Bismillahir Rahmanir Rahim :
Recent Post

পুরুষ ও মহিলার ছালাতের পার্থক্য করা :

পুরুষ ও মহিলার ছালাতের পার্থক্য করা :

বিভিন্ন ছালাত শিক্ষা বইয়ে পুরুষ ও মহিলাদের ছালাতের মাঝে অনেক পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। অথচ ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খান লিখেছেন, ‘তাকবীরে তাহরীমা বলে পুরুষরা নাভীর নীচে এবং মহিলারা সীনার ওপর হাত বেঁধে দাঁড়াবে’।[1] কিন্তু এর প্রমাণে কোন দলীল উল্লেখ করেননি। অনুরূপভাবে মারকাযুদ দাওয়াহ, ঢাকা-এর শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মালেক কয়েকটি পার্থক্য তুলে ধরেছেন।[2] অতঃপর তিনি অনেকগুলো জাল ও যঈফ বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মহিলারা বুকের উপর আর পুরুষরা নাভীর নীচে হাত বাঁধবে মর্মে কোন জাল বর্ণনাও উল্লেখ করতে পারেননি।[3] যদিও তিনি এক স্থানে আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভীর কথা দ্বারা পার্থক্য করতে চেয়েছেন। কিন্তু তার পক্ষে কোন ভুয়া দলীলও উল্লেখ করেননি। প্রশ্ন হড়, তিনি কোন্ দলীলের আলোকে উক্ত পার্থক্য করেছেন?

নারী-পুরুষের ছালাতের পার্থক্যের ব্যাপারে যে সমস্ত বর্ণনা পেশ করা হয় তার কয়েকটি নিম্নে পেশ করা হল-

عَنْ يَزِيْدَ بْنِ أَبِىْ حَبِيْبٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  مَرَّ عَلَى امْرَأَتَيْنِ تُصَلِّيَانِ فَقَالَ إِذَا سَجَدْتُمَا فَضُمَّا بَعْضَ اللَّحْمِ إِلَى الأَرْضِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ لَيْسَتْ فِى ذَلِكَ كَالرَّجُلِ.

ইয়াযীদ ইবনু আবী হাবীব বলেন, দু’জন মহিলা ছালাত রত অবস্থায় রাসূল (ছাঃ) তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, সিজদার সময় তোমরা শরীরের কিছু অংশ মাটির সাথে ঠেকিয়ে দাও। কারণ মহিলাদের সিজদা পুরুষদের মত নয়।[4]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[5] উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে ইমাম বায়হাক্বী নিজেই বলেছেন, ‘এই বিষয়ে দুইটি মারফূ‘ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোনটিই নির্ভরযোগ্য নয়’।[6]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  إِذَا جَلَسَتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى وَإِذَا سَجَدَتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِىْ فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُوْنُ لَهَا وَإِنَّ اللهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُوْلُ يَا مَلاَئِكَتِىْ أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا.

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মহিলা যখন ছালাতে বসবে তখন সে তার এক উরুর সাথে অন্য উরু লাগিয়ে রাখবে এবং যখন সিজদা দিবে তখন তার পেট দুই উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। যেন তা তার জন্য পর্দা স্বরূপ হয়। আর তখন আল্লাহ তা‘আলা  তা লক্ষ্য করেন এবং ফেরেশতাদেরকে ডেকে বলেন, তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।[7]

তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা যঈফ। ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে তিনি নিজেই যঈফ বলেছেন ও প্রত্যাখ্যান করেছেন।[8] কিন্তু মাওলানা আব্দুল মালেক তা গোপন করেছেন। তিনি বায়হাক্বী থেকে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন, কিন্তু বায়হাক্বীর মন্তব্যটা পাঠকদের জানাননি। এটা কেমন ইনছাফ?

عَنْ وَائِلِ بن حُجْرٍ قَالَ جِئْتُ النَّبِيَّ  فَقَالَ هَذَا وَائِلُ بن حُجْرٍ جَاءَكُمْ لَمْ يَجِئْكُمْ رَغْبَةً وَلا رَهْبَةً جَاءَ حُبًّا لِلَّهِ وَلِرَسُولِهِ...فَقَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ  يَا وَائِلُ بن حُجْرٍ إِذَا صَلَّيْتَ فَاجْعَلْ يَدَيْكَ حِذَاءَ أُذُنَيْكَ وَالْمَرْأَةُ تَجْعَلُ يَدَيْهَا حِذَاءَ ثَدْيَيْهَا.

ওয়ায়েল বিন হুজুর (রাঃ) বলেন, আমি একদা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসলাম। তিনি ছাহাবীদেরকে বললেন, এটা হল ওয়ায়েল বিন হুজুর। সে তোমাদের কাছে উৎসাহে বা ভীতির কারণে আসেনি; বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর ভালবাসার কারণে এসেছে।.. ওয়ায়েল (রাঃ) বলেন, তিনি আমাকে বললেন, তুমি যখন ছালাত আদায় করবে তখন তোমার হাত দুই কান বরাবর উঠাবে। আর মহিলা মুছল্লী তার হাত বুক বরাবর উঠাবে।[9]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি নিতান্তই যঈফ। এর সনদে মায়মূনাহ বিনতে হুজর এবং উম্মু ইয়াহইয়া বিনতে আব্দুল জাববার নামে দুইজন অপরিচিত রাবী আছে।[10]

উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে কতিপয় ছাহাবী ও তাবেঈর নামে আরো কিছু বর্ণনা উল্লেখ করা হয়। তবে সবই মুনকার ও ভিত্তিহীন। সেগুলোর দিকে ভ্রুক্ষেপ করার কোন প্রয়োজন নেই।[11]

মূলতঃ ছালাতের ক্ষেত্রে শরী‘আত পুরুষ ও মহিলার মাঝে কোন পার্থক্য করেনি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে ছালাত আদায় করতে দেখছ, সেভাবেই ছালাত আদায় কর’।[12] তিনি নারী ও পুরুষের জন্য দু’বার দু’ভাবে ছালাত আদায় করেননি। বিশিষ্ট তাবেঈ ইবরাহীম নাখঈ (রহঃ) বলেন, ‘পুরুষেরা ছালাতে যা করে নারীরাও তাই করবে’।[13] তবে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। যেমন- (১) মহিলা ইমাম মহিলাদের প্রথম কাতারের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে।[14] (২) ইমাম কোন ভুল করলে মহিলা মুক্তাদীরা হাতে হাত মেরে আওয়ায করবে।[15] (৩) প্রাপ্ত বয়স্কা মহিলারা বড় চাদর দিয়ে পুরা দেহ না ঢাকলে তাদের ছালাত হবে না।[16] পুরুষের জন্য টাখনুর উপরে কাপড় থাকতে হবে।[17] কিন্তু মহিলাগণ টাখনু ঢাকতে পারেন।[18] এগুলো ছালাতের পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নয়।  এ জন্য আলবানী বলেন, وَلاَ أَعْلَمُ حَدِيْثاً صَحِيْحاً فِى التَّفْرِيْقِ بَيْنَ صَلاَةِ الرَّجُلِ وَصَلاَةِ الْمَرْأَةِ وَإِنَّمَا هُوَ الرَّأْىُ وَالْاِجْتِهَادُ  ‘পুরুষ ও মহিলার ছালাতের পার্থক্য সম্পর্কে আমি কোন ছহীহ হাদীছ জানতে পারিনি। এটা ব্যক্তি রায় ও ইজতিহাদ মাত্র।[19]

[1]. তালীমুস-সালাত, পৃঃ ৩১। [2]. নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৬, পরিশিষ্ট-২। [3]. দেখুনঃ ঐ, পৃঃ ৩৭৫-৩৯৭। [4]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩৩২৫। [5]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৬৫২। [6]. وروي ذلك في حديثين موصولين غير قويين বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১০৫০। [7]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩৩২৪; নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৭-৩৭৮। [8]. সুনানুল কুবরা হা/৩৩২৪ - قَالَ أَبُو أَحْمَدَ : أَبُو مُطِيعٍ بَيِّنُ الضَّعْفِ فِى أَحَادِيثِهِ وَعَامَّةُ مَا يَرْوِيهِ لاَ يُتَابَعُ عَلَيْهِ قَالَ الشَّيْخُ رَحِمَهُ اللهُ وَقَدْ ضَعَّفَهُ يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ وَغَيْرُهُ وَكَذَلِكَ عَطَاءُ بْنُ عَجْلاَنَ ضَعِيفٌ.। [9]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/১৭৪৯৭; নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৯। [10]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৫০০। [11]. নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৯-৩৮৮। [12]. বুখারী হা/৬৩১, ১/৮৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬০৩, ২/৫২ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, ‘মুসাফিরদেও জন্য আযান যখন তারা জামা‘আত করবে’-১৮; মিশকাত হা/৬৮৩, পৃঃ ৬৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩২, ২/২০৮ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘সংশ্লিষ্ট আযান’ অনুচ্ছেদ। [13]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ১/৭৫ পৃঃ, সনদ ছহীহ। [14]. বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান হা/১৬২১; সুনানুল কুবরা হা/৫৫৬৩; আওনুল মা‘বূদ ২/২১২ পৃঃ; আবুদাঊদ, দারাকুৎনী, ইরওয়া হা/৪৯৩ - عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّهَا أَمَّتْهُنَّ فَقَامَتْ وَسَطًا। [15]. বুখারী হা/১২০৩, ‘ছালাতের মধ্য অন্যান্য কর্ম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫; মুসলিম হা/৭৮২; মিশকাত হা/৯৮৮, পৃঃ ৯১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯২৪, ৩/১৪ পৃঃ ‘ছালাতের মধ্য যে সমস্ত কর্ম বৈধ নয়’ অনুচ্ছেদ-৫। [16]. আবুদাঊদ হা/৬৪১, ১/৯৪ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩৭৭; মিশকাত হা/৭৬২-৬৩, পৃঃ, ৭৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭০৬, ২/২৪০ পৃঃ, ‘সতর’ অনুচ্ছেদ। [17]. আবুদাঊদ হা/৬৩৭, ১/৯৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৪৩৩১, পৃঃ ৩৭৪, ‘পোশাক’ অধ্যায়। [18]. তিরমিযী হা/১৭৩১; আবুদাঊদ হা/৪১১৭; মিশকাত হা/৪৩৩৪-৩৫, পৃঃ ৩৭৪, ‘পোশাক’ অধ্যায়। [19]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৫০০-এর আলোচনা দ্রঃ।
 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. Peace Way - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger