণকর
কাজের প্রতি উৎসাহ যুগিয়েছেন এবং অসৎ
ও অকল্যাণকর কাজ হতে নিষেধ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:
ۡﺪَﻘَﻟَﻭ﴿ ﺎَﻨۡﺜَﻌَﺑ ﻲِﻓ ِّﻞُﻛ ٖﺔَّﻣُﺃ ﺎًﻟﻮُﺳَّﺭ
ِﻥَﺃ ْﺍﻭُﺪُﺒۡﻋﭐ َﻪَّﻠﻟﭐ ْﺍﻮُﺒِﻨَﺘۡﺟﭐَﻭ
﴾َۖﺕﻮُﻐَّٰﻄﻟﭐ ‏[ ٣٦:ﻞﺤﻨﻟﺍ ‏]
‘‘নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট
রাসুল প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে,
তারা আল্লাহর ইবাদত
করবে এবং তাগুতকে পরিত্যাগ
করবে” [2] ।
এখানে তাগুত
বলতে আল্লাহবিরোধী শক্তি, শয়তান,
কুপ্রবৃত্তি এক কথায় এমন সব
কার্যাবলীকে বুঝানো হয়েছে যা সুপ্রবৃত্তি
দ্বারা সম্পন্ন হয় না এবং আল্লাহর
আনুগত্যের পথে বাধা হয়।
আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও একই
উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়েছে।
তাঁকে হেদায়াতের মশাল
হিসেবে যে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন প্রদান
করা হয়েছে তার এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য
হলো, মানুষকে অন্ধকার থেকে আল্লাহর
দিকে আহ্বান করা,
গোমরাহী থেকে হেদায়াতের দিকে,
কুফরীর অন্ধকার হতে ঈমানের আলোর
দিকে আহ্বান জানানো। আল্লাহ
তা‘আলা এ প্রসঙ্গে বলেন,
﴿ ۚﺮٓﻟﺍ ٌﺐَٰﺘِﻛ َﻚۡﻴَﻟِﺇ ُﻪَٰﻨۡﻟَﺰﻧَﺃ َﺝِﺮۡﺨُﺘِﻟ
َﺱﺎَّﻨﻟﭐ ِﺖَٰﻤُﻠُّﻈﻟﭐ َﻦِﻣ ﻰَﻟِﺇ ِﺭﻮُّﻨﻟﭐ
ِﻥۡﺫِﺈِﺑ ۡﻢِﻬِّﺑَﺭ ٰﻰَﻟِﺇ ﺰﻳﺰﻌﻟﺍ ﻁﺍﺮﺻ
ﺪﻴِﻤَﺤﻟﺍ ١ ﴾ ‏[ :ﻢﻴﻫﺍﺮﺑﺍ ١ ‏]
‘‘আলিফ-লাম-রা, এ হচ্ছে কিতাব,
আমরা তোমার প্রতি তা নাযিল
করেছি, যাতে তুমি মানুষকে তাদের
রবের অনুমতিক্রমে অন্ধকার
থেকে বের করে আলোর
দিকে ধাবিত করতে পার, এমন
পথে যা প্রবলপরাক্রমশালী,
প্রশংসিতের।’’[3]
এ প্রথিবীতে মানুষের যাবতীয়
কর্মকে যদি শ্রেণীবিন্যাস করা হয়
তাহলে তা হবে ক) সৎকাজ (খ) অসৎকাজ।
আর আখেরাতে এ দু’শ্রেণীর কাজের
জবাবদিহি ও প্রতিদানস্বরূপ জান্নাত ও
জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। মহান আল্লাহ
বলেন:
﴿ ﻦَﻤَﻓ َﻝﺎَﻘۡﺜِﻣ ۡﻞَﻤۡﻌَﻳ ٍﺓَّﺭَﺫ ﺍٗﺮۡﻴَﺧ
ۥُﻩَﺮَﻳ ٧ ۡﻞَﻤۡﻌَﻳ ﻦَﻣَﻭ َﻝﺎَﻘۡﺜِﻣ ٖﺓَّﺭَﺫ ﺍّٗﺮَﺷ
ۥُﻩَﺮَﻳ ﴾٨ ‏[:ﺔﻟﺰﻟﺰﻟﺍ ،٧ ٨ ‏]
‘‘যে অনু পরিমাণ ভাল করবে সে তার
প্রতিদান পাবে আর যে অনু পরিমাণ
খারাপ কাজ করবে সেও তার
প্রতিদান পাবে।’’[4]
অতএব প্রতিদান দিবসে সৎকাজের গুরুত্ব
অত্যাধিক। ফলে প্রত্যেকের উচিত সৎকাজ
বেশী বেশী করা এবং অসৎ কাজ
হতে বিরত থাকা।
কুরআনের অন্যত্র মহান আল্লাহ মানুষের এসব
কাজ সংরক্ষণ করা সম্পর্কে বলেছেন:
﴿ َﻦﻴِﺒِﺘَٰﻛ ﺎٗﻣﺍَﺮِﻛ ١١ َﻥﻮُﻤَﻠۡﻌَﻳ ﺎَﻣ
َﻥﻮُﻠَﻌۡﻔَﺗ ١٢ َﺭﺍَﺮۡﺑَﺄۡﻟﭐ َّﻥِﺇ ﻲِﻔَﻟ
ٖﻢﻴِﻌَﻧ ١٣ َﺭﺎَّﺠُﻔۡﻟﭐ َّﻥِﺇَﻭ ﻲِﻔَﻟ ٖﻢﻴِﺤَﺟ
ﺎَﻬَﻧۡﻮَﻠۡﺼَﻳ ١٤ َﻡۡﻮَﻳ ِﻦﻳِّﺪﻟﭐ ١٥ ﺎَﻣَﻭ
ۡﻢُﻫ َﻦﻴِﺒِﺋٓﺎَﻐِﺑ ﺎَﻬۡﻨَﻋ ١٦ ٓﺎَﻣَﻭ َﻚٰﻯَﺭۡﺩَﺃ
ﺎَﻣ ُﻡۡﻮَﻳ ِﻦﻳِّﺪﻟﭐ ١٧ َّﻢُﺛ ٓﺎَﻣ َﻚٰﻯَﺭۡﺩَﺃ
ﺎَﻣ ُﻡۡﻮَﻳ ِﻦﻳِّﺪﻟﭐ ١٨ َﻡۡﻮَﻳ ﺎَﻟ ُﻚِﻠۡﻤَﺗ
ٞﺲۡﻔَﻧ ٖﺲۡﻔَﻨِّﻟ ُﺮۡﻣَﺄۡﻟﭐَﻭ ۖﺎٗٔۡﻴَﺷ ٖﺬِﺌَﻣۡﻮَﻳ
ِﻪَّﻠِّﻟ ١٩ ﴾ ‏[:ﺭﺎﻄﻔﻧﻻﺍ -١١ ١٩ ‏]
‘‘সম্মানিত লেখকবৃন্দ,
তারা জানে তোমরা যা কর, নিশ্চয়
সৎকর্মপরায়ণরা থাকবে খুব
স্বাচ্ছন্দে, আর
অন্যায়কারীরা থাকবে প্রজ্বলিত
আগুনে, তারা সেখানে প্রবেশ
করবে প্রতিদান দিবসে, আর
তারা সেখান থেকে অনুপস্থিত
থাকতে পারবে না, আর
কিসে তোমাকে জানাবে প্রতিদান
দিবস কী? তারপর
বলছি কিসে তোমাকে জানাবে
প্রতিদান দিবস কী? সেদিন
কোনো মানুষ অন্য মানুষের জন্য
কোনো ক্ষমতা রাখবে না, আর
সেদিন সকল বিষয় হবে আল্লাহর
কর্তৃত্বে।’’[5]
পৃথিবীতে মানুষ ধোঁকা প্রবণ, দুনিয়ার
চাকচিক্য ও মোহে পড়ে অনন্ত অসীম দয়ালু
আল্লাহর কথা স্মরণ
থেকে ভুলে যেতে পারে।
সেজন্যে প্রত্যেক সৎ কর্মপরায়ণের উচিৎ
পরস্পর পরস্পরকে সদুপদেশ দেয়া,
সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করা এবং অসৎ
কাজে নিষেধ করা। মহান আল্লাহ ধমক
দিয়ে বলেন-
﴿ َٰٓﻱ ُﻦَٰﺴﻧِﺈۡﻟﭐ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ﺎَﻣ َﻚِّﺑَﺮِﺑ َﻙَّﺮَﻏ
ِﻢﻳِﺮَﻜۡﻟﭐ ٦ ﴾ ‏[:ﺭﺎﻄﻔﻧﻻﺍ ٦ ]
‘‘হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার
মহান রব
সম্পর্কে ধোঁকা দিয়েছে?”[6]
শুধু ধমক দিয়েই ক্ষ্যান্ত হন নি;
বরং পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের
ভয়াবহ শান্তি হতে বাঁচিয়ে রাখারও
নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূরা আত-
তাহরীমে এসেছে-
﴿ ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ ْﺍﻮُﻨَﻣﺍَﺀ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ْﺍٓﻮُﻗ
ۡﻢُﻜﻴِﻠۡﻫَﺃَﻭ ۡﻢُﻜَﺴُﻔﻧَﺃ ﺎَﻫُﺩﻮُﻗَﻭ ﺍٗﺭﺎَﻧ
ُﺱﺎَّﻨﻟﭐ ﺎَﻬۡﻴَﻠَﻋ ُﺓَﺭﺎَﺠِﺤۡﻟﭐَﻭ ٌﺔَﻜِﺌَٰٓﻠَﻣ
ٞﻅﺎَﻠِﻏ ٞﺩﺍَﺪِﺷ ﺎَّﻟ َﻥﻮُﺼۡﻌَﻳ َﻪَّﻠﻟﭐ ٓﺎَﻣ
َﻥﻮُﻠَﻌۡﻔَﻳَﻭ ۡﻢُﻫَﺮَﻣَﺃ ﺎَﻣ َﻥﻭُﺮَﻣۡﺆُﻳ ٦
﴾ ‏[ :ﻢﻳﺮﺤﺘﻟﺍ ٦ ‏]
‘‘হে ঈমানদারগণ!
তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের
পরিবার পরিজনকে আগুন
হতে বাঁচাও, যার
জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর;
যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর
ফেরেশ্তাকূল, যারা আল্লাহ
তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন
সে ব্যাপারে অবাধ্য হয় না। আর
তারা তাই
করে যা তাদেরকে আদেশ
করা হয়।’’[7]
অতএব বলা যায় যে, বিভিন্নভাবে এ
পৃথিবীতে মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত।
আর তা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়
হলো পারস্পারিক সৎ ও কল্যাণকর
কাজে সহযোগিতা ও অসৎ এবং গুনাহের
কাজ বর্জন করা। এ মর্মে মহান আল্লাহ
বলেন:
﴿ ْﺍﻮُﻧَﻭﺎَﻌَﺗَﻭ ﻰَﻠَﻋ ٰۖﻯَﻮۡﻘَّﺘﻟﭐَﻭ ِّﺮِﺒۡﻟﭐ
ْﺍﻮُﻧَﻭﺎَﻌَﺗ ﺎَﻟَﻭ ﻰَﻠَﻋ ِﻢۡﺛِﺈۡﻟﭐ
ِۚﻥَٰﻭۡﺪُﻌۡﻟﭐَﻭ ﴾ ‏[ :ﺓﺪﺋﺎﻤﻟﺍ ٢ ]
‘‘তোমরা পূণ্য ও তাকওয়ার
কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর
এবং গুনাহ ও সীমালঙ্ঘণের
কাজে একে অপরকে সহযোগিতা
করো না।”[8]
সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম
পরস্পরের সাথে সাক্ষাত হলে এ
মহতি কাজটির কথা স্মরণ করে দিতেন।
সেজন্য তাদের কেউ কেউ অধিকাংশ সময়
মজলিশ হতে বিদায় বেলায় ও প্রথম
সাক্ষাতে সূরা আছর তেলাওয়াত করতেন
বলে কোনো কোনে বর্ণনায় এসেছে [9] ।
আল্লাহ বলেন-
﴿ ِﺮۡﺼَﻌۡﻟﭐَﻭ ١ َﻦَٰﺴﻧِﺈۡﻟﭐ َّﻥِﺇ ﻲِﻔَﻟ ٍﺮۡﺴُﺧ
٢ ﺎَّﻟِﺇ ْﺍﻮُﻨَﻣﺍَﺀ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ْﺍﻮُﻠِﻤَﻋَﻭ
ِﺖَٰﺤِﻠَّٰﺼﻟﭐ ِّﻖَﺤۡﻟﭑِﺑ ْﺍۡﻮَﺻﺍَﻮَﺗَﻭ
ْﺍۡﻮَﺻﺍَﻮَﺗَﻭ ِﺮۡﺒَّﺼﻟﭑِﺑ ٣ ﴾ ‏[ :ﺮﺼﻌﻟﺍ ،١
٣]
‘‘সময়ের কসম, নিশ্চয় আজ মানুষ
ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত।
তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান
এনেছে, সৎকাজ করেছে,
পরস্পরকে সত্যের উপদেশ
দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের
উপদেশ দিয়েছে।”[10]
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ
হতে নিষেধ রাসূলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ গুণের
পথিকৃত ছিলেন। তিনি নবুওয়তের
পূর্বে অন্যায় অবিচার রুখতে হিলফুল
ফুযুলে অংশ নিয়েছেন। ছোট
বেলা থেকে মৌলিক মানবীয় সৎ
গুণাবলী তাঁর চরিত্রে ফুটে উঠায় আল-
আমিন, আল সাদিক উপাধিতে তিনি ভুষিত
ছিলেন। তাঁর গুণাবলীর
বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন-
ﻢُﻫُﺮُﻣۡﺄَﻳ﴿ ۡﻢُﻬٰﻯَﻬۡﻨَﻳَﻭ ِﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ ِﻦَﻋ
ِﺮَﻜﻨُﻤۡﻟﭐ ُّﻞِﺤُﻳَﻭ ِﺖَٰﺒِّﻴَّﻄﻟﭐ ُﻢُﻬَﻟ ُﻡِّﺮَﺤُﻳَﻭ
ُﻢِﻬۡﻴَﻠَﻋ َﺚِﺌَٰٓﺒَﺨۡﻟﭐ ۡﻢُﻬۡﻨَﻋ ُﻊَﻀَﻳَﻭ ۡﻢُﻫَﺮۡﺻِﺇ
َﻞَٰﻠۡﻏَﺄۡﻟﭐَﻭ ۡﺖَﻧﺎَﻛ ﻲِﺘَّﻟﭐ ۚۡﻢِﻬۡﻴَﻠَﻋ
﴾ ‏[:ﻑﺍﺮﻋﻻﺍ ١٥٧ ‏]
‘‘তিনি সৎকাজের আদেশ করেন
এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করেন।
মানবজাতির জন্য সকল উত্তম ও
পবিত্র জিনিসগুলো বৈধ করেন
এবং খারাপ বিষয়গুলো হারাম
করেন।’’[11]
আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে তাঁর
রিসালাতের পূর্ণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সে সত্ত্বা, যাঁর কর্মকাণ্ড
সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ বলেন,
তাকে পাঠানো হয়েছে যাতে তিনি
সৎকাজের আদেশ দেন, সকল অসৎ কর্ম
হতে বারণ করেন, সব উত্তম বিষয় হালাল
করেন এবং অপবিত্রগুলো হারাম করেন।
এজন্যে রাসূল নিজেও বলেছেন-
« ﺏ ﺖﺜﻋ ﻡﺭﺎﻜﻣ ﻢﻤﺗﻷ ﻕﻼﺧﻷﺍ »
‘‘আমি সকল পবিত্র
চরিত্রাবলী পরিপূর্ণতা সাধনের
জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’’[12]
শুধু তাই নয় মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠা করে তিনি ‘হিসবা’ নামক
একটি বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ
কাজটি আঞ্জাম দিতেন।
পরবর্তীতে খোলাফায়ে রাশেীনের যুগেও
এ বিভাগটি প্রতিষ্ঠিত ছিল।
ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব
হলো সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ ও
অন্যায় কাজ হতে মানুষকে বারণ করা।
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ
করা মুমিনের গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত
সৎ কাজের আদেশ দান ও
অসৎকাজে বাধা দান মুমিনের অন্যতম
দায়িত্ব। মুমিন নিজে কেবল সৎকাজ
করবে না, বরং সকলকে সে কাজের
প্রতি উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস চালাতে হবে।
কেননা, তারা পরস্পরের বন্ধু। অতএব একবন্ধু
অপর বন্ধুর জন্য কল্যাণ ব্যতীত অন্য কিছু
কামনা করতে পারে না। এদিকে ইঙ্গিত
করে মহান আল্লাহ বলেন-
َﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐَﻭ﴿ ُﺖَٰﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐَﻭ ۡﻢُﻬُﻀۡﻌَﺑ
ُﺀٓﺎَﻴِﻟۡﻭَﺃ ٖۚﺾۡﻌَﺑ َﻥﻭُﺮُﻣۡﺄَﻳ ِﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ
َﻥۡﻮَﻬۡﻨَﻳَﻭ ِﻦَﻋ َﻥﻮُﻤﻴِﻘُﻳَﻭ ِﺮَﻜﻨُﻤۡﻟﭐ
َﺓٰﻮَﻠَّﺼﻟﭐ َﺓٰﻮَﻛَّﺰﻟﭐ َﻥﻮُﺗۡﺆُﻳَﻭ
َﻥﻮُﻌﻴِﻄُﻳَﻭ ۚٓۥُﻪَﻟﻮُﺳَﺭَﻭ َﻪَّﻠﻟﭐ َﻚِﺌَٰٓﻟْﻭُﺃ
ُﻢُﻬُﻤَﺣۡﺮَﻴَﺳ ُۗﻪَّﻠﻟﭐ ٧١ ﴾ ‏[ :ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ٧١ ‏]
‘‘মুমিন নারী ও পুরুষ তারা পরস্পরের
বন্ধু। তারা একে অপরকে যাবতীয়
ভাল কাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় ও
পাপ কাজ হতে বিরত রাখে, সালাত
কায়েম করে, যাকাত পরিশোধ
করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের
আনুগত্য করে। তারা এমন লোক
যাদের প্রতি অচিরেই আল্লাহর রহমত
বর্ষিত হবে।’’[13]
কুরআনের অসংখ্য আয়াতে মুমিনের অন্যতম
চরিত্র-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত
করা হয়েছে। সকল স্থানে অন্যান্য
গুণাবলীর পাশাপাশি অন্যতম গুণ
হিসেবে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের
নিষেধের অবতারণা করা হয়েছে।
কুরআনে এসেছে:
﴿ َﻥﻭُﺪِﻤَٰﺤۡﻟﭐ َﻥﻭُﺪِﺒَٰﻌۡﻟﭐ َﻥﻮُﺒِﺌَّٰٓﺘﻟﭐ
َﻥﻭُﺪِﺠَّٰﺴﻟﭐ َﻥﻮُﻌِﻛَّٰﺮﻟﭐ َﻥﻮُﺤِﺌَّٰٓﺴﻟﭐ
َﻥﻭُﺮِﻣٓﺄۡﻟﭐ ِﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ َﻥﻮُﻫﺎَّﻨﻟﭐَﻭ
ِﺮَﻜﻨُﻤۡﻟﭐ ِﻦَﻋ َﻥﻮُﻈِﻔَٰﺤۡﻟﭐَﻭ ِﺩﻭُﺪُﺤِﻟ
ِۗﻪَّﻠﻟﭐ ِﺮِّﺸَﺑَﻭ َﻦﻴِﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐ
﴾١١٢ ‏[:ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ١١٢ ‏]
‘‘তারা আল্লাহর
দিকে প্রত্যাবর্তনকারী, আল্লাহর
গোলামীর জীবন-যাপনকারী। তাঁর
প্রশংসা উচ্চারণকারী, তাঁর জন্য
যমীনে পরিভ্রমণকারী, তাঁর
সম্মুখে রুকু ও সিজদায় অবনত। সৎ
কাজের আদেশ দানকারী, অন্যায়ের
বাধা দানকারী এবং আল্লাহর
নির্ধারিত সীমা রক্ষাকারী।
হে নবী, তুমি এসব মুমিনদের সুসংবাদ
দাও।”[14]
>[1] সূরা আল-মায়িদাহ:২৭।
[2] সূরা আন-নাহল:৩৬।
[3] সূরা ইবরাহীম:১।
[4] সূরা যিলযাল:৭-৮।
[5] সূরা ইনফিতার:১১-১৯।
[6] সূরা ইনফিতার:৬।
[7] সূরা আত তাহরীম:৬।
[8] সূরা আল মায়িদাহ:২।
[9] তবে বর্ণনাটি দুর্বল।
[10] সূরা আল আছর”১-৩।
[11] সূরা আল আরাফ: ১৫৭।
[12] ইমাম মালিক, মুয়াত্তা ৫/২৫১।
[13] সূরা আত তাওবা: ৭১।
[14] সূরা আত তাওবা:১১২।

আশুরার রোজা রাখার ফজিলত।

আশুরার রোজা রাখার ফজিলত।
-
প্রশ্ন: আমি শুনেছি আশুরার রোজা নাকি বিগত বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়- এটা কি সঠিক? সব গুনাহ কি মোচন করে; কবিরা গুনাহও? এ দিনের এত বড় মর্যাদার কারণ কি?
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এক: আশুরার রোজা বিগত বছরের গুনাহ মোচন করে। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: “আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদান প্রত্যাশা করছি আরাফার রোজা বিগত বছর ও আগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে। আরও প্রত্যাশা করছি আশুরার রোজা বিগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে।”[সহিহ মুসলিম (১১৬২)]
এটি আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ একদিনের রোজার মাধ্যমে বিগত বছরের সব গুনাহ মার্জনা হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মহান অনুগ্রহকারী।
আশুরার রোজার মহান মর্যাদার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি এ রোজার ব্যাপারে খুব আগ্রহী থাকতেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “ফজিলতপূর্ণ দিন হিসেবে আশুরার রোজা ও এ মাসের রোজা অর্থাৎ রমজানের রোজার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যত বেশি আগ্রহী দেখেছি অন্য রোজার ব্যাপারে তদ্রূপ দেখিনি।”[সহিহ বুখারি (১৮৬৭)]
হাদিসে يتحرى শব্দের অর্থ- সওয়াব প্রাপ্তি ও আগ্রহের কারণে তিনি এ রোজার প্রতীক্ষায় থাকতেন।
দুই: আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আশুরার রোজা রাখা ও এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামকে উদ্বুদ্ধ করার কারণ হচ্ছে বুখারির বর্ণিত হাদিস (১৮৬৫) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন দেখলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তখন তিনি বললেন: কেন তোমরা রোজা রাখ? তারা বলল: এটি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ বনি ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করেছেন; তাই মুসা আলাইহিস সালাম এ দিনে রোজা রাখতেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমাদের চেয়ে আমি মুসার অধিক নিকটবর্তী। ফলে তিনি এ দিন রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।”
হাদিসের উদ্ধৃতি: “এটি উত্তম দিন” মুসলিমের রেওয়ায়েতে এসেছে- “এটি মহান দিন। এদিনে আল্লাহ মুসাকে ও তাঁর কওমকে মুক্ত করেছেন এবং ফেরাউন ও তার কওমকে ডুবিয়ে মেরেছেন।”
হাদিসের উদ্ধৃতি: “তাই মুসা আলাইহিস সালাম এদিনে রোজা রাখতেন” সহিহ মুসলিমে আরেকটু বেশি আছে যে “…আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ; তাই আমরা এ দিনে রোজা রাখি”।
বুখারির অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- “এ দিনের মহান মর্যাদার কারণে আমরা রোজা রাখি”।
হাদিসের উদ্ধৃতি: “অন্যদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন” বুখারির অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- “তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা তাদের চেয়ে মুসার অধিক নিকটবর্তী। সুতরাং তোমরা রোজা রাখ”।
তিন: আশুরার রোজা দ্বারা শুধু সগিরা গুনাহ মার্জনা হবে। কবিরা গুনাহ বিশেষ তওবা ছাড়া মোচন হয় না। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: আশুরার রোজা সকল সগিরা গুনাহ মোচন করে। হাদিসের বাণীর মর্ম রূপ হচ্ছে- কবিরা গুনাহ ছাড়া সকল গুনাহ মোচন করে দেয়। এরপর তিনি আরও বলেন: আরাফার রোজা দুই বছরের গুনাহ মোচন করে। আর আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মোচন করে। মুক্তাদির আমীন বলা যদি ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যায় তাহলে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়… উল্লেখিত আমলগুলোর মাধ্যমে পাপ মোচন হয়।
যদি বান্দার সগিরা গুনাহ থাকে তাহলে সগিরা গুনাহ মোচন করে। যদি সগিরা বা কবিরা কোন গুনাহ না থাকে তাহলে তার আমলনামায় নেকি লেখা হয় এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। … যদি কবিরা গুনাহ থাকে, সগিরা গুনাহ না থাকে তাহলে কবিরা গুনাহকে কিছুটা হালকা করার আশা করতে পারি।[আল-মাজমু শারহুল মুহাযযাব, খণ্ড-৬]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: পবিত্রতা অর্জন, নামায আদায়, রমজানের রোজা রাখা, আরাফার দিন রোজা রাখা, আশুরার দিন রোজা রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে শুধু সগিরা গুনাহ মোচন হয়।
[আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, খণ্ড-৫]
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

গনক ?

গনক ?
১। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এক স্ত্রী থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
من أتى عرافا فسأله عن شيئ فصدقه لم تقبل له صلاة أربعين يوما
‘‘যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে আসল, তারপর তাকে [ভাগ্য সম্পর্কে] কিছু জিজ্ঞাসা করলো, অতঃপর গণকের কথাকে সত্য বলে বিশ্বাস করল, তাহলে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না। (মুসলিম)
২। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
من أتى كاهنا فصدقه بما يقول كفر بما أنزل على محمد. (رواه ابو داود)
‘‘যে ব্যাক্তি গণকের কাছে আসলো, অতঃপর গণক যা বললো তা সত্য বলে বিশ্বাস করলো, সে মূলতঃ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তা অস্বীকার করলো। (সহীহ বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক হাদীসটি সহীহ। আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ী ইবনে মাজা ও হাকিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)।

আবু ইয়ালা ইবনে মাসউদ থেকে অনুরূপ মাউকুফ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৩। ইমরান বিন হুসাইন থেকে মারফু’ হাদীসে বর্ণিত আছে,
ليس منا من تطير أو تطير له، أوتكهن أو تكهن له أو سحر أو سحرله ومن أتى كاهنا فصدقه بما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد صلى الله عليه وسلم. (رواه البزار بإسناد جيد)
‘‘যে ব্যক্তি পাখি উড়িয়ে ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করলো, অথবা যার ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করার জন্য পাখি উড়ানো হল, অথবা যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করলো, অথবা যার ভাগ্য গণনা করা হলো, অথবা যে ব্যক্তি যাদু করলো অথবা যার জন্য যাদু করা হলো অথবা যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে আসলো অতঃপর সে [গণক] যা বললো তা বিশ্বাস করলো সে ব্যক্তি মূলতঃ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তা [কুরআন] অস্বীকার করল। (বায্যার)
[ইমাম তাবারানীও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে ومن أتى থেকে হাদিসের শেষ পর্যন্ত ইমাম তাবারানী কর্তৃক বর্ণিত ইবনে আববাসের হাদীসে উল্লেখ নেই।
ইমাম বাগাবী (রহ:) বলেন عراف [গণক] ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যে ব্যক্তি চুরি যাওয়া জিনিস এবং কোন জিনিস হারিয়ে যাওয়ার স্থান ইত্যাদি বিষয় অবগত আছে বলে দাবী করে। এক বর্ণনায় আছে যে, এ ধরনের লোককেই গণক বলা হয়। মূলতঃ গণক বলা হয় এমন ব্যক্তিকে যে ভবিষ্যতের গায়েবী বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দেয় [অর্থাৎ যে ভবিষ্যদ্বানী করে]। আবার কারো মতে যে ব্যক্তি ভবিষ্যতের গোপন খবর বলে দেয়ার দাবী করে তাকেই গণক বলা হয়।
কারো মতে যে ব্যক্তি দিলের (গোপন) খবর দেয়ার দাবী করে, সেই গণক।
আবুল আববাস ইবনে তাইমিয়া (রহ:) বলেছেন كاهن [গণক], منجم [জ্যোতির্বিদ], এবং رمال [বালির উপর রেখা টেনে ভাগ্য গণনাকারী] এবং এ জাতীয় পদ্ধতিতে যারাই গায়েব সম্পর্কে কিছু জানার দাবী করে তাদেরকেই আররাফ [عراف] বলে। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেছেন, এক কওমের কিছু লোক আরবী أباجاد লিখে নক্ষত্রের দিকে দৃষ্টি দেয় এবং তা দ্বারা ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করে। পরকালে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে কোন ভাল ফল আছে বলে আমি মনে করি না।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১। গণনাকারীকে সত্য বলে বিশ্বাস করা এবং কুরআনের প্রতি ঈমান রাখা, এ দুটি বিষয় একই ব্যক্তির অন্তরে এক সাথে অবস্থান করতে পারে না।
২। ভাগ্য গণনা করা কুফরী হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা।
৩। যার জন্য গণনা করা হয়, তার উল্লেখ।
৪। পাখি উড়িয়ে ভাগ্য পরীক্ষাকারীর উল্লেখ।
৫। যার জন্য যাদু করা হয়, তার উল্লেখ।
৬। ভাগ্য গণনা করার ব্যাপারে যে ব্যক্তি ‘‘আবাজাদ’’ শিক্ষা করেছে তার উল্লেখ্য।
৭। ‘কাহেন, [كاهن] এবং ‘আররাফ’ [عراف] এ মধ্যে পার্থক্য।
গ্রন্থঃ কিতাবুত তাওহীদ | রচনা/অনুবাদ/সংকলনঃ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব

সর্বশেষ আমলের উপর মানুষের কর্ম ফল নির্ভরশীল ৷

সর্বশেষ আমলের উপর মানুষের কর্ম ফল নির্ভরশীল ৷
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
একজন মানুষ দুনিয়াতে আসার পর আল্লাহ তালা তাকে যত দিন হায়াত দিয়ে থাকেন ততদিন সে বেঁচে থাকে ৷ দুনিয়াতে মানুষ ভালো-মন্দ অনেক কাজ করে থাকে ৷ কিন্তু পরকালে তার হিসাব হবে ঐ আমলের উপর ভিত্তি করে, যার উপর তার মৃত্যু হবে ৷
এজন্য প্রত্যেক মুসলিমের উচিত হবে জীবনের শেষ আমল যেন ভালো হয় সেদিকে খেয়াল রাখা ৷ তাছাড়া মানুষের কোন দিনটি শেষ দিন হবে তা কারো জানা নেই ৷ হতে পারে আজকের দিনটি তার শেষ দিন অথবা কালকের দিনটি তার শেষ দিন 
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
হে মুমিনগন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ৷ প্রত্যেক মানুষেরই ভেবে দেখা উচিত যে, সে আগামীকালের জন্য কি পাঠিয়েছে ৷ আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো,নিশ্চয় তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত ৷ [ সূরা হাশর,আয়াত-১৮]
এ আয়াতের ইঙ্গিতের আলোকে এটাই বুঝা যায় যে, মানুষের প্রত্যেকটি দিনকে জীবনের শেষ দিন বিবেচনা করে তার আমলকে সুন্দর করা উচিত ৷ এভাবে চলতে থাকলে যখনই তার মৃত্যু হবে তখন ভালো অবস্থার উপর তার মৃত্যু হবে ৷ আর কারো মৃত্যু যখন ভালো অবস্থার উপর হবে তখন তার পরবর্তী ধাপগুলো ভালো অবস্থার উপর হবে ৷

যেমন হাদীসে এসেছে,
জাবির রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন,আমি নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, প্রত্যেক বান্ধা ঐ অবস্থার উপর পুনরুত্থিত হবে, যে অবস্থার উপর সে মারা যাবে ৷ [ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪১৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৪৫৮৩,মিশকাত, হাদীস নং ৫৩৪৫]
এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, মানুষের আমলের ফলাফল নির্ভর করে তার শেষ আমলের উপর ৷ বাস্তবে এমনটি হবে যে, অনেক সময় দেখা যাবে কোন মানুষ পাপের কাজ করবে, কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে তার তওবা নসীব হবে এরপর সে নেক আমল করে জান্নাতবাসী হবে ৷ আবার এর বিপরিতে অনেকের অবস্থা এমন হবে যে, দেখা যাবে সে সাওয়াবের কাজ করছে কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে সে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে সে গুনাহর কাজ করতে শুরু করবে ৷ যার ফলে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে ৷
যেমন হাদীসে এসেছে,
সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি এমন আমল করে যা দেখে মানুষ মনে করে যে, সে জান্নাতবাসী হবে, অথচ সে জাহান্নামী ৷ আবার কোন কোন মানুষের আমল দেখে মানুষ মনে করে যে, সে জাহান্নামী হবে, অথচ সে জান্নাতী ৷ কেননা সর্বশেষ আমলের উপরই ফলাফল নির্ভরশীল ৷
[ সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৯৩, শারহুস সুন্নাহ, হাদীস নং ৭৯]
সুতরাং প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উচিত জীবনের প্রতিটি দিন কে গুরুত্ব দেয়া এবং প্রতিটি দিন কে জীবনের শেষ দিন মনে করে আল্লাহর নাফরমানী থেকে দুরে থাকা এবং নিজেকে কল্যাণজনক কাজে নিয়োজিত রাখা ৷ এর জন্য আল্লাহর নিকট সবসময় দু‘আ করতে হবে, যাতে আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর পূর্বে বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফীক দান করেন ৷
হাদীসে এসেছে,
আমর ইবনে হাকীম আল খুযাঈ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন আল্লাহ তাআলা কোন বান্দর কল্যাণ চান তখন মৃত্যুর পূর্বে তাকে আসাল করে নেন ৷ জিঞ্জেস করা হলো আসাল কি ? তিনি বললেন, মৃত্যুর পূর্বে তার সামনে নেক আমলের দ্বার খুলে দেওয়া হয় ৷ যার ফলে আল্লাহ তাআলা তার উপরে সন্তুষ্ট হয়ে যান ৷ [ সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৩৪২, মুসনাদে আহম্মদ, হাদীস নং ১৮৭১৯, সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ১১১৪]

পূণ্যবতী রমণীর গুণাবলী ||

পূণ্যবতী রমণীর গুণাবলী ||
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“পূণ্যবতী রমণীগণ আনুগত্য করে এবং আল্লাহর সংরক্ষিত প্রচ্ছন্ন বিষয়ের সংরক্ষন করে।” (সূরানিসা- ৩৪)
হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) অত্র আয়াতের তাফসীরে
বলেন, ﺻﺎﻟﺤﺎﺕ বলতে সৎ ও পূণ্যশীল নারীদেরকে
বুঝানো হয়েছে। ইবনু আব্বাস প্রমুখ বলেন,
ﻗﺎﻧﺘﺎﺕ অর্থ হচ্ছে, স্বামীর আনুগত্যকারীনী।
ﺣﺎﻓﻈﺎﺕ ﻟﻠﻐﻴﺐ অর্থ সম্পর্কে সুদ্দী প্রমুখ
বলেন, স্বামীর অনুপস্থিতে স্ত্রী নিজের ইজ্জতের সংরক্ষণ করবে এবং স্বামীর সম্পদ হেফাযত
করবে।

আবদুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“মুসলিম রমণী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রামাযানের ছিয়াম পালন করে, নিজের
লজ্জাস্থানের হেফাযত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তবে তাকে বলা হবে, জান্নাতের যে কোন
দরজা দিয়ে ইচ্ছে তুমি ভিতরে প্রবেশ কর।”
আনাস বিন মলেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
“কোন ধরণের রমণী জান্নাতী আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ হে
আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তোমাদের জান্নাতী রমণীগণ হচ্ছে, স্বামীর প্রতি প্রেম
নিবেদনকারীনী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারীনী।
তার আনুগত্যের প্রকাশ হচ্ছে, সে ivMw¤^Zv
হলে বা তার সাথে খারাপ আচরণ করা হলে বা স্বামী
তার প্রতি ivMw¤^Z হলে, স্বামীর কাছে গিয়ে
বলে, এই আমার হাত আপনার হাতে সপে দিলাম,
আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি চোখের পলক ফেলব না। অর্থাৎ আমি কোন আরাম নিব না
কোন আনন্দ বিনোদন করব না যতক্ষণ আপনি আমার প্রতি খুশি না হন।”
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে
প্রশ্ন করা হল হে আল্লাহর রাসূল! কোন শ্রেণীর নারী সর্বোত্তম? তিনি বলেন, “তার পরিচয় হচ্ছে
তুমি তার দিকে চাইলে সে তোমাকে আনন্দিত করবে,
কোন নির্দেশ দিলে তা বাস্তবায়ন করবে। তার নিজের ব্যাপারে এবং স্বামীর সম্পদের ব্যাপারে
স্বামী পসন্দ করেন না এমন কাজ করে তারবিরোধীতা করবে না।”
অন্য বর্ণনায় এসেছে, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওমর (রাঃ)কে
লক্ষ্য করে বললেন,
“আমি কি তোমাকে মানুষের আকর্ষণীয় শ্রেষ্ঠ গুপ্তধন সম্পর্কে বলে দিব না? তা হচ্ছে, নেক
রমণী। স্বামী তার দিকে তাকালে সে তাকে আনন্দিত
করে দেয়, কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং বাড়িতে না থাকলে তার ইজ্জত-আবরু রক্ষা
করে।”
ওহে মুসলিম বোন নিজের প্রতি লক্ষ্য করুন, উক্ত গুণাবলী কি আপনার চরিত্রে সমাবেশ ঘটাতে
পেরেছেন। আপনি কোথায়? আপনার কি উচিত নয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির পথ অনুসন্ধান করা?
দু’নিয়া-আখেরাতে সুখের জীবন গঠন করার জন্য স্বামী-সন্তানের খেদমত করা ও আনন্দময় সংসার
গড়তে সচেষ্ট হওয়া।

মিলাদ কেন বিদায়াত????

মিলাদ কেন বিদায়াত????
মিলাদুন্নবি বিদাআত বিদাআত । পর্ব একমীলাদঃপাক ভারত ও বাংলার মুসলিম সমাজে প্রচলিত ও সবচেয়ে আকর্ষনীয়এবং ব্যাপকভাবে পালনীয় অনুষ্ঠানটি হচ্ছে মীলাদ মাহফিল ও মীলাদুন্নবী দিবস। কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের সূচনায় মীলাদ যেন অপরিহার্য এবং মহা ধুমধামে ঈদে মীলাদুন্নবী উৎসব পালন করা যেন বিরাট সাওয়াবের কাজ। অথচ এই মীলাদ এর কথা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ও রাসুলূল্লা (সাঃ) এর হাদীস কোনটিতেই নেই।অথবা মীলাদ কোন সাহাবী, তাবিঈ, তাবি তাবিঈ, কোন ইমাম করেছেন বা করতে বলেছেন তার কোন দলীল প্রমান ও নাই।এটা কোন নির্ভরযোগ্য আলিমের দ্বারাও চালু হয়নি। এমনকি যারা এর ধারক বাহক হয়েসমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত নবী প্রেমের নামে এই মীলদ বা ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করে আসছেন তারাও স্বীকার করে থাকেন যে,এটার কোন দলীল নাই। মীলাদ চালু হয়েছে রাজা বাদশাহ বা স্বল্প শিক্ষিত সুফীদের দ্বারা।তাই সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত নবী প্রেমের নামে এই মীলাদ বা ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করা ইসলামরে কোন অংশ নয়।বরং এটা ধর্মের নামে নবআবিষ্কৃত বিদআ’ত।তাই এখানে মীলাদুন্নবী ও মীলাদের সূচনা, তার ইতিহাস, মীলাদ ও কিয়ামেরনামে যে সব শিরকী ও বিদআ’তী কাজ হচ্ছেএবং এ সম্পর্কে হানাফী আলিমদের সহ বিখ্যাত জ্ঞাণী-গুণীদের মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

যেন সমাজে প্রচলিত এসব বিদআ’ত থেকে জাতি মুক্ত হতে পারে।মীলাদ ও ঈদে মীলাদুন্নবীর অর্থঃআরবী ‘মীলাদ’ শব্দের অর্থ জন্মের সময়-দেখুনঃ- আল-কামূস ১ম খন্ড, ২১৫ পৃঃ, নওলকিশোর ছাপা,মিসবা-হুল লুগা-ত ৯৫৪ পৃঃ, ৫ম খন্ড সংস্করণ, দিল্লী ছাপা ।এবং ঈদে মীলাদুন্নবীর অর্থ হচ্ছে নাবীর জন্মদিনের আনন্দোৎসব।বর্তমানে ১২ই রবিউল আউয়ালকে ঈদে মীলাদুন্নবী অর্থাৎ নাবী (সাঃ) এর জন্মের আনন্দ উৎসব দিবস বলে জোর প্রচার করা হচ্ছে।যদিও রাসূল (সাঃ) এর জন্ম দিবস নিয়ে বিভিন্ন রকম মত আছে তার মধ্যে ১২ই রবিউল আউয়ালের মত হচ্ছে অন্যান্য মতের তুলনায় দুর্বল।এ সম্পর্কে সামনে আলোচনা করা হয়েছে।মীলাদ ও মীলাদুন্নবীর ইতিহাসঃনাবী (সাঃ) এর সময়, খুলাফায়ে রাশেদীনদের সময় বা উমাইয়া খলিফাদের যুগে এগুলো ছিল না।এর বীজ বপন করে আব্বাসীয় খলিফাদের যুগে জনৈক মহিলা।মাদীনাহ শরীফে প্রিয় নাবী (সাঃ) এর রওযা মোবারক যিয়ারত করার ও সেখানে দু’আ করারযে ব্যবস্থা রয়েছে ঠিক সেভাবে আল্লাহর নাবী (সাঃ) মক্কায় যে ঘরে ভূমিষ্ট হয়েছিলেন সেই ঘরটির যিয়ারত ওসেখানে দু’আ করার প্রথা সর্বপ্রথম চালু করেন বাদশাহ হারুনুর রশিদের মাখায়যুরান বিবি (মৃত্যু ১৭৩ হিজরী ৭৮৯ ঈসায়ী)পরবর্তীকালে ১২ই রবিউল আউয়ালকে আল্লাহর নাবী (সাঃ) এর জন্ম ও মৃত্যু দিবস ধরে নিয়ে তীর্থ যাত্রীগন ঐ ঘরে এসে দু’আ করা ছাড়াও বারকাতের আশায় ভূমিষ্ট হওয়ার স্থানটি স্পর্শ ও চুম্বন করতো। (ইবনু জুবায়ের ১১৪, ৬৩ পৃঃ ও আল-বাতালুনী ৩৪ পৃঃ)এখানে ব্যক্তিগত যিয়ারত ছাড়াও একটি উৎসব অনুষ্ঠিত হতো।তা ইবনু জুবাইরের (মৃত্যু ৬১৪ হিঃ) গ্রন্থের ১১৪ ও ১১৫ পৃষ্ঠায় প্রথম জানা যায়।অতঃপর হিজরীয় চতুর্থ শতকে উবাইদ নামে এক ইয়াহুদী ইসলাম গ্রহণ করে।তার নাম রাখা হয় উবাইদুল্লাহ।তিনি নিজেকে ফা-তিমাহ (রাঃ) এর সম্ভ্রান্ত বংশধর বলে দাবী করেন এবংমাহদী উপাধি ধারণ করেন।এঁরই প্রপৌত্র (পৌত্রের ছেলে) মুয়িব লিদীনিল্লাহ ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের জন্মবার্ষিকীর অনুকরণেছয় রকম জন্মবার্ষিকী ইসলামে আমদানী করেন এবং মিশরের ফাতিমী শিয়া শাসকরা মুসলিমদের মধ্যে জন্মবার্ষিকী পালনের রীতি চালু করেন।এই ফাতিমী শিয়া খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা আবূ মুহাম্মাদ ইবাইদুল্লাহ ইবনু মায়মূন প্রথমে ইয়হূদী ছিলেন- (আল বিদা-য়াহ আননিহাইয়া একাদশ ১৭২ পৃঃ)কারো মতে তিনি ছিলেন অগ্নিপূজারী- (মাকরিজীর আল খুতাত আল আ-সার ১ম খন্ড৪৮ পৃঃ)ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, মিশরের ফিরআউন জন্মোৎসব পালন করতেন- (ফাতা-ওয়া নাযীরিয়্যাহ ১ম খন্ড, ১৯৯ পৃঃ)ফিরআউন ছিল ইয়াহুদী। তারপর ঐ ইয়হুদী রীতি খৃষ্টানদের মধ্যেও সংক্রমিত হয়। ফলে তারা তাদের নাবী ঈসা (আঃ)- এর পন্মবার্ষিকী ‘ক্রিসমাসডে’ পালন করতে থাকে।মুসলিমদের মাঝে এই জন্মবার্ষিকী রীতি চালু হওযার একশ তিন বছর পরঅর্থাৎ ৪৬৫ হিজরীতে আফজাল ইবনু আমীরুল জাইশ মিশরের ক্ষমতা দখল করে রাসূল (সাঃ), আলী (রাঃ), ফাতিমাহ (রাঃ),হাসান (রাঃ), হোসেন (রাঃ)- এর নাম সহ প্রচলিত ছয়টি জন্মবার্ষিকী পালনের রীতি বাতিল করে দেন।(মিশরের মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ রচিত আহসানউল কালা-ম ফী মাইয়্যাতা আল্লাকু বিস সুন্নাতি অল বিদআ’তী মিনাল আহকাম, ৪৪-৪৫ পৃঃ বরাতে তাম্মিহু উলিল আবসা-রা ইলা কামা লিদ্দিন আমা ফিল বিদআ’য়ী মিনাল আখতা-র ২৩০পৃঃ)এর পর ত্রিশ বছর বন্ধ থাকার পর ফাতিমী শিয়া খলিফা আমির বি-আহকা-মিল্লা-হ পুনরায় এই প্রথা চালু করেন।তখন থেকেই জন্মবার্ষিকী পালনের রীতি চালূ হয়ে এখনও চলছে। (ঐ ২৩০-২৩১ পৃঃ)ঐতিহাসিক অন্যান্য বর্ণনা থেকে জানা জায়, জন্মবার্ষিকী পালনের এই রীতি ঐ মীলাদ প্রথা খালিফা মুস্তালিবিল্লাহর প্রধান মন্ত্রী বদল আল জামালী বাতিল করে দেয়। এবং তার মৃত্যুর পর পুনরায় চালূ হলে পরবর্তীতে কুরআন-হাদীসের অনুসারী সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ূবী এই সব জন্মবার্ষিকী ও মীলাদ প্রথা বাতিল করে দেন।কিন্তু সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ূবীর ভগ্নিপতি আরবিলের শাসনকর্তা মুজাফফরউদ্দিন ছাড়া কেউ এর বিরোধিতা করেন নাই।ঐতিহাসিকরা বলেন যে, বাদশাহ মোজাফফারউদ্দিনের মীলাদ মাহফিল গুলোতে নামধারী সুফীরা উপস্থিত হন এবং এই মাহফিল ফজর থেকে যোহর পর্যন্ত চলত। বাদশাহ এই মীলাদের জন্য তিনলক্ষ স্বর্ণমুদ্রারও অধিক বেশী খরচ করতেন।(মাকরিজীর আল খুতাত ১ম খন্ড ৪৯০ পৃঃ, মিরআতুয জামা-ন ফী তা-রিখীল আ’ইয়্যান ৮ম খন্ড ৩১০ পৃঃ, পূর্বোক্ত তানবিহু উলিল আবসা-র ৩২ পৃঃ)সুন্নীদের মাঝেও মীলাদুন্নবী ঢুকে প্রড়। তাই শাইখ ওমার ইবনু মুহাম্মাদ মোল্লা নামে এক প্রসিদ্ধ সৎব্যক্তি মুসিলে মীলাদুন্নবী করে ফেলেন এরই অনুসরণ করেন ইরবিলের শাসনকর্তা মুজাফফরউদ্দিন- (কিতাবুল বা-য়িস আলা ইনকা-রিল-বিদায়ী আল হাওয়া-দিস ৯৬ পৃঃ) মোল্লা ওমার ইবনু মুহাম্মাদ মুসিলের বাসিন্দা ছিলেন।আর ইরবিল মুসিলেরই নিকটবর্তী এলাকা ছিল। তাই আনুমানিক ৬০৪ হিজরীতে সুন্নীদের মধ্যে মীলাদুন্নবীর সূত্রপাত হয়।অতঃপর ইরবিলের শাসনকর্তা মুজাফফর উদ্দিন তা ধূমধামের সাথে মানতে থাকে।এমন সময় স্পেনের এক ইসলামী বিদ্বানআবুল খাত্তা-ব ওমার ইবনুল হাসান ইবনু দিহইয়াহ মরক্কো ও আফ্রিকা, শিসর ও সিরিয়া, ইরাক ও খোরাসান প্রভৃতি দেশ ঘুরতে ঘুরতে ৬০৪ হিজরীতে ইরবিলে প্রবেশ করেন এবং বাদশাহ মুজাফফার উদ্দিনকে মীলাদুন্নবী পালনের ভক্ত হিসাবে দেখতে পান। তাই তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মীলাদ সম্পর্কে একটি বই লেখেন- ‘কিতাবুত তানভীল ফি মাওলিদিসসিরাজিল মুনীর’ নামে। অতঃপর তিনি এটাকে ৬২৬ হিজরীতে ছ’টি মাসলিসে বাদশাহ মুজাফফর উদ্দিীনের নিকট পড়ে শোনান। বাদশাহ তাতে সন্তুষ্ট হতে তাঁকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দান করেন- (আফাইয়া-তুল আ’য়া-ন ৩য় খন্ড, ১২২ পৃঃ) ফলে মুসীম জাহানের বিভিন্ন দেশে জন্মবার্ষিকী পালনের রীতি ছড়িয়ে পড়ে। তাই মরক্কোবাসীরা এই মীলাদের নাম দিয়েছেন ‘মাওসম’ আলজেরিয়াবাসিীরা এর নাম দিয়েছে ‘যারদাহ’ মিশর ও মধ্যপ্রাচ্য বাসীরা এর নাম দেয় ‘মাওলিদ’। (আলইনসা-ফ ফীমা কীলা ফিল মাওলিদ মিনাল গুলুয়ে আলইজহা-ফ ২৭ পৃঃ)আর ভারতীয় উপমহাদেশে মীলাদুন্নবী আমদানীকারীরা ছিল শিয়া।যেমন ইসলামের মধ্যে প্রথম মীলাদ আমদানীকারক ছিল শিয়া খলীফা মুয়ীয লিদীনিল্লাহ।ভারতের মোঘল সম্রাটদের কিছু মন্ত্রী ও পরামর্শদাতা ছিল শিয়া।যেমন মোঘল সম্রাট হুমায়ূন ও সম্রাট আকবরের মা শিয়া ছিল। আকবরেরঅভিভাবক বৈরাম খাঁ কট্টর শিয়া ছিরেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাষ্ট্রদূত শিয়া ছিলেন। বাদশাহ বাহদুর শাহ শিয়া ছিলেন। তাঁরাই এই উপমহাদেশে সুন্নীদের মধ্যে মীলাদুন্নবীর চলন করে দেন। ফলে ফিয়া- মীলাদুন্নবীর আনুষঙ্গিক ব্যাপারগুলো সুন্নীদের মধ্যে প্রচলিত হয়ে পড়ে। যেমন- আলোকসজ্জা ও মিছিল প্রভৃতি। (শায়খ আইনুল বারী আলিয়াবীর কর্তৃক রচিত ‘মীলাদুন্নবী ও বিভিন্ন বার্ষিকী’ পুস্তকের ৩৩ পৃঃ)অন্য র্বনা থেকে জানা যায় যে, মীলদ পাঠের নিয়ম ৫৯০ হিজরী সনে বরকুক সুলতান ফরাহ ইবনু নসরের যুগে প্রচলিত হয়। তিনি খুব আরামপ্রিয় সুলতান ছিলেন। শরীআ’তের কড়াকড়ি নির্দেশ তিনি মেনে চলতেন না। সামান্য কাজে কিভাবে বেশী সাওয়াব পাওয়া যায় তিনি এরূপ কাজের অনুসন্ধান করতেন। অবশেষে শাফিঈ মাযহাবের এক বিদআ’তী পীর প্রচলিত মীলাদ পাঠের পদ্ধতি আবিস্কার করে সুলতানকে উপহার দেন। সুলতান বড় সাওয়াবের কাজ মনে করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ধর্ম পালনের নামে মীলাদ পাঠের ব্যবস্থা চালূ করেন। সেখান থেকেই প্রচলিত মীলাদের উদ্ভব ঘটে।এই মীলাদের পূর্ণ বিবরণ পরবর্তীকালে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনু খাল্লিকান (৬৮১ হিজরী) তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তারপর জালালুদ্দীন আস-সয়ূতী (মৃত্যু ৯১১ হিজরী) তাঁর হুসনুল মুহাযরা ফী ‘আমালিল মাওয়ালীদ গ্রন্থে ইবনু খাল্লিকানের লেখার উপর নির্ভর করে মীলাদের বিবরণ পেশ করেছেন। সুলতান মুজাফফরউদ্দীন যে মীলাদ চালু করেছিলেন তাতে যথেষ্ট খৃস্টীয় প্রভাব বিদ্যমান ছিল। কারণ সে সময় ক্রুসেড যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ সৈন্য সিরিয়া, জেরুজালেম প্রভৃতি এলাকায় আগমণ করেছিল। তারা যীশুখৃষ্টের জন্মদিন পালন করতো।এসব দেখে শুনে সুলতান মুজাফফরউদ্দীনের মনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম দিবস তথা মীলাদের অনুষ্ঠান করার প্রেরণা পেগে উঠে।সুফীদের সাথে যোযোগ রেখে তিনি ৪টি খানকাহ নির্মাণ করেন।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ইনতে কালের প্রায় ৪০০ বছর পর খৃস্টানদের মধ্যস্থতায় প্লাটিনাসের নূরের মতবাদ ইসলামের হিকামাতুল ইরাব বা ফালাসাফাতুল ইসলাহ নামে ইসলামী লেবাসে প্রথমে সুফিদের মধ্যে ও পরে মীলাদের মাধ্যমে ইসলামে প্রবেশ লাভ করে।এছাড়াও মীলদের ইতিহাস সম্পর্কে প্রখ্যাত হানাফী আলিম ও বহু গ্রন্থের প্রণেতা মরহুম মাওলানা আঃ রহীম তার সুন্নত ও বিদআ’ত বইয়ের ২২৬পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ মীলাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হলোঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর ২০০ বছর পর এমন এক বাদশাহ প্রচলন করেন যাকে ইতিহাসে ফাসিক ব্যক্তি কলে উল্লেখ করা হয়েছে। জামে আজহারের শিক্ষক ডঃ আহমদ শারবাকী লিখেছেনঃ ৪০০ হিজরীতে ফাতিমী শাসকরা মিশরে এরপ্রচলন করেন। একথাও বলা হয় যে শাইখ ইবনু মুহাম্মদ নামক এক ব্যক্তি ইরাকের মুসিল শহরে এর প্রচলন করেছেন।পরে আল মুজাফফর আবূ সাঈদ বাদশা ইরাকের ইরবিল শহরে মীলাদ চালু করেন।ইবনু দাহইয়া এ বিষয়ে একখানা কিতাবলিখে তাকে দেন। বাদশাহ তাকে এক হাজার দীনার পুরস্কার দেন-( ইয়াসআলুনাকা আনিদ-দীনি ওয়াল হায়া-হ ১ম খন্ড ৪৭১ পৃঃ)এই মীলাদুন্নবী ও মীলাদ-এর ইতিহাস থেকে জানা যাচ্ছে যে এগুলো কুরআন ও হাদীস সমর্থিত নয় বরং ইয়াহুদী, খৃষ্টা ও অগ্নিপূজকদের রীতি অনুকরণ ও অনুসরণ। আর অন্য জাতীর সাদৃশ্য গ্রহণ সম্পর্কে বিশ্বনাবী (সাঃ) বলেন,যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তার দলভূক্ত হয়ে থাকে।(আবূ দাউদ ২ং খন্ড ২৩০ পৃঃ, মুসনাদে আহমাদ ২য় খন্ড ৫০ ও ৯২ পৃঃ, মিশকাত ৩৭৫ পৃঃ)অন্যান্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, সে আমাদের দলের নয় যে ব্যক্তি আমাদের ছাড়া অণ্যের সাদৃশ্য গ্রহণ করে।তোমরা ইয়াহুদীদের সাদৃশ্য গ্রহণ কর না এবং খৃষ্টানদেরও না।(তিরমিযী ২য় খন্ড ৫৪ পৃঃ, মিশকাত ৩৯৯ পৃঃ) অতএব মহানবী (সাঃ) এর প্রতি যদি সত্যই কারো ভালোবাসা থেকে থাকে তাহলে তাঁর উক্ত হাদীস দুটি জানার পর ইহুদী-খৃষ্টান ও অগ্নিপূজারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে কোন মু’মিন মুসলিম মীলাদুন্নবী, জন্মবাষিকী ও আলোকসজ্জা প্রভৃতি অনৈসলামিক কাজ করতে পারে না। এবং এই ধরনের বিদআ’তি কাজ কারার জন্য যারা উৎসাহ ও প্ররচনা দিয়ে থাকে তারা কেউই সহীহ হাদীস পেশ করতে পারেন না। কেহ বা বলে থাকেন কোরআনে অনেক ঈদকরার কথা বলা আছে যা ঈদে মীলাদুন্নবীর ইঙ্গিত।এগুলো হচ্ছে সরল মুসলিমদের ধোকা দিয়ে তাদের ঘোর অন্ধকারে রাখা এবং জনমত সৃষ্টি করা এক কথায় দল ভারী করা এবং ভারী দল দেখিয়ে বলা যে “আমরা এতোগুলো মানুষ কি ভুল করছি?” সর্বদা মনে রাখতে হবে যে সত্য যদি একজনও বলে সেটা সব সময়ের জন্যই সত্য।ঐতিহাসিকভাবে রাসুলূল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম তারিখ কোনটি?ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলোর ভিত্তিতে অধিকাংশের মতে মহানবী (সাঃ) এর জন্ম মাস রবিউল আউয়াল মাস।আল্লামা ইবনুল জওযী বলেন, অধিকাংশ বিদ্বানের ঐক্যমতে রাসূল (সাঃ) এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসে-(সীরাতুল মুস্তফা ১ খন্ড, ৫১ পৃঃ ২নং টীকা)তবে জন্ম তারিখের ব্যাপারে মতভেদ আছে যেমন এ ব্যাপারে আটটি উক্তি আছে।যথা-(১) ২, ৮,১০, ১২ ও ১৩ ই রবিউল আউয়াল।(সিফাতুস সফঅহ ১ম খন্ড, ১৪ পৃঃ, আলঅফাবি-আহওয়া-লিল মুস্তফার উর্দু তর্জমা সীরাতে সাইয়িদুল আম্বিয়া ১১৭ পৃঃ)(২) মুসান্নাফ ইবনু শাইবায় জাবির ও ইবনু আব্বাস থেকে বর্ণিত ১৮ই রবিউল আউয়াল।(আল বিদা-য়াহ আননিহা-য়াহ ২য় খন্ড২৪২ পৃঃ)(৩) ১ লা রবিউল আউয়াল। (আলইস্তীআ-ব ১৩ পৃঃ)(৪) ইবনু হিশাম বলেন, আল্লামা তাবারী ও ইবনু খালদূনও বলেন ১২ই রবিউল আউয়াল।(তাহযীবু সীরাতে ইবনু হিশাম ৩৬ পৃঃ) (তারিখুল উমাম অলমুলক ১ম খন্ড, ৫৭১ পৃঃ,)(৫) আল্লামা ইবনু আব্দিল বার ২রা রবিউল আউয়াল বলা সত্বেও বলেন যে, ঐতিহাসিকগণ ৮ই রবিউল আউয়ালের সোমবারকেই সঠিক বলেছেন। (আলইস্তীআ-ব ১৪ পৃঃ)(৬) ইবনু সা’দ বলেন, আবূ জা’ফর মুহাম্মাদ ইবনু আলীর মতে ১০ই রবিউল আউয়াল এবং আবূ মা’শার নাজীহ মাদানীর মতে ২রা রবিউল আউয়াল সোমবার। (তাবাকাতে ইবনু সা’দ ১ম খন্ড৮০, ৮১ পৃঃ)(৭) কনষ্টান্টিনোপলের বিখ্যাত জোতির্বিদ মাহমূদ পাশা তাঁর যুগ থেকে মুহাম্মাদ (সাঃ) পর্যন্ত ক্যালেন্ডার ঘেটে প্রমাণ করেছেন “সোমবার” দিনটি ১২ই রবিউল আউয়ালে কোন মতেই পড়ে না। বরং তা ৯ই রবিউল আউয়ালেই সঠিক হয়।এজন্য সঠিক বর্ণনা ও জ্যোতির্বিদদের গণনা হতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম দিনের নির্ভর যোগ্য তারিখ ৯ই রবিউল আউয়াল।(কাসাসুল কুরআন ৪র্থ খন্ড, ২৫৩-২৫৪ পৃঃ)(৮) হাদীস ও ইতিহাসের বহু মহাবিদ্বান- যেমন আল্লামা হুমাইদী, ইমাম ইবনু হাযম, ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ, ইবনুল কাইয়িম, ইবনু কাসীর, ইবনু হাজার আসকালানী ও বাদরুদ্দীন আইনি প্রমুখের মতে ৯ই রবিউল আউয়াল সোমবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম দিন। (কাসাসুল কুরআন ৪র্থ খন্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা) সমস্ত বর্ণনাপ্রমান করে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম ক্ষন, জন্ম তারিখ, জন্মসন এসবেইমতভেদ আছে। কেবল একটা ব্যপারে সবাই একমত যে, তাঁর জন্মদিনটি ছিল সোমবার। (মুসলিম ১ম খন্ড, ৩৬৮পৃঃ)এবং প্রায় সবাই একমত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যু হয়েছিল রবিউল আউয়াল মাসে। এ সম্পর্কে যদি তর্কের খাতিরেমেনে নেয়া হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম ও মৃত্যু হয়েছিল ১২ই রবিউল আউয়ালে তাহলে ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের অনুকরণে ১২ই রবিউল আউয়ালে ঈদে মীলাদুন্নবী তথা নাবী (সাঃ) এর জন্মবার্ষিকী খুশী মানানো হয় অথচ ঐ দিনেই নাবীজীর ইন্তেকালেরশোক পালন করা হয় না কেন? এ কথায় সবাই একমত যে, একই আনন্দ ও দুঃখ একত্রিত হলে দুঃখের মধ্যে আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। তাই ১২ই রবিউল আউয়াল মীলাদুন্নবীর উৎসব পালন না করে নাবীর মৃত্যু শোক পালনক করাই যুক্তিযুক্ত হতো।আল্লাহ্‌ তাঃ আমাদেরকে প্রতিটি বিদাআত কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাউফিকদান করুন । আমিনl
Powered by Blogger.

Dowa

Dowa
Peace
 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. Peace Way - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger